মোদী-শাসিত ভারতে “ফ্যাসিবাদ কিভাবে কাজ করে” শীর্ষক পুস্তক পড়ে দেখা

আমরা জানি, সর্বগ্রাসী একনায়কতন্ত্র-র (টোটালিটারিয়ান ডিক্টেটরশিপ) সঙ্গে ফ্যাসিবাদের ফারাক এই দিক থেকে যে, ফ্যাসিবাদ হল একটা আন্দোলন যা জনগণের একটা বড় অংশের সমর্থন ও অংশগ্রহণ লাভ করে। অধ্যাপক জেসন স্ট্যানলির ২০১৮ সালে প্রকাশিত বই “ফ্যাসিবাদ কিভাবে কাজ করে : আমাদের আর ওদের রাজনীতি” অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে দশটি পন্থাকে চিহ্নিত করেছে যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদী রাজনীতিবিদরা ঐ ধরনের সমর্থন অর্জন করে থাকে। বইটিতে ইতিহাস এবং সমসাময়িক রাজনীতি থেকে প্রচুর উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে যা আমাদের বর্তমানের বাস্তবতা বিশ্লেষণে সাহায্য করে। এই বইটা পড়ে আমরা সহজেই অনুধাবন করতে পারি মোদী জমানা কিভাবে ফ্যাসিবাদের বরাবরের কসরতগুলোকে অনুকরণ করেছে। এই বইয়ে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির যে দশটি বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে, ‘লিবারেশন’ পত্রিকা সেগুলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরবে, এবং তার সাথে মোদী জমানা এবং আরএসএস ও বিজেপির রাজনীতি কিভাবে ঐ দশটি বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হচ্ছে সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাও রাখবে।

১। পৌরাণিক অতীত

এই অধ্যায়ে স্ট্যানলি পৌরাণিক অতীত নির্মাণের কৌশলকে বিজেপির কাজে লাগানো সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি ১৯২২ সালে নাপলস শহরে অনুষ্ঠিত ফ্যাসিস্ট কংগ্রেসে মুসোলিনির একটি বক্তৃতার অংশ বিশেষকে উদ্ধৃত করেছেন যাতে মুসোলিনি ঘোষণা করেছিলেন :

আমরা আমাদের পুরাণ আখ্যান সৃষ্টি করেছি। এই পুরাণ আখ্যান একটা বিশ্বাস, একটা আবেগ। এটার বাস্তব অস্তিত্ব থাকতে হবে তার কোনো মানে নেই। ... আমাদের পুরাণ আখ্যান হল আমাদের জাতি, আমাদের পুরাণ আখ্যান হল জাতির মাহাত্ম্য! আর আমরা সবকিছুকে এই পুরাণ আখ্যানের, এই মাহাত্ম্যের — যেটাকে আমরা বাস্তবে রূপ দিতে চাই — অধীন করে তুলছি।

স্ট্যানলি বলছেন, “মুসোলিনি এখানে সুস্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, ফ্যাসিবাদী পৌরাণিক অতীত উদ্দেশ্যমূলকভাবেই অতিকথা। ফ্যাসিবাদী রাজনীতিতে পৌরাণিক অতীতের কাজ হল অতীত-আর্তির আবেগকে ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের কেন্দ্রীয় নীতির কাজে লাগিয়ে নেওয়া — যা হল একনায়কতন্ত্র, স্তরবিন্যাস, বিশুদ্ধতা এবং সংগ্ৰাম।” স্ট্যানলি আরো বলছেন, “বর্তমানকে পাল্টানোর সহায়তা করতেই ফ্যাসিবাদী পৌরাণিক অতীত অস্তিত্বশীল হয়।”

ফ্যাসিবাদী পৌরাণিক আখ্যানে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের কেন্দ্রীকতা সম্পর্কে স্ট্যানলির মন্তব্য ভারতে আরএসএস-এর কৌশলের কাছে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। স্ট্যানলি বলছেন, “পিতৃতান্ত্রিক পরিবার হল এমন একটা আদর্শ যা ফ্যাসিবাদী রাজনীতিবিদরা সমাজে সৃষ্টি করতে চায় — অথবা, তারা যেমন দাবি করে থাকে, সেটাতে ফিরে যেতে চায়। পিতৃতান্ত্রিক পরিবারকে সব সময়েই জাতির ঐতিহ্যের এক প্রধান অংশ রূপে তুলে ধরা হয়, এমনকি সাম্প্রতিক সময়েও উদারবাদ এবং বিশ্বজনীনতার আবির্ভাবের ফলে যে ঐতিহ্যের নাকি ক্ষয় ঘটেছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদী রাজনীতির কৌশলের কাছে পিতৃতন্ত্র এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

ফ্যাসিবাদী সমাজে জাতির নেতা প্রথাগত পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের পিতার সমতুল্য রূপে গণ্য হন। নেতা হলেন তাঁর জাতির পিতা, এবং তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা হল বৈধ কর্তৃত্বের উৎস, ঠিক যেমন পিতৃতন্ত্রে পরিবারের পিতার শক্তি ও ক্ষমতাকে তার সন্তান-সন্ততি এবং স্ত্রীর উপর চূড়ান্ত নৈতিক কর্তৃত্বের উৎস হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। নেতা জাতির প্রয়োজন মেটায়, ঠিক যেমন প্রথাগত পরিবারে পিতাই ভরণপোষণের সংস্থান করে থাকেন। ... জাতির অতীতকে পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক কাঠামোর সঙ্গে এক করে তুলে ফ্যাসিবাদী রাজনীতি অতীত-আর্তিকে একটা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক স্তরবিন্যস্ত কর্তৃত্ববাদী কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত করে, যে কাঠামো এই সমস্ত রীতির মধ্যে বিশুদ্ধ প্রতিনিধিত্ব খুঁজে পায়।”

আলফা গুনভেল্ড নিলসেন, কেনেথ বো নিলসেন এবং আনন্দ বৈদ্য সম্পাদিত “ভারতীয় গণতন্ত্রের উদ্ভব, গতিপথ, তর্কবিতর্ক” নামক পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত তাঁর “ভারতের গণতন্ত্র : জাতির মর্মস্থলের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা” শীর্ষক নিবন্ধে ‘লিবারেশন’ পত্রিকার সম্পাদিকা কবিতা কৃষ্ণাণ দেখিয়েছেন আরএসএস কিভাবে ঘর এবং তার সমগোত্রীয় শব্দ পরিবারের উপমাকে কজে লাগায় “পিতৃতান্ত্রিক পরিবার এবং নারীদের পদানত করে রাখাকে সম্মানজনক করে তুলতে —এমনকি দোষী স্ত্রীদের শাস্তি স্বরূপ তাদের পেটানোকে ন্যায্য করে তুলতেও কাজে লাগানো হয়।” তিনি দেখিয়েছেন, “আরএসএস-এর মহিলা শাখা রাষ্ট্র সেবিকা সমিতির নেত্রীবৃন্দ নিজেদের “নারীবাদীর বদলে পরিবারবাদী’’ বলে বর্ণনা করেন এবং নারীদের স্বায়ত্ততার নারীবাদী আত্মঘোষণাকে ভারতীয় ঐক্যবদ্ধ পরিবারের পশ্চিমী ভাবধারা সৃষ্ট বিপর্যয় বলে চিত্রিত করে থাকেন। নারী লোলুপ মুসলিমদের হাত থেকে হিন্দু নারীদের “রক্ষা করার” জন্যই নির্মম সামাজিক প্রথাগুলোর উদ্ভব হওয়ার কথা বলে সেগুলোকে যুক্তিযুক্ত করে তোলা হয়।” এছাড়াও, “হিন্দু ধর্মকে দলিত এবং মুসলিমদের ঘর হিসাবে বর্ণনা করার জন্য, এবং যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের জন্য, ঘরে ফেরার বিধান এবং নির্দেশ দেওয়ার জন্যও ঘর-এর ধারণার অবতারণা করা হয়। “শিল্প পরিবার”-এর ভিতরে শ্রমিক এবং উপরওয়ালাদের মধ্যে সম্পর্ককে সম্প্রীতির সম্পর্ক রূপে নতুন আদল দেওয়ার জন্য পরিবারের ধারণাকে কাজে লাগানো হয়, এবং এইভাবে শ্রম আইনগুলোর ক্ষয় ও লঘুকরণে যৌক্তিকতা প্রদান করা হয়। ... শ্রম আইন এবং ইউনিয়ন কার্যকলাপকে “শিল্প পরিবার”-এর ঐক্যনাশক রূপে চিত্রিত করা হয়। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের খসড়ায় ভারতকে হিন্দুদের বিশ্বায়িত ঘর বলে নতুন রূপ দেওয়ার জন্যও পরিবারের ধারণাকে কাজে লাগানো হয়। ... এটা হল পিছনের দরজা দিয়ে আনা একটা হিন্দু রাষ্ট্র বিল, যার উদ্দেশ্য হল হিন্দুদের এমন ছাঁচে ঢালা যাদের অ-হিন্দুদের চেয়ে নাগরিকত্বের স্বাভাবিক অধিকার বেশি রয়েছে।”

fasi

 

ইউরোপের ফ্যাসিবাদী হিটলার এবং মুসোলিনির কাছে আরএসএস-এর ঋণ সম্পর্কে স্ট্যানলির মন্তব্য হল, “ভারতে হিন্দুত্ব আন্দোলনের অনুগামীদের মতে, হিন্দুরাই ছিল ভারতের দেশীয় জনগণ যারা পিতৃতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুযায়ী এবং গোঁড়া যৌন প্রথা অনুসরণ করে জীবনযাপন করত; এটা তারা করেছিল মুসলিম এবং পরবর্তীতে খ্রিস্টানদের আগমনের সময় পর্যন্ত যারা অবক্ষয়ী পশ্চিমী মূল্যবোধ চালু করে। হিন্দুত্ব আন্দোলন হিন্দুদের বিশুদ্ধ দেশ হিসাবে ভারতের অতীতের এক অতিকথা ভিত্তিক ভাষ্য বানিয়েছে, বিদ্বজ্জনদের ভাষ্য অনুযায়ী যা ভারতের প্রকৃত ইতিহাস এটা অতিরঞ্জিত ভাবে তার অনুপূরক হয়। ভারতের প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী পার্টি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হিন্দুত্বর মতাদর্শকে তার সরকারী নীতি হিসাবে গ্ৰহণ করেছে; তারা আবেগবহুল বাগাড়ম্বরকে কাজে লাগিয়ে এই মনগড়া, পিতৃতান্ত্রিক, কঠোরভাবে রক্ষণশীল, জাতিগত এবং ধর্মীয়ভাবে বিশুদ্ধ অতীতে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশে ক্ষমতা অধিকার করে। বিজেপির উদ্ভব হয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) রাজনৈতিক শাখা থেকে, যে আরএসএস হল এক উগ্ৰবাদী, চরম দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী পার্টি যা অ-হিন্দু সংখ্যালঘুদের দমনের কথা বলে। গান্ধির হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিল আরএসএস-এর সদস্য, যেমন আরএসএস-এর সদস্য হলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আরএসএস স্পষ্টতই ইউরোপের ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, এই সংগঠনের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ ১৯৩০ এবং ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে নিয়মিত ভাবেই হিটলার এবং মুসোলিনির প্রশংসা করতেন।”

কিন্তু ফ্যাসিবাদীরা যদি অতীতকে মহিমান্বিত এবং অতিকথায় মণ্ডিত করে তাহলে তারা ইতিহাসবিদদের এবং ইতিহাস গবেষণাকে এত ধিক্কার জানায় কেন? স্ট্যানলি বিষয়টির গভীরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন :

“ইতিহাসের স্তর ভিত্তিক এই নির্মাণের কৌশলগত লক্ষ্য হল সত্যকে অপসারিত করা, এবং মহিমা মণ্ডিত অতীতের উদ্ভাবনার মধ্যে রয়েছে অস্বস্তিকর বাস্তবতার বিলোপ। ফ্যাসিবাদী রাজনীতি অতীতের উপাসনা করলেও তা কখনই প্রকৃত ইতিহাসের উপাসনা করে না। এই কল্পিত ইতিহাস আবার দেশের অতীতের কলঙ্ককে খাটো করে দেখায় অথবা সম্পূর্ণ রূপে মুছে দেয়। ফ্যাসিস্ট রাজনীতিবিদরা দেশের প্রকৃত ইতিহাসকে চক্রান্তের চশমা দিয়েই দেখতেই অভ্যস্ত, সেই ইতিহাসকে তারা প্রকৃত “জাতির” জনগণের নিগ্ৰহের লক্ষ্যে উদারবাদী অভিজাত বিশ্বনাগরিকদের বানানো আখ্যান বলেই গণ্য করে।”

ভারতের শ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদদের সম্পর্কে এবং ভারতে ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে আরএসএস যা করে থাকে তার সঙ্গে এই অভিমত সম্পূর্ণ রূপেই খাপ খেয়ে যায়।

২। প্রচার

ফ্যাসিস্টদের প্রচারের দরকার হয় কেন? স্ট্যানলি লিখছেন: “একটা বড় গোষ্ঠীর জনগণের সরাসরি ক্ষতি করবে এমন নীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা সহজ নয়। রাজনৈতিক প্রচারের ভূমিকা হল ব্যাপকতর ভিত্তিতে স্বীকৃত আদর্শ দিয়ে রাজনীতিবিদদের অথবা রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোর সুস্পষ্ট সংশয়াত্মক লক্ষ্যগুলোকে গোপন করা।”

ফ্যাসিস্টদের কাছে দুর্নীতি বিরোধিতা আন্দোলনের অত্যন্ত পছন্দের একটা বিষয়। ট্রাম্পের “জলাভূমির জল নিষ্কাশন করার” (অর্থাৎ, দুর্নীতিপরায়ণ কর্পোরেট লবিস্টদের কবল থেকে ওয়াশিংটনকে মুক্ত করা) (মিথ্যা) দাবি সম্পর্কে স্ট্যানলি বলছেন, “ফ্যাসিস্ট আন্দোলনগুলো যুগ-যুগ ধরে “জলাভূমির জল নিষ্কাশন করে আসছে”।”

স্ট্যানলি লিখছেন, “দুর্নীতি-বিরোধী প্রচারাভিযানগুলো প্রায়শই ফ্যাসিবাদী আন্দোলনগুলোর কেন্দ্রে থাকে। ফ্যাসিবাদী রাজনীতিবিদরা যে রাষ্ট্রের দখল নিতে চায় তারা স্বভাবগতভাবেই সেই রাষ্ট্রের দুর্নীতিকে ধিক্কার জানায়, আর এটা উদ্ভট হয়েই দেখা দেয়, কেন না, ফ্যাসিস্ট রাজনীতিবিদরা যে সমস্ত রাজনীতিবিদদের অপসারিত বা পরাস্ত করতে চায়, তারা নিজেরাই অনিবার্যভাবে তাদের চেয়ে অনেক বেশি দুর্নীতিপরায়ণ হয়।” মোদী এবং বিজেপির ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই সত্যি যারা আন্না হাজারের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের পরবর্তীতে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, কিন্তু যে ইউপিএ সরকারকে তারা অপসারিত করে তাদের চেয়ে নিজেদের অনেক বেশি দুর্নীতিপরায়ণ বলে প্রতিপন্ন করেছে।

নাজিদের সম্পর্কে ইতিহাসবিদ রিচার্ড গ্ৰুনবার্গারের “বারো বছরের রাইখ” বইতে উল্লিখিত যে অভিমতকে স্ট্যানলি তাঁর লেখায় উদ্ধৃত করেছেন তা আজকের ভারতবর্ষে আমাদের কাছে কি ভয়ঙ্কর রকমের চেনা হয়েই না দেখা দেয় :

“বারবার বলে গণতন্ত্র ও দুর্নীতির সমার্থক হওয়ার কথা সমষ্টির চেতনায় ঢুকিয়ে দেওয়ার পর নাজিরা এমন একটা সরকারী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শুরু করল যার পাশে উইমার প্রজাতন্ত্রের কেলেঙ্কারিগুলো রাষ্ট্রের নেহাতই ছোটখাটো বিচ্যুতি বলে পরিগণিত হয়। বস্তুত, দুর্নীতিই ছিল সংগঠিত করার তৃতীয় রাইখের কেন্দ্রীয় নীতি — এ সত্ত্বেও ভালো সংখ্যক নাগরিক এই ব্যাপারটাকে শুধু উপেক্ষাই করেনি, নতুন জমানার লোকজনদের কার্যত নৈতিক সততার প্রতি নিবেদিত প্রাণ বলে গণ্য করত।”

মোদী সরকার যে সংবাদপত্র, বিচারবিভাগ, নির্বাচন কমিশন এবং বিভিন্ন তদন্তকারী ও নজরদারি সংস্থার স্বাধীনতার ক্ষয় ঘটিয়েছে সেটাও ফ্যাসিবাদীদের একটা পছন্দের কৌশল। স্ট্যানলি লিখছেন, “দুর্নীতি এবং পক্ষপাতিত্বর ধরে নেওয়া অস্তিত্বকে নির্মূল করার নামে ফ্যাসিস্ট রাজনীতিবিদরা সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকেই আক্রমণ করে এবং সেগুলোর ক্ষয় ঘটায় যেগুলো অন্যথায় তাদের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।’’

ট্রাম্প, মোদী ও বোলসোনারো যে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, সেই ঘটনাটা কিন্তু তাদের কোনো অংশে কম ফ্যাসিবাদী করে না। স্ট্যানলির মতে, “ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে, ফ্যাসিবাদী নেতারা মাঝেমাঝেই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকার, যথা ভোটাধিকারের মধ্যে নিহিত স্বাধীনতা, ঐ বিজয়ের সঙ্গেই শেষ হওয়ার দিকে চালিত হয়।”

নাজি প্রচারমন্ত্রী যোশেফ গোয়েবলসের একটি যে কথাকে স্ট্যানলি উদ্ধৃত করেছেন তা অত্যন্ত লক্ষণীয় : “এটা চিরদিনই গণতন্ত্রের একটা তামাসা হয়ে থাকবে যে, গণতন্ত্র তার নির্মম শত্রুদের সেই পন্থাগুলোই দেয় যা দিয়ে তাকে ধ্বংস করা হয়।”

দ্বিতীয় কিস্তি - লিংক

তৃতীয় কিস্তি - লিংক

(লিবারেশন পত্রিকার ফেব্রুয়ারী ২০২০ সংখ্যা থেকে)

 

হায়ার এডুকেশন ফ্রি হলে দেশ চলবে কি করে?

উত্তরঃ ১। জার্মানি, ২। নরওয়ে, ৩। সুইডেন, ৪। অস্ট্রিয়া, ৫। ফিনল্যান্ড, ৬। চেক রিপাবলিক, ৭। ফ্রান্স, ৮। বেলজিয়াম, ৯। গ্রিস, ১০। স্পেন।

 

এই দেশগুলিতে উচ্চশিক্ষা ফ্রি দেশের নাগরিকদের জন্য। ওরা ট্যাক্সের টাকায় মন্দির বানায়না। কাটমানি খেয়ে বাড়ি গাড়ি করে না। তাই ওদের দেশে দিব্য চলছে ফ্রিতে হায়ার এডুকেশন

ফ্রি চিকিৎসা বলে কিছু হয় নাকি! দেশ চলবে কি করে?

উত্তরঃ ১। অস্ট্রেলিয়া, ২। অস্ট্রিয়া, ৩। বাহরাইন, ৪। বেলজিয়াম, ৫। ব্রুনেই, ৬। কানাডা, ৭। সাইপ্রাস, ৮। ডেনমার্ক, ৯। ফিনল্যান্ড, ১০। ফ্রান্স, ১১। জার্মানি, ১২। গ্রিস, ১৩। হংকং, ১৪। আইসল্যান্ড, ১৫। আয়ার্ল্যান্ড, ১৬। ইসরায়েল, ১৭। ইতালি, ১৮। জাপান, ১৯। কুয়েত, ২০। নেদারল্যান্ড, ২১। নিউজিল্যান্ড, ২২। নরওয়ে, ২৩। পর্তুগাল, ২৪। স্লভানিয়া, ২৫। সাউথ কোরিয়া, ২৬। স্পেন, ২৭। সুইডেন, ২৮। সুইজারল্যান্ড, ২৯। ইউকে, ৩০। ইউএই।

অর্থাৎ এই প্রত্যেকটি দেশ ফ্রি স্বাস্থ্য কল্যাণ দেয় দেশবাসীকে। আপনার সরকার যদি না দেয়, প্রশ্ন করুন। কারণ এটা পাওয়া আপনার মানবাধিকার।

খণ্ড-27
সংখ্যা-4