খবরা-খবর
৬ ডিসেম্বর কলকাতায় বাম ও গণতান্ত্রিক দলগুলোর মিছিল ও সভা

সিপিআই, সিপিআই(এম), সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, এসইউসিআই(কমিউনিস্ট), আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক সহ সতেরোটি বাম ও গণতান্ত্রিক দলের যুক্ত মিছিল এ বছরের ৬ ডিসেম্বর বাবরি ভাঙার কালো দিনে তার যাত্রা শুরু করে ধর্মতলার লেনিন মূর্তির পাদদেশ থেকে। প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষের উদ্দীপ্ত মিছিল রাজাবাজারে এসে পৌঁছানোর পর সেখানে একটি জনসভাও অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কালো দিনটিকে ধীক্কার জানিয়ে প্রতি বছরেই বিভিন্ন বাম সংগঠন রাজপথে নামেন। এই বছরের মিছিলের বিশেষ তাৎপর্য ছিল অযোধ্যা মামলার বিষ্ময়কর রায়, যেখানে বিশ্বাসকে মর্যাদা দিয়ে বিতর্কিত জমিটি পুরোটাই রামমন্দির গড়ার জন্য দিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়কে বামপন্থীরা সদর্থক বলে মনে করেননি এবং আইন বিশেষজ্ঞ থেকে ইতিহাসবিদ ও পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞের বড় অংশও এই রায়কে নানাবিধ প্রেক্ষিত থেকে যুক্তিসঙ্গত বলে মেনে নিতে প্রস্তুত নন। পাশাপাশি এই রায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকে অপরাধমূলক মনে করেছে, অথচ অপরাধীদের শাস্তি কেন হচ্ছে না সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রশ্নটিকেই রাজাবাজারে আয়োজিত জনসভার বক্তব্যে সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ। ১৯৯২ সালে লালকৃষ্ণ আদবাণী, উমা ভারতী থেকে শুরু করে বিজেপি আরএসএস-এর তাবড় তাবড় নেতাদের অনেকেই ছিলেন বাবরি মসজিদ ভাঙার নিন্দনীয় ঘটনার ক্রীড়নক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন পার্থ ঘোষ।

partha

 

এইবারের মিছিল ও ধিক্কার সভায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও এসে হাজির হয়েছিল। সেটি হল এনআরসি, এনপিআর এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে বাতিল করার প্রসঙ্গ। কেন্দ্রীয় সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার জানিয়েছেন যে গোটা দেশজুড়েই তারা এনআরসি করবেন, যারা কাগজপত্র দাখিল করতে পারবেন না তাদের অনুপ্রবেশকারী ঘোষণা করে দেশ থেকে বের করে দেবেন। এই এনআরসি-কে ধর্মীয় বিভাজনের অভিমুখ দিয়ে তারা এর সঙ্গে নাগরিকত্ব আইনকে সংশোধন করে জুড়ে দিতে চান। যে সংশোধনের প্রস্তাবে কেবল বেছে বেছে মুসলিমদের সাথে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস যেমন ভারতের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের ওপর একটা প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছিল, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল তাকেই আরো অনেকদূর প্রসারিত করে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চায়। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এই প্রসঙ্গে বলেন, “ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব সরাসরি আমাদের সংবিধানের উপরে আঘাত। অমিত শাহেরা চাইছেন আমাদের ভয় দেখাতে। কিন্তু ভয় পেলে আর প্রতিবাদ হবে না। একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে বলতে হবে, কত ক্ষমতা আছে দেশের মানুষকে বার করে দিয়ে দেখান!”

raja

 

এনআরসি-র পাশাপাশি এনপিআর-কেও বাতিল করা প্রয়োজন, এই কথা নানাভাবে উঠে আসে এই সভা থেকে। কিন্তু এনপিআর-এ সহায়তা করতে মানুষের কাছে সরকারী বিজ্ঞাপনে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জে (ভিক্টর) এই প্রসঙ্গে বলেন, “বিজ্ঞপ্তি দেখলেই বোঝা যাবে, এনপিআর আসলে এনআরসি-র প্রথম ধাপ। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন এনআরসি হতে দেব না কিন্তু এনপিআর-এ সহযোগিতা করতে বলছেন!” এই প্রসঙ্গে যথেষ্ট সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনিয়তার কথা তোলেন তিনি। সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দেশের আর্থিক সঙ্কট থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য শাসক বিজেপির তরফ থেকে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনার জিগির তোলার সচেতন অভিসন্ধিটি ব্যাখ্যা করে একে প্রত্যাখ্যান করার কথা বলেন।

rajabazar

 

এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, ভারতের সাম্যবাদী দলের বর্ণালী মুখার্জী, পিডিএস-এর টিপু সুলতান আলি, আরএসপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই-এর প্রবীর দেব প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন। সভার সঞ্চালক ছিলেন বর্ষীয়ান বাম নেতা বিমান বসু। শিলিগুড়িতে বাবরি ধ্বংসের অপরাধীদের শাস্তি চাই। এনআরসি, এনপিআর, ক্যাব বাতিল করো। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী বিজেপি আরএসএস দুর হটো। বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ করো এই দাবিতে রাজ্যের অন্যান্য জায়গার সাথে বামপন্থী দলগুলির আহ্বানে পথ হাঁটলো শিলিগুড়ি শহরের বাম নেতা কর্মীরা। মিছিলটি শহরের বাঘাযতীন পার্ক থেকে শুরু হয়ে। শেষ হয় এয়ারভিউ মোড়ে। পার্টির জেলা সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অভিজিৎ মজুমদার, রাজ্য কমিটির সদস্য বাসুদেব বোস ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার, ফরোয়ার্ড ব্লকের অনিরুদ্ধ বোস, সিপিআই-এর লক্ষ্মী মাহাতো প্রমুখ।

খণ্ড-26
সংখ্যা-40