খবরা-খবর
মেটিয়াবুরুজে এনআরসি-সিএএ বিরোধী সভা

২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মেটিয়াব্রুজ কিলখানা মোড়ে মেটিয়াব্রুজ আইসা ইউনিট ও এআইপিএফ-এর যৌথ উদ্যোগে একটি প্রচারসভা ও শেষে একটি মিছিল সংগঠিত হয়। এনআরসি বিপর্যয় ও সিএএ বিভাজন তথা তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিষয় তুলে ধরেন বিভিন্ন বক্তাগণ।

কিলখানা মোড় থেকে খানিকটা এগোলেই সুরিনাম ঘাট। এই ঘাট থেকে ১৮৭৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী লাল্লারুখ নামে একটি জাহাজে বাংলা বিহার ও উত্তরপ্রদেশের পাঁচশ শ্রমিককে দাস হিসেবে তুলে তৎকালীন ডাচ কলোনি সুরিনামে চালান করেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেই থেকে গঙ্গার এই ঘাটের নাম সুরিনাম ঘাট। এই তথ্যগুলি তুলে ধরে সাহিত্যিক শামিম আহমেদ বলেন যে আজ এনআরসির মাধ্যমে আসলে নতুনরূপে সেই দাসশ্রম ব্যবসা ফিরিয়ে আনতে চলেছে কেন্দ্র সরকার, ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই। এনপিআর বয়কট করাই যে এনআরসি-কে আটকানোর লক্ষ্যে সবচেয়ে জরুরি ও অপরিহার্য পদক্ষেপ তা ব্যাখ্যা করেন এপিডিআর কর্মী আলতাফ আহমেদ। দেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এনআরসি কী ভয়ঙ্কর বিপর্যয় আনতে চলেছে তা তুলে ধরেন সুমিত চৌধুরি। প্রগতিশীল মহিলা সমিতির মিতালি বিশ্বাস আসামের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বুঝিয়ে বলেন মহিলারা কী দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে পড়তে চলেছে। মেয়েদের তো “ঘর” নাই, বাপের ঘর আর শ্বশুর ঘর; সম্পত্তি নাই, কাগজ নাই, নামেরই ঠিকঠিকানা নাই। তাঁরা কী করবেন? এই প্রশ্ন তোলেন মিতালি। পিইউসিএলের পক্ষ থেকে অম্লান ভট্টাচার্য যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক চিন্তায় মানবিকতার দিক তুলে ধরেন এবং পিইউসিএলের প্রয়াত সভাপতি রাজিন্দর সাচারের প্রখ্যাত রিপোর্টের কথা তুলে সংখ্যালঘুদের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বঞ্চনার দিকটি স্মরণ করিয়ে দেন। আইসা নেত্রী আফশাঁ জারীন বলেন যে দেশজুড়ে ছাত্রীছাত্রদের রুখে দাঁড়ানো দেখে ভয় পেয়েছে মোদি সরকার। আফশাঁ সকলকে, বিশেষত লড়ায়ে এগিয়ে আসা স্থানীয় ছাত্রী ও ছাত্রদের, অভিনন্দন জানিয়ে মেটিয়াব্রুজের সমস্ত চিন্তাশীল মানুষকে প্রতিবাদে প্রতিরোধে সামিল হয়ে এই লড়াইকে নির্ধারক বিজয় পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দীপ্ত আহ্বান জানান।

এআইপিএফের পক্ষ থেকে সভা পরিচালনার ধাপে ধাপে এনআরসি এনপিআর ও সিএএ-র বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেন মলয় তেওয়ারি। সভা ছিল ভিড়ে ঠাসা। সভা শেষে অনেকেই এসে বক্তাদের সাথে কথা বলেন এবং আরও বড়ো আকারে এরকম কর্মসূচী নেওয়ার আবেদন জানান। সভায় উপস্থিত ছিলেন আইসা রাজ্য সম্পাদক স্বর্ণেন্দু মিত্র সহ কলকাতা জেলার অন্যান্য নেতৃত্ব এবং ভারপ্রাপ্ত পার্টি নেতা সৈকত ভট্টাচার্য। মেটিয়াব্রুজের বরিষ্ঠ সংগঠক শাহজাদা সুলতান ও আইসা নেতা ঐশিক ছিলেন অন্যতম দুজন উদ্যোক্তা। এলাকায় দুদিন অটো-মাইক প্রচার চলে। বাংলা ও উর্দু প্রচারপত্র বিলি হয়। সভায় ছাত্রীদের একটি দল “নফস নফস কদম কদম, এক ফিকর্ দম-ব-দম, ঘিরে হ্যায় হম সাওয়াল সে হমে জবাব চাহিয়ে; জবাব-দর-সওয়াল হ্যায় কি, ইনকিলাব চাহিয়ে” সঙ্গীতটি পরিবেশন করেন। সভাশেষে অন্বেষা ও আফশাঁর নেতৃত্বে আজাদির শ্লোগানমুখর মিছিল কিলখানা মোড় থেকে বিচালি ঘাট পেরিয়ে সুরিনাম ঘাটের রাস্তায় এসে শেষ হয়।

খণ্ড-26
সংখ্যা-42