মিজোরামের জনজাতির লোকেরা উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে ত্রিপুরায়
mizoram tribesmen

উত্তর ত্রিপুরার দামছড়ায় ব্রু (রিয়াং) শরণার্থীদের পুনর্বাসন প্রকল্পে পরিকল্পনাবিহীন ও অবাস্তবোচিতভাবে জমি বন্টন নিয়ে বিরোধের ফলে রাজ্যের জনজাতি ভূমিপুত্ররা আজ উদ্বাস্তু হয়ে আসামে আশ্রয় নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এরজন্য দায়বদ্ধ এবং ডাবল ইঞ্জিন সরকারকে এরজন্য জবাব দিতে হবে।

গত ২৬ জুলাই উত্তর ত্রিপুরা জেলার পানিসাগর মহকুমার দামছড়ায় ফাইকো (হালাম) পাড়াতে ব্রু শরণার্থীদের একটি অংশ এবং স্থানীয় হালাম ও চরাইদের মধ্যে জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয়। বাড়ি ঘরে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করা ও অস্ত্র হাতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের সতেরো-আঠারো জন আহত হয়। প্রাণভয়ে কয়েকশো পরিবার সীমান্তবর্তী আসামে পালিয়ে গিয়ে জীবন রক্ষা করেছে। পাথারকান্দির মানিকবন্দে ৪৪৩নং সার্কেলে ঙিরনেইসিয়েক এলপি স্কুলে ১৬০টি পরিবারের ৭৫০ জন শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। আরও কিছু পরিবার মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে। সরকার তাদের কোনও সহায়তা করেনি। স্থানীয় কিছু সংগঠন তাদের সহায়তা করছেন। এলাকায় শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য কোনও উদ্যোগ নেই। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কোনও উদ্যোগ নেই।

এই পরিস্থিতিতে সিপিআই(এমএল) রাজ্য কমিটি দাবি করছে যে, রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে আসামের পাথারকান্দিতে আশ্রিত উদ্বাস্তু পরিবারগুলির জন্য উপযুক্ত ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দামছড়া এলাকায় শান্তি ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী গণউদ্যোগ ও প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উদ্বাস্তু হালাম ও চরাইদের নিজভূমিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি তৈরি করে দিতে হবে। সব সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।

কিন্তু দীর্ঘদিনের ব্রু শরণার্থী সমস্যার সমাধানে মিজোরামের বিধানসভা নির্বাচন ও ত্রিপুরায় টিটিএডিসি ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রদপ্তর ও রাজ্য সরকার কর্তৃক তড়িঘড়ি করে গৃহীত অবাস্তবোচিত সিদ্ধান্ত আজ এই বিরোধের জন্য দায়ি। ১৯৯৭ সালে মিজোরামে এথেনিক (জাতি) সংঘর্ষের ফলে প্রায় ৩৮ হাজার রিয়াং (ব্রু) জনজাতি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে রাজ্যে এসে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। পরে ছয় হাজার মানুষ ফিরে যায়। গত ২৩ বছর ধরে ৩২ হাজার ব্রু শরণার্থীরা ত্রিপুরাতেই আছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও মিজোরাম সরকার তাদের নিজভূমিতে ফিরিয়ে নিতে পারেনি। মিজোরাম, ত্রিপুরা ও আসামে রিয়াং জনজাতি গোষ্ঠী ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করে আসছে। ১৯২০ সালের জানুয়ারী মাসে তড়িঘড়ি ব্রু শরণার্থী সমস্যার সমাধানে চারপক্ষীয় অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার, মিজোরাম ও ত্রিপুরা সরকার ও শরণার্থী ব্রু নেতাদের মধ্যে এক চুক্তি হয়। তাতে ত্রিপুরার ভূমিতে ঐ ৩২ হাজার ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তাদের পুনর্বাসন দেওয়ার মত এত বিশাল পরিমাণ ভূমি কোথায়। বনভূমি ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু ত্রিপুরায় ১,২৯,০০০ জনজাতি পরিবারকে বনভূমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। এক বিরাট পরিমাণ জনসংখ্যা বনভূমিতে বসবাস করে। এমতাবস্থায় ব্রু’দের সাথে স্থানীয় ভূমিপুত্রদের এই ধরণের সংঘর্ষ অনিবার্য। এই অবাস্তবোচিত ও পরিকল্পনাবিহীন সিদ্ধান্তের জন্য উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপি’র ভুল নীতি দায়ী। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার দায়বদ্ধ। তাদের জবাব দিতে হবে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-29