গত ৭ আগস্ট সাতটি নারীবাদী ও মহিলা অধিকার রক্ষার সংগঠন রাজ্যের সংশোধনাগার বিভাগের এডিজি ও আইজি’র উদ্দেশ্যে যৌথভাবে ডেপুটেশন দিতে যায়। প্রসঙ্গত প্রেক্ষাপট হিসাবে উল্লেখ করা হয়, ফাদার স্ট্যান স্বামীর হেফাজতে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে ধিক্কার ওঠার সাথে সাথে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে তোলপার হচ্ছে। সংগঠনগুলির আরও বক্তব্য হল, এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ ১০ জন বিরোধী দলনেতা রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লিখে স্ট্যান স্বামী হত্যার ঘটনা এক ক্ষমাহীন অপরাধ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা সঠিকভাবেই ইউএপিএ’কে ‘দমন আইন’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এই স্পিরিট লক্ষ্য করে নারীবাদী ও মানবাধিকার রক্ষার সংগঠনগুলি পশ্চিমবাংলার সংশোধনাগারগুলিতে বহুবছর যাবত থাকা নারী রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তির বিষয় খতিয়ে দেখতে তৎপর হয়েছে। তারা প্রাথমিক খোঁজ করে জেনেছেন, অন্তত এরকম ৬ জন মহিলা রাজনৈতিক কর্মী গত ১০-১২ বছর যাবত আলিপুর, বহরমপুর ও দমদম সংশোধনাগারে বন্দী হয়ে রয়েছেন। এঁদের যা বন্দীদশার মেয়াদ, তাতে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট শাস্তি ভোগ করা হয়েছে। এঁদের স্বাস্থ্য রক্ষা, শিক্ষা পাওয়া, পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ইত্যাদি মৌলিক অধিকার সহ আরও অন্যান্য অধিকারগুলি থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়। রাজনৈতিক বন্দী হিসাবে স্বীকার করা উচিত, কিন্তু সেটা করা হয়না, সেইমতো মর্যাদা দেওয়া হয় না।
নারীবাদী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলি কারা-সম্পর্কিত এডিজির কাছেই দাবিগুচ্ছের স্মারকলিপি দিতে চেয়েছিল। তিনি না থাকায় এক স্পেশ্যাল আইজি ইমরাম ওয়াহাবের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর কাছে দাবি জানানো হয় বন্দী রাজনৈতিক মহিলাদের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে। না দিলে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন গণ্য হয়। স্পেশ্যাল আইজি বলেন, বন্দীদের পরিবার পরিজন ও বন্ধুরা যাতে ব্যক্তিগতভাবে দেখাসাক্ষাৎ করতে পারেন সেটা তিনি দেখবেন। ডেপুটেশন প্রতিনিধিদল বলে আসে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা দাবিগুচ্ছ বিবেচনা হওয়ার বিষয়টা তাদের দ্রুত জানাতে হবে। রাজনৈতিক বন্দী মহিলারা বছরের পর বছর দীর্ঘকাল কারান্তরালে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ এখনও প্রমাণ করে উঠতে পারছে না, এটা আমাদের ‘গণতন্ত্রে’র কলঙ্ক। ওই বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি চাই, সেটা যতদিন না হচ্ছে ততদিন তারা যাতে মৌলিক মানবাধিকারের সুযোগ-সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই উদ্যোগে একজোট হয়েছে এআইপিডব্লিউএ, ফেমিনিস্ট ইন রেজিস্ট্যান্স, কমিটি ফর দি রিলিজ অফ পলিটিক্যাল প্রিজনার্স, ফেমিনিস্ট ডট কম, দশ থেকে দশ হাজার, শ্রমজীবী মহিলা সমিতি, উওমেন এগেইনস্ট সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স এ্যান্ড স্টেট রিপ্রেশন।