মহিলা কনস্টেবলের মৃত্যুর ন্যায়বিচারের দাবিতে বিহার উত্তাল

বিহারের বহু জেলা সম্প্রতি এক মহিলা কনস্টেবলের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদে ও ন্যায়বিচারের দাবিতে হয়ে ওঠে উত্তাল। কনস্টেবলের নাম স্নেহা এবং তিনি সিওয়ান জেলার। সন্দেহ করা হচ্ছে তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটি ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা। তাঁর বাবা-মা জানিয়েছেন কেসটা নথিবদ্ধ হয়েছে আত্মহত্যা বলে, কিন্তু ঘটনার ঘনঘটা অন্য দিকনির্দেশ করে। স্নেহার দেহ তাঁর সরকারি আবাসের ঘর থেকে উদ্ধার হয় ১ জুন, সিওয়ানের পুলিশ তড়িঘড়ি বিষয়টি চাপা দেয়।

team

 

সিপিআই(এমএল)-এর এক অনুসন্ধানকারী দল ৩০ জুন মুঙ্গের জেলায় স্নেহার দেশের বাড়িতে যায় সেখানকার ক্ষুব্ধ মানুষদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য। ঐ দলে ছিলেন সিপিআই(এমএল) বিধায়ক সত্যদেও রাম, উমেশ সিং ও সঙ্গীতা সিং। ঘটনাটি বর্তমানে সিআইডি-র তদন্তাধীন, কিন্তু স্থানীয় মানুষজন দাবি করছেন সিবিআই তদন্তের। মৃতা কনস্টেবলের বাবা বিবেকানন্দ মন্ডল অনুসন্ধানকারী দলকে বলেন, সন্দেহ হচ্ছে তাঁর মেয়ের ওপর কিছু একটা ঘটেছে, সিওয়ানের পুলিশকে তিনি অভিযুক্ত করছেন এই কারণে যে তারা তদন্তের আগেই এই ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের ওপর মহলে ক্লীন চিট দিয়ে দেন। স্থানীয় এক চৌকিদার তাঁকে খবর দেন তাঁর মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি, অবস্থা ভালো নয়। খবর পেয়ে তখনই তিনি সিওয়ানে হাসপাতলে ছুটে যান, কিন্তু তাঁকে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পরে তাঁকে মেয়ে মারা যাওয়ার খবর দেওয়া হয়, তবে মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হল মৃতদেহের পোস্ট মর্টেম করতে পাঠানো হয় সিওয়ানের বদলে পাটনায়, কারণ তিনি জেনেছেন সিওয়ানের ডাক্তার ভূয়ো পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট লিখতে রাজি হননি। বেঁকে বসার প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও সিওয়ান হাসপাতলের ডাক্তারদের মারধর করে, তার প্রতিবাদে ডাক্তাররা ধর্মঘট পর্যন্ত করেন।

snehaপুলিশ স্নেহার বাবাকে মৃতদেহ সনাক্ত করতে দেয়নি, বরং বাধ্য করেছে দেহ নিয়ে চলে যেতে। তাঁর দাবি, যে মৃতদেহ তাঁকে দেওয়া হয়েছে সেটা তাঁর মেয়ের নয়, দেহটি একজন বয়স্কা মহিলার এবং দেহে পচন ধরে গিয়েছিল, অন্তত দুদিন আগের মৃতদেহ। তাঁরা পরিবারের লোকজন ঐ মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করলে মুঙ্গেরের পুলিশ সুপার গৌরব মঙ্গলা ও এসডিও খগেশচাঁদ ঝা তাদেরকে হুমকি দেন গ্রেপ্তার করবেন। পরে পুলিশে-প্রশাসনের খবরদারিতে দেহ দাহ করা হয়। এর প্রতিবাদে ফেটে পড়েন বিক্ষুব্ধ মানুষেরা, তারা মুঙ্গেরে সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কেস দেয়। পরে জনতা ২৪ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ধর্ণায় বসে, তারপর পুলিশ এসে জোর করে তুলে দেয়।

মেয়ের বাবা এই আঘাত সহ্য করতে পারেননি, তাঁকে হাসপাতালে আইসিইউ-তে ভর্তি করতে হয়। সিপিআই(এমএল) বিধায়করা এই পুলিশী অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিধানসভায় সোচ্চার হন, ঘটনার সিবিআই তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার দাবি করেন। বিহারে এমন বহু ঘটনার প্রমাণ রয়েছে যেখানে মহিলা কনস্টেবলদের যৌন হেনস্থা ও শোষণ করা হয়। সত্যদেও রাম বলেন, এই ঘটনা আবার বিজেপি-জেডিইউ সরকারের মহিলাদের ক্ষমতায়নের গালভরা প্রচারের পিছনে নারী- বিরোধী আসল চেহারাটা উন্মোচিত করে দিল। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বিহার জুড়ে ৬ জুলাই প্রতিবাদ সংগঠিত করে এবং সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। পার্টি দাবি করেছে এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট গোলমেলে থাকা সত্বেও প্রশাসন তথ্য গোপন করছে, এমনকি পুলিশ দপ্তরের ভেতরেও মহিলারা নিরাপদ থাকবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। কিছুদিন আগে পাটনা পুলিশ লাইনে মহিলা কনস্টেবলরা পুরুষ পুলিশ কর্তাদের দ্বারা যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তবু পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ মহিলাদের পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিচার-বিবেচনার কোনো গুরুত্বই দেননি, উল্টে প্রতিবাদরত কনস্টেবলদের গণ আকারে বরখাস্ত করেন। এবারের ঘটনাটাও দীর্ঘদিন যাবত চলে আসা যৌন হয়রানি ও হত্যার এবং তাতে সিওয়ানের পুলিশ সুপারের জড়িত হয়ে যাওয়ার তথ্যকে প্রকাশ আবার উন্মোচিত করে দিল।

apwa

 

ঘটনা ও প্রবণতার গুরুত্ব বিবেচনা করে ৬ জুলাই বিহারের ভোজপুর, বৈশালী, সুপৌল, সারন ইত্যাদি বহু জেলায় প্রতিবাদ সংগঠিত করা হয়। সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশান একসাথে প্রতিবাদী কর্মসূচী নেয়। মুঙ্গেরে নেওয়া কর্মসূচীতে অন্য সংগঠনসমূহের মধ্যে ছিল সিপিআই, সমাজবাদী পার্টি, আপ, এসইউসিআই। নীতীশ সরকার প্রতিহিংসাবশত প্রতিবাদী মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে গ্রেপ্তার করে। এই পুলিশী আচরণকে সিপিআই(এমএল) বিহার রাজ্য সম্পাদক গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ বলে চিহ্নিত করেন। প্রতিবাদী কর্মসূচী সংগঠিত হয় পাটনা দারভাঙ্গা, সিওয়ান, আরা, গোপালগঞ্জ, মুজফ্ফরপুর, বেতিয়া, গয়া, নওয়াদা ও অন্যান্য জায়গায়।

খণ্ড-26
সংখ্যা-21