দলিত পরিবারগুলি জমি দখল করল ভোজপুরে

ভোজপুরের পিরো ব্লকের আংঙ্গারা গ্রামে বহু দলিত পরিবার তাদের জমির দাবিতে আত্মঘোষণা করে আসছে। এভাবে তারা গত ১০ জুলাই একখন্ড জমি দখল করে। যে জমি ঐ দলিত পরিবারগুলির মধ্যে বিলিবণ্টন করে দেওয়ার জন্য পাটনা হাইকোর্ট ২০০৮-০৯ সাল নাগাদ রায় দিয়েছিল। হাইকোর্টের রায়ে নির্দেশ ছিল চার মাসের মধ্যে উপরোক্ত ৪ একর ৫৩ ডেসিমেল জমি বন্টন করতে হবে। কিন্তু জেলা প্রশাসন আদালতের আদেশ লাগাতার উপেক্ষা করতে থাকে। তার ফলে উদ্বিগ্ন পরিবারগুলি গত দশ বছর যাবত প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেছে।

প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অপকৌশল নিয়ে দেরী করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ন্যায়বিচারের দাবিকে প্রহসনে পরিণত করেছে। কারণ, আইনগত সমস্ত দিক থেকে ঐ জমি দলিত পরিবারগুলির প্রাপ্য হলেও গ্রামের প্রতিপত্তিশালী উচ্চবর্ণের ও সামন্তী শক্তিগুলি তা দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ৯৮ টি দলিত পরিবারকে জমির পাট্টা দেয়নি, জমির বর্গও পাল্টে ফেলে সাধারণ বর্গের করে দেয়। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং এই দলিল বেআইনি প্রমাণ করতে দলিত পরিবারগুলিকে বহু বছর ধরে লড়ে আসতে হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারি আরও অনেক প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে দলিত পরিবারগুলিকে বাস্তুজমি দেওয়ার জন্য। ব্লক অাধিকারিকদের সেই খাতে জমি বণ্টন করার কথা, কিন্তু সেই জমিও উপরোক্ত পরিবারগুলি পায়নি। এভাবে আঙ্গারার দলিতরা বাস্তুজমি না পেয়ে ভূমিহীনই থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

এই অবস্থায় সিপিআই(এমএল) সামনে এগিয়ে আসে এবং ঘোষণা করে জমি যাদের পাওয়ার কথা তারাই পাবে এবং তার জন্য একটা দিন স্থির করা হয় ১০ জুলাই। প্রশাসন পার্টির অঙ্গীকারের মেজাজ বুঝতে পারে এবং পার্টি নেতাদের বৈঠকে ডেকে পাঠায়। অন্যদিকে গ্রামের সামন্ত শক্তিগুলি খোলাখুলি হুমকি দিচ্ছে প্রস্তুত হচ্ছে, দলিতরা যদি জমির দাবি করে তাহলে সংঘর্ষ হবেই। প্রশাসনের ডাকা বৈঠকে পার্টি নেতারা যান, বৈঠকে ব্লক আধিকারিক, পুলিশের ডেপুটি সুপার, থানা ইনচার্জ ছিলেন। কিন্তু আলোচনায় বসে বোঝা যায় বৈঠকের উদ্দেশ্য হল বিষয়টিকে দেরী করিয়ে দেওয়া। আদালতের আদেশ কার্যকরি করার ব্যাপারে কোনো ইচ্ছাই নেই।

১০ জুলাই দলিত পরিবারভুক্ত লোকজন সব জমির দখল নিতে একজোট হয়। সিপিআই(এমএল)-এর পতাকা নিয়ে তারা সাহসের সাথে সামন্ত শক্তিদের জমি বেদখল করার চেষ্টাকে রুখে দেয়। জনগণের প্রতিরোধে সামন্তদের পোষা গুন্ডারা পালায়, ৯৮টি পরিবার জমিতে তাদের হকের নিশান পুঁতে দেয়।

এই ঘটনায় একদিকে গ্রামে জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস প্রচন্ড বেড়ে যায়, অন্যদিকে বিহারের বিজেপি-জেডিইউ সরকারের দলিত-বিরোধী, গরিব-বিরোধী চেহারা উন্মোচিত হয়ে যায়। ঘটনা হল, বিহারে এরকম বহু সরকারি জমি, পুকুর ইত্যাদি রয়েছে যেগুলো উচ্চবর্ণের সামন্ত শক্তিগুলো বেআইনিভাবে ভোগদখল করে তাদের রাজনৈতিক মদতদাতাদের জোরে। সিপিআই(এমএল) তাই জোরের সাথে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে এই ধরনের সব আর দেরী না করে দ্রুত জমি গরিব ও দলিতদের মধ্যে বিলি করে দিতে হবে। না হলে জনতা এবং সিপিআই(এমএল) হ্যায় তৈয়ার।

খণ্ড-26
সংখ্যা-22