গয়ার মানপুরে অঞ্জনা হত্যায় তথ্য অনুসন্ধানে সি পি আই (এম এল) এবং এ আই পি ডব্লিউ এ-র এক তদন্তকারী দল গত ১০ জানুয়ারি মানপুরের পাটোয়া টোলা পরিদর্শন করে। ঐ তদন্তকারী দলের সদস্যরা ছিলেন সি পি আই (এম এল)-এর কেন্দ্রীয় কমিটি এবং বিহার এ আই পি ডব্লিউ এ-র সদস্য শশী যাদব, সি পি আই (এম এল)-এর গয়া জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন কুমার, সি পি আই (এম এল)-এর বিহার রাজ্য কমিটি সদস্য রামবলি সিং যাদব এবং এ আই পি ডব্লিউ এ-র গয়া জেলা সম্পাদক রিতা বারণওয়াল। গয়া পুলিশ এই ঘটনাটাকে সম্মান হত্যা বলে অভিহিত করার পর নিরঞ্জন কুমার এবং রিতা বারণওয়াল ১১ জানুয়ারি সকালে আবারও পাটোয়া টোলা গিয়ে ঘটনাটির তদন্ত করেন এবং গোটা বিষয়টাকে বিপথে চালিত করার অভিযোগে জেলা প্রশাসনকে অভিযুক্ত করেন।
তদন্তকারী দলের সদস্যরা অঞ্জনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এবং পাটোয়া সম্প্রদায়ের অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্তকারী দলের সদস্যরা জানতে পারেন, পুলিশ অঞ্জনার বাবা-মা, দাদু এবং ছোট ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের উপর লাগাতার চাপ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে যে, তারা যেন ঘটনাটাকে ‘সম্মান হত্যা’ বলে স্বীকার করে। সাম্প্রতিক সময়ে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে যাতে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার লক্ষ্যে পুলিশকে তদন্ত বিপথে চালিত করতে দেখা গেছে। তদন্তকারী দল জানিয়েছে, অঞ্জনা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। গোটা পরিবারই দিন মজুর হিসাবে কাজ করে। মনপুরের পাটোয়া সম্প্রদায় মূলত তাঁতি; মাত্র গুটি কয়েক লোকের একটু বড় ব্যবসা রয়েছে। এই ধরনের শ্রমজীবী পরিবারের বিরুদ্ধে সম্মান হত্যার অভিযোগের কোন ভিত্তি থাকতে পারে না। ২৮ ডিসেম্বর থেকে অঞ্জনার খোঁজ পাওয়া না যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা দু-দিন ধরে নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ-খবর করেন কিন্তু সন্ধান না পেয়ে তারা বিষয়টা পুলিশকে জানাতে থানায় যায়। কিন্তু তুচ্ছ অজুহাতে স্থানীয় বুনিয়াদগঞ্জ থানা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। বিষয়টা নিয়ে সংবাদ মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন ওঠায় থানা ৪ জানুয়ারি অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের নামে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে। এরপর ৬ জানুয়ারি অঞ্জনার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গয়া-খিজরসরাই রাস্তার ধারে পেহানি জোড়া মসজিদের কাছে বাকসারাইয়া টোলার ঝোপে ওর মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়। প্রশাসন একটু তৎপর হয়ে সময় মত পদক্ষেপ নিলে অঞ্জনাকে হয়ত বাঁচানো যেত। কিন্তু জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় থানা এই ব্যাপারে অবহেলাই দেখায়।
পুলিশের বয়ান হল—পরিবারের লোকজন বলছে যে অঞ্জনা ৩১ ডিসেম্বর ঘরে ফেরে এবং তারপর আবার চলে যায়। এর ভিত্তিতেই প্রশাসন ঘটনাটাকে সম্মান হত্যা বলে অভিহিত করছে। সি পি আই (এম এল)-এ আই পি ডব্লিউ এ-র তদন্তকারী দলের সদস্যদের দৃঢ় অভিমত হল, পুলিশ অঞ্জনার পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। ওরা মনে করছে, পরিবারের সদস্যরা দরিদ্র মেহনতি শ্রেণীর সদস্য হওয়ায় তারা এই চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ঘটনাটাকে সম্মান হত্যা বলে স্বীকার করে নেবে। এটা যদি সত্যিই সম্মান হত্যার ঘটনা হত তবে হাজার-হাজার পাটোয়া সম্প্রদায়ের জনগণ, গয়ার নাগরিকবৃন্দ এবং একাধিক সমাজ আন্দোলনের সংগঠন এই ঘটনায় ক্রুদ্ধ হয়ে ন্যায় বিচার চেয়ে সি বি আই তদন্তের দাবিতে কখনই বিরাট আকারের পদযাত্রায় সামিল হত না। ৯ জানুয়ারির মোমবাতি মিছিল সংগঠিত হয় মানপুর থেকে গয়া টাওয়ার পর্যন্ত এবং তাতে সমস্ত সম্প্রদায়ের জনগণই অংশ নেয়।
এই পরিস্থিতিতে গয়া পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া যথেষ্ট সন্দেহ জাগায় আর তাই সি পি আই (এম এল) এই ঘটনায় সি বি আই তদন্ত দাবি করেছে। তারা অবহেলার জন্য দায়ী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া, পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সদস্যদের চাকরি দেওয়া এবং পরিবারের প্রতি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবিও জানিয়েছে।