খবরা-খবর
কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দামের দাবিতে পূর্ব বর্ধমানে পথ অবরোধ

পুর্ব বর্ধমান জেলায় ধান সব্জি আলু ও অন্যান্য কৃষি ফসলের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ বেশি দাম দিয়ে সরকারকে কৃষকের ফসল ক্রয় করার দাবিতে পথ অবরোধ। গত ২৪ ডিসেম্বর পুর্ব বর্ধমান জেলার কালনা শহরের বৈদ্যীপুর মোড়ে চৌরাস্তায় সারা ভারত কৃষক মহাসভা ও সারাভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির পক্ষ থেকে রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। কালনা ২নং ব্লক, পূর্বস্থলী ২নং ব্লক ও পূর্বস্থলী ১নং ব্লকের শতাধিক মানুষ কালনা স্টেশন থেকে মিছিল করে এসে বৈদ্যপুর মোড়ে চৌরাস্তায় ধান রাস্তায় ঢেলে রাস্তা অবরোধ করে। অবরোধে ব্যনার ফেসটুন, প্ল্যাকার্ড ও পতাকায় সুসজ্জিত ছিল। ১৫ মিনিট অবরোধের পর কালনা থানার পুলিশ এসে জানতে চায় কি জন্য অবরোধ এবং কতক্ষণ ধরে অবরোধ চলবে। উদ্যোক্তারা জানান ফসলের উৎপাদন খরচের দেড়গুন বেশি দাম দিয়ে সরকারকে কৃষকের ফসল ক্রয় করার দাবিতে এবং ধান কেনা নিয়ে দলবাজী দুর্নীতি ও অন্যান্য দাবিতে রাজ্য জুড়ে পথ অবরোধ আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই অবরোধ আন্দোলন। ১ঘন্টা চলবে। পুলিশ কিছুক্ষণ পরে অবরোধ তুলে নিতে বলে এই নিয়ে সামান্য বচসা হয়। পুলিশ ৫মিনিট সময় দিয়ে সরে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পরে আবার আসে আবার তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এবারও বাকবিতন্ডার পর আন্দোলনকারীদের পক্ষে সময় চাওয়াতে ৫মিনিট সময় দেয়। আবার কতক্ষণ পরে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য জোর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। বলা যায় জোর করেই অবরোধ তুলতে বাধ্য করে। তারপর পুলিশের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে শ্লোগান দিতে দিতে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এই অবরোধের নেতৃত্বে ছিলেন কালনা লোকাল কমিটির সম্পাদক কমরেড রফিকুল ইসলাম, সারা ভারত কৃষক মহাসভার জেলা কমিটির সদস্য
প্রদ্যুৎ ঘোষ, জিয়াদুল সেখ ও পিযুষ সাহানা পূর্বস্থলী এরিয়া কমিটির সম্পাদক শিবু সাঁতরা, অশোক চৌধুরী এবং সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির রাজ্য সভাপতি সজল পাল। আর জেলার মেমারী শহরের জি টি রোড মোড়ে একই সময়ে সাড়ে এগারোটার সময় ৫০ জনের মত লোক নিয়ে সারাভারত কৃষক মহাসভার রাজ্য সভাপতি অন্নদাপ্রসাদ ভট্টাচার্য ও জেলা সম্পাদক সলিল দত্ত ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির জেলা সম্পাদক আনসারুল আমান মন্ডল পার্টির জেলা কমিটির সদস্য শ্রীকান্ত রানা, কমরেড সত্যনারায়ন বিশ্বাস, কমরেড সাধন কর্মকার, মনসুর মন্ডল সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্ধ মেমারী স্টেশন থেকে মিছিল করে এসে রাস্তা অবরোধ করে। মিছিল ব্যনার ফেস্টুন পতাকাতে সজ্জিত ছিল। ২০ মিনিট অবরোধ চলার পর মেমারী থানার পুলিশ এসে অবরোধ তুলে দেয়। জেলা জুড়ে ধান কেনা নিয়ে ব্যপক বিক্ষোভ কৃষকদের মধ্যে দানা বাঁধছে। প্রথমে তৃণমূলের নেতারা পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির দপ্তর থেকে নিজেদের মতো করে টোকেন বিলি করছিল। ফলে অর্থের বিনিময়ে ফড়ে ব্যবসায়ী ধান্দাবাজ নেতারাই মূলত কৃষকদের থেকে ১২০০-১৩০০ টাকা কুইন্টাল দামে ধান কিনে সরকারের ক্রয় কেন্দ্রে ১৫৭০ টাকা দামে ধান দিয়ে ব্যবসা করতে শুরু করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ শুরু হওয়ার ফলে এখন ঐ টোকেনদাতারা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে এদিনের অবরোধ কৃষকদের মধ্যে ভালো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। অবরোধে দাবি ছিল—(১) ধান, পাট, সব্জি, আলু সহ সমস্ত কৃষি ফসলের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ বেশি দাম দিয়ে সরকারকে কৃষকের ফসল ক্রয় করতে হবে। (২) ১৭৭০ টাকা কুইন্টাল দামে প্রকৃত কৃষকদের থেকে ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। (৩) ধান কেনা নিয়ে দলবাজী দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ফড়ে, ধান্দাবাজ নেতা ও ব্যবসায়ীদের থেকে ধান কেনা চলবে না। (৪) বর্গাদার, ভাগচাষী ও খাসজমি চাষিদেরও ফসল ক্রয় করতে হবে। ফসল ক্রয়ে কুইন্টাল প্রতি ২কেজির বেশী বাদ দেওয়া চলবে না। বিভিন্ন অজুহাতে ধান ফেরত দিয়ে কৃষকদের হয়রানী করা চলবে না। (৫) কৃষকদের ঋণ মুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সার ডিজেল বিদ্যুৎ কীটনাশক সেচ ও অন্যান্য কৃষি ফসলের উপকরণের মুল্য কমাতে হবে।

খণ্ড-25
সংখ্যা-39