সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের কেন্রীরায় কিমিটর পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে এক সঙ্ঘী সাম্প্রদায়িক উন্মত্ত জনতা “গো-হত্যা হয়েছে” বলে চিৎকার করতে থাকে। তারা ছিল অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত এবং বেশ ভালোভাবেই সংগঠিত। তারা ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করল সুবোধ কুমার সিং নামে পুলিশি পোষাকে ডিউটিরত এক ইনস্পেকটরকে। এই পুলিশ ইনস্পেক্টর আগে থেকেই আহত এবং অজ্ঞান ছিলেন। সহকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মন্দির ও গরুর নামে বিজেপির নেতারা মুসলিম বিরোধী ঘৃণা ছড়াচ্ছেন আর এই ঘৃণা একের পর এক জীবন নিয়েই যাচ্ছে। এই গুলি চালনার ঘটনায় আরো এক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
নির্লজ্জ নিন্দাপ্রচারকের দলবল এই ইনস্পেক্টরের মৃত্যুর ঘটনাকেও তাদের ঘৃণা প্রচারের কাজে ব্যবহার করতে চাইছে। তারা গুজব ছড়াচ্ছে সুবোধ সিং মারা গেছেন তবলিঘি ইজতেমা উপলক্ষ্যে জমায়েত হওয়া মুসলমানদের হাতে।
বুলন্দশহরের হিন্দুরা কিন্তু তবলিঘি ইজতেমা পালনের জন্য একটি শিবমন্দির চত্বর মুসলমানদের ছেড়ে দিয়েছিল, কারণ ট্রাফিক জ্যামের জন্য তারা মসজিদে পৌঁছতে পারছিলেন না। সাধারণ মানুষ যখন এইরকম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখাচ্ছেন, তখন একদল উন্মত্ত সঙ্ঘী জনতা এক পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা ও নৈরাজ্যের পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যস্ত।
বিজেপি সরকার নানা কারণেই জনতার ক্ষোভের আগুনে দগ্ধ হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা, ভয়ংকর আর্থিক নীতি গ্রহণ ও তার ফলে জনগণের জীবন তছনছ হয়ে যাওয়া, গণতান্ত্রিক শক্তি ও শ্রমজীবী জনগণের ওপর ফ্যাসিবাদী হামলা—এসবই জনগণের ক্ষোভকে প্রবল করে তুলেছে। ২০১৯-এর নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই সঙ্ঘীরা জনগণের দৃষ্টিকে এই ক্ষোভ থেকে অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য এবং তাদের ঐক্যকে ভাঙার জন্য মন্দির এবং গো- রক্ষার নামে উত্তেজনা সৃষ্টিতে নেমেছে। কিন্তু এই ধরনের সাম্প্রদায়িক নক্সা ব্যর্থই হবে, কারণ মানুষ আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন।
বুলন্দশহরের ঘটনায় সিপিআই(এমএল) উচ্চ পর্যায়ের বিচারবিভাগীয় তদন্ত এবং এই ধরনের ভীড় হিংসায় অংশগ্রহণকারী ও তার পরিকল্পনাকারীদের কড়া শাস্তির দাবী জানাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে যোগী রাজ জমানার অঙ্গ হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ঘৃণাজাত অপরাধ, মিথ্যা এনকাউন্টার হত্যা, দলিত ও নারীদের ওপর আক্রমণের ঘটনাবলী। সিপিআই(এমএল) সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তি ও নাগরিকদের এর মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। যে সব রাজ্যে নির্বাচন হচ্ছে সেখানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির অন্যতম প্রধান প্রচারক হিসেবে ঘৃণা ও বিভাজন সৃষ্টিকারী বক্তৃতা দিয়েই চলেছেন। সেইসব রাজ্যের ভোটারদের মনে রাখা দরকার বিজেপির পক্ষে একটি ভোট মানেই জঙ্গলরাজের পক্ষে, ভীড় হিংসার শাসনের পক্ষে ভোট, যেখানে উন্মত্ত জনতা যে কোনও মানুষকে এমনকী পুলিশদেরও
নির্বিচারে হত্যা করতে পারে।