একজন লাঠিতে ভর দিয়ে কোনোরকমে এগিয়ে চলেছেন, তো অন্যজন তার ঘুমন্ত শিশুকে কোলে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে এগোচ্ছেন, কিংবা শিয়ালদহ চত্বরে হঠাৎ-ই এক সংখ্যালঘু যুবক মিছিলে ঢুকে স্বতস্ফূর্তভাবে স্লোগান দিচ্ছে “ফ্যাসিস্ট মোদী দূর হঠো!”। হ্যাঁ খানিকটা এমনই ছিলো ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার ২৬তম বর্ষে ১৬টি বামদলের ডাকা মহাজাতি সদন থেকে পার্কসার্কাস মোড় পর্যন্ত সেই মহামিছিলের ছবি। কলকাতার মহাজাতি সদন চত্বরে সকাল থেকেই চোখে পড়ছিল লাল ঝান্ডাধারীদের জন-সমাগম। বেলা ১টা থেকে সেখানে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) সহ অন্যান্য বাম নেতৃত্ব। সমস্ত বাম নেতৃত্বের বক্তব্যের মূল আহ্বান ছিল বিজেপি এবং আরএসএস-এর ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের প্রতিষ্ঠা করা।
বেলা ২টোয় অগণিত মানুষের লাল রঙে রাঙা সেই মিছিল বিভিন্ন গানে-স্লোগানের মধ্যে দিয়ে তার যাত্রা শুরু করে। মহানগরীর রাজপথ কার্যত তখন দখল নিয়েছে হাজার-হাজার লাল পতাকা। ছাত্র-যুব-মহিলা সহ অসংখ্য সহনাগরিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে চলেছেন নব ভারত গঠনের লক্ষ্যে। এই মহামিছিলের শুরু থেকেই ছিল উপচে-পড়া ভিড়। হাজারে হাজারে মানুষ যখন লাল পতাকা নিয়ে স্লোগানে সোচ্চার হয়ে এগিয়ে চলেছেন তখন রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে, বিভিন্ন চত্বরে অসংখ্য সাধারণ মানুষ আগ্রহভরে দেখছেন, ছবি তুলছেন বামেদের ঐক্যবদ্ধ মহামিছিলের। তাদের চোখে-মুখে বিরক্তি নেই,অস্থিরতা নেই! তারা যেন মুক্তি খুঁজতে চাইছেন মেহনতী মানুষের এই মিছিলে। ৬ ডিসেম্বর “সম্প্রীতি দিবস” এবং আম্বেডকরের মৃত্যুবার্ষিকীতে যেন এই মিছিল এক “অধিকার যাত্রা”-র গণমিছিলে রূপান্তরিত হয়েছিল। অন্যান্য মিছিলের থেকে আলাদা এই মহামিছিল রাজ্যের রাজধানীর বুকে আরও একবার সেই চিরন্তন সত্যকেই জানান দিয়ে গেল যে বাংলা তথা ভারতে এই সাম্প্রদায়িক-বিভেদের রাজনীতি কে পরাস্ত করতে প্রত্যেকটি বামকর্মী প্রয়োজনে তাদের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়বে। এই ফ্যাসিবাদী উত্থানের সময় বাংলা সহ সারা দেশব্যাপী বামপন্থীদের এই ঐক্যবদ্ধ গণ-প্রতিরোধ নিশ্চিতভাবে ভারতবর্ষের রাজনীতিতে এক টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে চিহ্নিত হবে। ৬ ডিসেম্বরের বামেদের ঐক্যবদ্ধ মহামিছিল মানুষকে নিশ্চিতভাবে এই বার্তাই দিয়ে গেল যে বাংলার ভবিষ্যৎ সাম্প্রদায়িক রথে নির্ধারিত হবে না, বাংলার ভবিষ্যতের নির্মাণ হবে মেহনতী মানুষের দৃপ্ত লড়াইয়ের পথে।