মানব জাতির ইতিহাসে,মানব প্রগতির দীর্ঘ পথ যাত্রায় মহান নভেম্বর বিপ্লবই সর্বপ্রথম শোষকশ্রেণী ও ক্ষমতাবান শাসকদের চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করার মধ্য দিয়ে শ্রমজীবী মানুষ-শোষিত জনগণের জয়গান ঘোষিত করে। রাশিয়ায় নভেম্বর বিপ্লবের আগেও দেশে দেশে বহু বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরানো শাসকদের জায়গায় মুষ্টিমেয় নতুন শাসকেরাই বিপ্লবের ফলকে আত্মসাৎ করেছে। দাস বিদ্রোহের শেষে ক্রীতদাসরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেনি। প্রভুত্ব করেছে সামন্ততন্ত্র-রাজা জমিদাররা। ফরাসী বিপ্লবে সামন্ততন্ত্র পরাস্ত হয়েছে কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতার দখল নিয়েছে মুষ্টিমেয় বুর্জোয়ারা। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম রুশ নভেম্বর বিপ্লবই পরিচালিত হয়েছে শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে এবং বিজয়ী বিপ্লবের শেষে শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষের রাজ গড়ে ওঠে। বুর্জোয়া রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে মাথা তুলে দাঁড়ায় শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা- সমাজতন্ত্র। প্রতিষ্ঠিত হয় জমিতে কৃষকদের যৌথ মালিকানা, শিল্প বাণিজ্যে ব্যক্তি মালিকানার বদলে চালু হয় শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয়করন। প্রতিষ্ঠিত হয় সেই গনতন্ত্র যেখানে ব্যাপক জনগণের অধিকার ও মতামত স্বীকৃতি পায় ও ক্ষমতাহারা বুর্জোয়াদের কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা হয় অর্থাৎ ধর্ম শুধু পরিবার ও উপাসনালয়েই সীমাবদ্ধ হয়। বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদ বিকশিত হতে থাকে।
নভেম্বর বিপ্লব শুধু যে রুশ সর্বহারাশ্রেণীর বিজয় ও গৌরবকেই বৃদ্ধি করেছিল তা নয় সারা দুনিয়ার শোষিত মানুষের মধ্যেও সঞ্চার করেছিল উৎসবের আনন্দ।
রাজতন্ত্র (জার) ও বুর্জোয়া জোটের বিরুদ্ধে রাশিয়ার শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছিলেন। কিন্তু সঠিক নেতৃত্বের অভাবে বার বার তাঁরা প্রতারিত হন। মহান লেনিনের নেতৃত্বে সঠিক রাজনীতির দ্বারা পরিচালিত কমিউনিস্ট পার্টি এসে হাল ধরাতেই অবশেষে বিপ্লবের বিজয় অর্জন সম্ভব হয়।
এক দিকে সংশোধনবাদ বা দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ অন্যদিকে নৈরাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই রুশ কমিউনিস্ট পার্টি (বলশেভিক পার্টি) বিকাশ লাভ করে। সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী ঘেরাও-দমনকে মোকাবিলা করে দুর্বল কৃষিপ্রধান রাশিয়াকে এক আধুনিক শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিনত করা সম্ভব হয়েছিল একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক শ্রেণীর দৃঢ় ঐক্যকে আরও প্রশস্ত করার মাধ্যমে।
দীর্ঘ চলার পথে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রকে ক্রমে খর্ব করে ফেলা ও নেতৃত্বে আমলাতন্ত্র জাঁকিয়ে বসার ফলে এক সময়ের গৌরবশালী রুশ সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার ৭৩ বছরের ইতিহাসকে কখনোই ভোলা যাবে না।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ চালিত পুঁজিবাদী শক্তিসমূহ নভেম্বর বিপ্লব ও লেনিনকে মিথ্যা প্রমান করতে সচেষ্ট। কিন্তু তারা রুশ বিপ্লব ও লেনিনের আদর্শকে আজও ভয় পায়।আর ভয় পায় বলেই এ দেশে তাদের দালালরা লেনিনের মূর্তি ভাঙ্গে।
ফ্যাসিবাদী বিজেপি কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্য সর্ব ক্ষেত্রে কোম্পানিরাজ কায়েমের জন্য হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করছে। নভেম্বর বিপ্লবের গৌরবময় শিক্ষার আলোকে, আসুন, এই ফ্যাসিস্ট শক্তিকে আমরা পরাস্ত করি।পার্টিকে আরও মজবুত করে তুলে এবং জনগণের আন্দোলনে পার্টির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে আসুন, দেখিয়ে দেই, সমাজতন্ত্র তথা লাল ঝান্ডাই হল মানব মুক্তির এক মাত্র পথ।