গত ১১ অক্টোবর প্রকাশ করা ২০১৮-র বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১১৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হল ১০৩ এবং ভারতে বুভুক্ষার স্তরকে ‘‘গুরুতর’’র বর্গে রাখা হয়েছে। পাঁচ বছরের নীচে পাঁচজন ভারতীয় শিশুর মধ্যে অন্ততপক্ষে একজন ‘‘ওয়েস্টিং’’-এ ভোগে (পুষ্টি কম হওয়ার জন্য উচ্চতার তুলনায় তাদের ওজন অত্যন্ত কম)। ভারতের চেয়ে একমাত্র যে দেশটিতে শিশুদের মধ্যে ওয়েস্টিং-এর প্রাদুর্ভাব বেশি তা হল দক্ষিন সুদান। কম-পুষ্টি, শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া এবং শিশু মৃত্যুর বর্গগুলির বিচারে ভারতের সূচকগুলি ২০০০ সাল থেকে উন্নত হয়েছে, কিন্তু ‘‘শিশু ওয়েস্টিং-এর প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য পূর্ববর্তী বছরগুলির তুলনায় বাস্তবে আরো বেড়েছে। ২০০০ সালে তার হার ছিল ১৭.১ শতাংশ এবং তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৫ সালে দাঁড়ায় ২০ শতাংশে। আর ২০১৮ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২১ শতাংশে। দক্ষিন সুদানে শিশুদের মধ্যে ওয়েস্টিং-এর হার হল ২৮ শতাংশ।’’
রিপোর্টে বলা হয়েছে, দক্ষিন এশিয়ায় ‘‘শিশুদের মধ্যে ওয়েস্টিং-এর হার পরিবারের সম্পদের তুলনায় মায়েদের উচ্চতার সাপেক্ষে দেহের ওজন এবং বিশুদ্ধ জল ও নির্মলতার লভ্যতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত, যা বোঝাচ্ছে যে, সমস্যার সমাধানে দারিদ্রের প্রশমনই যথেষ্ট নাও হতে পারে। ... দক্ষিন এশিয়ায় শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার হারকে যা কমাতে পারে তার মধ্যে রয়েছে অপ্রধান খাদ্যের গ্রহনকে বেশি করা, নির্মলতা, নারী শিক্ষা, বিশুদ্ধ জল, লিঙ্গ সমতা এবং জাতীয় খাদ্যের লভ্যতাকে বাড়িয়ে তোলা।’’
ভারতে বুভুক্ষা এমন তীব্রতর স্তরে থাকলেও কেন্দ্রে মোদী সরকার এবং বুভুক্ষার প্রকোপ বেশি হওয়া বিজেপি শাসিত রাজ্যের সরকারগুলো পুষ্টি, নির্মলতা, জল এবং সামাজিক সমতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির সমাধানের চেয়ে বিভেদ সৃষ্টিকারী ঘৃণার প্রচারকে উসকিয়ে তোলার ওপরই জোর দিচ্ছে। খাদ্যের অধিকার আন্দোলনের একটা রিপোর্টে দেখা গেছে যে, মোদী রাজের চার বছরে ১১টা রাজ্যে ৬১ জন মানুষ অনাহারে মারা গেছে, যে তালিকায় শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ড, উভয় রাজ্যেই অনাহারে মৃত মানুষের সংখ্যা ১৬।
উত্তরপ্রদেশ প্রতিদিনই যেগুলোর জন্য খবর হয়ে ওঠে তা হল সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রসূত গনপ্রহার, হিন্দু নারী ও মুসলিম পুরুষের মধ্যে বন্ধুত্বকে নিশানা করা ঘৃণার অপরাধ, হেফাজতে হত্যা/ভুয়ো সংঘর্ষ, নারী ও দলিতদের উপর পুলিশি বা অন্যান্য নিপীড়ন, হাসপাতালে শিশু মৃত্যু এবং সাম্প্রদায়িক হিংসা। আরো খবর হয় মুঘলসরাই অথবা এলাহাবাদের নাম পাল্টে সেগুলোর সংঘের পছন্দের নাম দেওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের জন্য। এটা হল সেই রাজ্য যেখান থেকে মোদী ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন—খবর যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে তিনি ২০১৯ সালে আবার বেনারসের ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে যাবেন বলে মনে হয় না।
উত্তরপ্রদেশের কুশিনগর জেলার খিরকিয়া গ্রামের ২৬ ও ২৫ বছর বয়সের দুই ভাই ফেকু ও পাপ্পু ২০১৮-র ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর ১৬ ঘন্টার ব্যবধানে অনাহারে মারা যায়। দুজনই ছিল চরম উৎপীড়িত মুসাহার সম্প্রদায়ের দলিত। আমরা স্মরণ করেত পারি, গত বছর মে মাসে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ কুশিনগর জেলার মইনপুর দীনাপট্টি গ্রাম পরিদর্শনে যাওয়ার আগে কিভাবে ঐ গ্রামের দলিত পরিবারগুলোকে ‘লাইফবয়’ ও ‘ঘড়ি’ সাবান এবং একটি করে স্যাম্পুর স্যাশে দিয়ে জেলার সরকারি কর্তাব্যক্তিরা জনসভায় যাওয়ার আগে তাদের ‘‘নিজেদের পরিষ্কার করতে’’ বলেছিলেন। এই ঘটনা সম্পর্কে ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে একজন আশা কর্মীর এই কথাগুলো উদ্ধৃত হয়েছিল, ‘‘ওরা অত্যন্ত কম উপার্জন করে। খাবার নিয়েই ওরা বেশি উদ্বিগ্ন।’’ কিন্তু উচ্চ বর্ণের ঔদ্ধত্য নিয়ে আদিত্যনাথ কুশিনগরের মুশাহারদের হাতে সাবান ধরিয়ে তাদের অপমান করার পথেই গেলেন, আর অবহেলা করতে লাগলেন তাদের দারিদ্র ও বুভুক্ষাকে।
ঝাড়খণ্ডেও ১৬ জনের অনাহারে মৃত্যুর মধ্যে ৯ জন ছিলেন নারী, ৬ জন আদিবাসী (৫ জন দলিত সম্প্রদায়ের এবং ৫ জন ওবিসি)। এই মৃত্যুগুলির অনেক কটাই ঘটেছে রেশন এবং/অথবা পেনশন না পাওয়ার জন্য এবং তার পিছনেও কারণ ছিল আধার কার্ডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বা তার সত্যতা যাচাইয়ের ব্যর্থতা। এরপরও রাজ্য সরকারগুলো এবং কেন্দ্রীয় সরকার অনাহারে মৃত্যুর কথা অস্বীকার করে চলেছে, বিভিন্ন রোগের জন্য মৃত্যুগুলি ঘটেছে বলে দাবি করছে এবং খাদ্য রেশন দেওয়ার বদলে নগদ হস্তান্তর এবং আধারের সত্যতা যাচাইকেই ‘সমাধান’ বলে সেগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যদিও বাস্তবে এগুলো সমস্যাকে বাড়িয়েই তুলছে।
১) মহামান্য বিজয় মালিয়া | ৮) আরতি কালরা | ১৫) নীলেশ পারেখ | ২২) রাজীব গোয়েল |
২) মেহুল চোকসী | ৯) সঞ্জয় কালরা | ১৬) বিনয় মিত্তল | ২৩) অলকা গোয়েল |
৩) নীরব মোদী | ১০) বর্ষা কালরা | ১৭) একলব্য গর্গ | ২৪) ললিত মোদী |
৪) নিশান মোদী | ১১) সুধীর কালরা | ১৮) চেতন জয়ন্তীলাল সন্দেশারা | ২৫) রীতেশ জৈন |
৫) পুস্পেস বৈদ | ১২) যতীন মেহতা | ১৯) নীতিন জয়ন্তীলাল | ২৬) হিতেশ নগেন্দ্রভাই প্যাটেল |
৬) আশীষ জবানপুত্র | ১৩) উমেশ পারেখ | ২০) দীপ্তিবেন চেতনকুমার | ২৭) ময়ূরীবেন প্যাটেল |
৭) সানি কালরা | ১৪) কমলেশ পারেখ | ২১) সব্য শেঠ | ২৮) আশিষ সুরেশ ভাই |