১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি যে ছেলেটার জীবনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১ নভেম্বর আচমকাই তার সেই যাত্রা থেমে গেল প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি আইসা-ইউনিটের প্রেসিডেন্ট কমরেড স্বপ্রভ আমাদের ছেড়ে চলে গেল মাত্র ২১ বছর বয়সে। ১ নভেম্বর সকালে মর্মান্তিক খবরটা পাওয়ার পর, দুপুরে বারাসাত জেলা হাসপাতালের মর্গের সামনে বন্ধু, পরিবারের মানুষদের কান্না-বেদনা-কষ্ট গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে দিয়েছিল। কল্যাণী পাবলিক স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলকাতায় প্রেসিডেন্সিতে সমাজবিদ্যা নিয়ে পড়তে আসে স্বপ্রভ। কলেজে আসার কিছু সময় পর থেকেই সবসময় হাসিখুশি স্বপ্রভ চলে আসে সমাজ বদলের বামপন্থী রাজনীতি-র আঙিনায়। আইসা-র হয়ে সক্রিয় রাজনীতি ও পড়াশোনা চলতে থাকে সমান তালে। নিজের ক্লাসে জনপ্রিয় ছাত্র স্বপ্রভ-র সাথে সকলের ছিল অত্যন্ত সুসম্পর্ক। শ্রীমতি, ডেভিড, ভাস্করের সবসময়ের সাথী স্বপ্রভ বিভিন্ন বিষয় নিয়েই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল বেশ অনেকটা সময় ধরে। কিন্তু কলেজের মধ্যে বা বাইরের প্রায় সমস্ত আন্দোলনে নিজের ভূমিকা রাখতো। পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত হয়েও দিন বদলের রাজনীতি-র মধ্যে নিজের অনুপ্রেরনা খুঁজে নিতে ওর কোনো বাধা ছিল না। সংগঠনের-র বিভিন্ন কাজে প্রেসিডেন্সিতে যেই যেত সবসময় তাদের অন্যতম সঙ্গী ছিল স্বপ্রভ। ইউনিট সম্মেলন হোক বা নির্বাচন যখনই প্রেসিডেন্সিতে গেলেই সকলের সাথে স্বপ্রভ হাসিমুখে নানারকম কথা বলতো, দেশ-দুনিয়া-রাজনীতির। আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ফেসবুকে ওর প্রোফাইলে ছিল “stuck between convictions and facts”। হয়তো ওর মনে মনে এই দোটানা-টা চলছিল। মনে পরে SAVE NET EXAM শ্লোগান নিয়ে আমাদের এক মিছিল কলেজ স্ট্রিটে পুলিশের মুখোমুখি হয়,সাথে ছিল কমরেড স্বপ্রভ, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দেওয়াল লেখার সাথে ছিল কমরেড স্বপ্রভ। ইউনিট সম্মেলনে স্বপ্রভ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কথায় কথায় বলেছিল “কলেজে আইসাকে সবথেকে বড় সংগঠন করতে হবে বুঝলে, অনেক সমস্যা আছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। “এই কথাগুলোর মধ্যে ছিল দৃঢ় প্রত্যয়, কোনো হতাশা, কোনো ভয় ছিল না। হয়তো মনের মনিকোঠায় কোথাও একটা অন্ধকার ছিল যেখানে কোন দিন আলো পৌঁছায়নি। কমরেডকে দাহ করার আগে ওর কলেজের অসংখ্য পড়ুয়া, অনেক অধ্যাপকের চোখের জলে হয়তো সেই অন্ধকারকে না মেটাতে পারার আক্ষেপ ছিল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছিল। যে দৃঢ় প্রত্যয় ও হাসিমুখ দেখে আমরা অভ্যস্ত ছিলাম, শেষ শয্যায় তা ভালো লাগছিল না। প্রেসিডেন্সিতে হোস্টেলের জন্য আন্দোলনের সময়ও ওর সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজনীতি ছাড়াও ফুটবল ছিল ওর আকর্ষনণর অন্যতম কেন্দ্র। কমরেড স্বপ্রভ-র চোখে যে চিন্তা খেলা করতো তার নাগাল না পাওয়ার জন্য হয়তো যারা ওকে চিনতো-জানতো তাদের চিরকাল আক্ষেপ থাকবে। তাও প্রেসিডেন্সিতে আইসা তৈরি ও কাজের ক্ষেত্রে কমরেড স্বপ্রভ-র ভূমিকা সবসময় আমাদের স্মরণে থাকবে। সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখা এক তরুণের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনার ও ক্ষতির ওর স্বপ্নকে সত্যি করে তোলার দায়িত্ব আমাদেরই। অনেক সমস্যা থাকা সত্তেও কমরেড স্বপ্রভ-র টিকে থাকার লড়াই-এর অংশীদাররা সকলে চিরকাল তাকে মনে রাখবে।
আমরা, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কমরেড স্বপ্রভ ভক্ত-র প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করছি। কমরেড স্বপ্রভ ভক্তের মৃত্যু প্রেসিডেন্সিতে আইসার অপুরণীয় ক্ষতি করল। কমরেড স্বপ্রভ ভক্ত লাল সেলাম।