উত্তর ২৪ পরগণায় প্রতিটি মহকুমা শহরে বামপন্থী দলসমুহের ডাকে জেলার সব মহকুমা শহরে ৩০ অক্টোবর পেট্রোল পাম্পের সামনে তিন ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। শ্লোগান তোলা হয়, ‘পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিন তেলের দাম কমাও’।
পেট্রোল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এখন রোজকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই পেট্রল ডিজেলের দাম একটু একটু করে বেড়ে চলেছে। পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ৮২ টাকা এবং ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৭৬ টাকা হয়ে গেছে। মূল্যবৃদ্ধির এই সুযোগে রাজ্য সরকারও অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করে নিচ্ছে পেট্রোপণ্য থেকে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বেড়েছে। পরিবহণ খরচ বেড়েছে এই যুক্তিতে। গরিব ও মধ্যবিত্তের রান্নাঘরেও বড় ধাক্কা দিয়েছে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। মাত্র পাঁচ মাস আগে গত এপ্রিলে রান্নার গ্যাস বা এলপিজি-র দাম ছিল সিলিন্ডার প্রতি ৬৭৪ টাকা। এখন কলকাতায় রান্নার গ্যাসের দাম ৯০৭ টাকা ৫০ পয়সা। পাঁচ মাসে দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশ, বৃদ্ধির পরিমাণ ২৩১ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ দাম দিয়ে গ্যাস কেনা বহু পরিবারেই অসাধ্য কাজ হয়ে যাচ্ছে। গরিব মানুষ নানা কারণেই কেরোসিনের ওপরে নির্ভর করেন। গ্রামে কেরোসিনের ব্যবহার আরও বেশি। সেই কেরোসিনের দামও বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ২০০৪ সালে কেরোসিনের দাম ছিল লিটার প্রতি ৯ টাকা। ২০১৪ সালে মোদী সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখনও কেরোসিনের দাম ছিল লিটার প্রতি ১৬ টাকা। এখন সেটা বাড়তে বাড়তে ৩০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুতের মাসুল অন্যান্য রাজ্য থেকে তুলনামূলক বেশি। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ পর্ষদ তিন মাসের বিল একবারে পাঠিয়ে স্ল্যাবে কারচুপি করছে। এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুতের চার্জ নিচ্ছে। এই নিয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন।
এদিনের কর্মসূচিতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন অংশ নিয়েছে বিভিন্ন জায়গায় কামারহাটিতে বক্তা ছিলেন শিব শঙ্কর গুহরায়, সভাপতিত্ব করেন নবেন্দু দাশগুপ্ত। নৈহাটিতে বক্তা ছিলেন শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সরিৎ চক্রবর্তী এবং সুমেলি চক্রবর্তী সহ অন্যান্যরা সংগীত পরিবেশন করেন। ভাটপাড়ায় বক্তা ছিলেন নারায়ণ দে। বারাসাত বক্তা ছিলেন কাঞ্চন সরকার। বসিরহাট বক্তা ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস, সভাপতিত্ব করেন এম এ ফযর আল জামান। অশোকনগর বক্তা ছিলেন পবন সিংহ রায়, বাবুনি মজুমদার সংগীত পরিবেশন করেন। চাঁদপাড়া বক্তা ছিলেন কমল কর্মকার।
হাওড়ায় পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ফাঁসিতলা পেট্রোল পাম্প এবং বালির বাদামতলা পেট্রোল পাম্পে বামদলগুলির প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল হয় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। ফাঁসিতলায় পার্টির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মীনা পাল।
বালি বাদামতলা পেট্রোল পাম্পে সিপিআই(এমএল), সিপিআই(এম), সিপিআই এবং আরএসপি যৌথভাবে অবস্থান কর্মসূচি নেয়। সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন সিপিআই(এমএল) লোকাল সম্পাদক মাধব মুখার্জী। সিপিআই(এম), সিপিআই, আরএসপি নেতৃত্বের সাথে সভায় বক্তব্য রাখেন নীলাশিস বসু এবং দীপক চক্রবর্তী।
হুগলী জেলায় পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ২৯ ও ৩০ অক্টোবর হুগলী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বামদলগুলির যৌথ উদ্যোগে লাগাতার প্রতিবাদী সভা ও অবস্থান কর্মসূচী নেওয়া হয়। ২৯ তারিখে ব্যান্ডেল জি টি রোডের ধারে বর্ষণসিক্ত দুপুরে পেট্রোল পাম্পের সামনে বাম দলের বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআ(এমএল) লিবারেশনের নেতা কল্যাণ সেন, সিপিআই(এম)-র নেতা সুদর্শন রায় চৌধুরী ও মনোদীপ ঘোষ, ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল সাহা, আর এস পি-র কিশোর সিং ও সিপিআই-এর জেলা সম্পাদক তিমিরবরণ ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন মলয় সরকার সিপিআই(এমএল)-র পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বটকৃষ্ণ দাস, ভিয়েত ব্যানার্জি, গোপাল পাল, সুভাষ অধিকারী, রাজীব বল, সুদর্শন বসু, খোকন ব্যানার্জি প্রমুখ। ঐদিনই উত্তরপাড়ার শিবতলা পেট্রোল পাম্পে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)-র শংকর মুখার্জি, দেবাশিষ নন্দী, আভাষ গোস্বামী, মিতা রায়চৌধুরী, সুদীপ সাহা, শ্রুতিনাথ প্রহরাজ ও জ্যোতিকৃষ্ণ চ্যাটার্জী এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষে অপূর্ব ঘোষ ও সৌরভ রায়। সিপিআই(এমএল)-র পক্ষ থেকে মহিলা ও শ্রমিকরা ভালো সংখ্যক অংশগ্রহণ করেন। সভার সঞ্চালক ছিলেন সিপিআই(এম)-র সলিল দত্ত। ৩০ অক্টোবর কোন্নগরের ধাড়সা পেট্রোল পাম্পের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ হয়। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এবং সিপিআই(এম) অবস্থানে অংশ নেয়। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ ও এরিয়া কমিটির পক্ষে সৌরভ রায়, সিপিআই(এম)-এর হুগলী জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য জ্যোতিকৃষ্ণ চ্যাটার্জী ও মণীন্দ্র চক্রবর্তী। সঞ্চালনা করেন সিপিআই(এমএল)-র রবীন্দ্রনাথ শূর ও ছাত্র অসীম সরকার। এই সভাটির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের নির্মাণ শ্রমিক সংগঠকরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন।