গত ২৯-৩০ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির যাদব সমিতি ভবনে দার্জিলিং জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন উপলক্ষ্যে শহরের নামকরণ করা হয় কমরেড খোকন মজুমদার-খুদনলাল মল্লিক নগর। ২৯ তারিখ বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ স্থানীয় এয়ার ভিউ মোড় থেকে একটা প্রাণবন্ত, শ্লোগান মুখর মিছিল হিলকার্ট রোড প্রদক্ষিণ করে সম্মেলন স্থলে পৌঁছায়। এখানে রক্তপতাকা উত্তোলন করেন নকশালবাড়ি আন্দোলনের বীর যোদ্ধা খেমু সিং। শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব সহ মিছিলে সমবেত কর্মীরা এবং সম্মেলনের প্রতিনিধিবৃন্দ। পার্টি নেতা কমরেড ধূর্জটি প্রসাদ বক্সী, ফিলসিতা এক্কা, পাসকাল মীনজ, বিজন সরকার সহ নকশালবাড়ির কৃষক অভ্যুত্থানের কিংবদন্তি নেতৃত্ব কমরেড খোকন মজুমদার, কমরেড খুদনলাল মল্লিক এবং গণ আন্দোলনের নিহত অসংখ্য নেতৃত্বের এবং কর্মীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
কমরেড বিজন সরকারের নামে নামকরণ করা সভাগৃহে আয়োজিত হয় একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা। কমরেড ধুর্জটি প্রসাদ বক্সী মঞ্চ থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন নেমু সিং, খেমু সিং এবং বিভাস বিশ্বকর্মা। শুরুতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন মীরা চতুর্বেদী। আলোচনায় অংশ নেন রাজ্য পর্যবেক্ষক অতনু চক্রবর্তী এবং অভিজিৎ মজুমদার।
কিছুটা বিরতি নিয়ে শুধুমাত্র প্রতিনিধি ও জেলাস্তরের পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে শুরু হয় মূল পর্বের কাজ। সম্মেলন পরিচালনার জন্য পুলক গাঙ্গুলী, পবিত্র সিং এবং সীমন্তি এক্কাকে নিয়ে সভাপতিমণ্ডলী গঠিত হয়। প্রারম্ভিক গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন রঞ্জিত মুখার্জী। বিদায়ী জেলা কমিটির পক্ষে সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদন পাঠ করেন বিদায়ী কমিটির সম্পাদক।
পার্টির দশম কংগ্রেসের মূল্যায়নের আলোকে প্রতিবেদনের ওপর বক্তব্য রাখেন ২৮ জন প্রতিনিধি। দুদিনব্যাপী আলোচনায় উঠে আসে উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সমতল এবং দার্জিলিং জেলার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং তৃণমূল-বিজেপি-আরএসএস-এর গতিবিধি সম্পর্কে বিভিন্ন দিক, চা শ্রমিকের চলমান আন্দোলন ও আমাদের ভূমিকা, আদিবাসী ও রাজবংশী কৃষকের এবং সরকারি খাস জমি হাত বদলের প্রতিরোধে আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা, সর্বোপরি সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোর প্রতিকারে সচেষ্ট হওয়ার জন্য অঙ্গীকার নেওয়ার গুরুত্ব, ইত্যাদি। প্রতিনিধিদের আলোচনার সূত্র ধরে সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষিত ও আমাদের কর্তব্য বিষয়ে বিস্তৃত পর্যালোচনা রাখেন বাসুদেব বোস, পুলক গাঙ্গুলী, সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজদুর সমিতির রাজ্য নেতা শ্যামল ভৌমিক প্রমুখ।
প্রতিনিধি সভার শেষে ৩০ তারিখ সম্মেলনের অন্তিম পর্বে ১৭ জনের নতুন জেলা কমিটির নাম প্রস্তাবিত হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। খেমু সিংকে জেলা কমিটিতে রাখতে পেরে সম্মেলন সম্মানিত বোধ করে। অভিজিৎ মজুমদার জেলা সম্পাদক হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হন। সমবেত কন্ঠে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে একাদশ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।