খবরা-খবর
বাঁকুড়া শহরে আদিবাসী কনভেনশন—গঠিত হল ''আদিবাসী সংগ্রামী মঞ্চ''

হাসা (জমি), ভাষা, লায়-লাকচার (সংস্কৃতি) ও অধিকারের প্রশ্নে ২৯ সেপ্টেম্বর রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শতাধিক আদিবাসী রাজনৈতিক কর্মী বাঁকুড়া শহরে ধর্মশালা ভবনে কনভেনশনে সম্মিলিত হন। সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি এই কনভেনশনের আহ্বান করেছিল। বিশ্বনাথ সরেন ও সুনীল টুডু গান গেয়ে সভার সূচনা করেন। সুধীর মুর্মু, পাগান মুর্মু, রামু সরেন, চন্দনা বাস্কে, সজল অধিকারী, সুনীল টুডু ও সাধু সরেন সভা পরিচালনার কাজে মনোনীত হন এবং তাঁদের সহযোগি টিম হিসেবে নিযুক্ত হন রাম নিবাস বাস্কে, বাবলু মুর্মু ও গোবিন্দ হেম্ব্রম। উদ্বোধনী সম্ভাষণ দিতে আহ্বান জানান হয় পাগান মুর্মুকে। তিনি সভাকে স্বাগত জানিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে চলমান আলোড়ন সম্পর্কে অবহিত করান। জমি ও মজুরির আন্দোলনের সাথে সাথে সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি লিপি, আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুযোগ তথা চাকরির প্রশ্ন নিয়ে আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি সংক্ষেপে বলেন। এরপর কনভেনশনের প্রতিবেদন পেশ করেন রামনিবাস বাস্কে এবং তার ওপর আলোচনা চর্চা চলে। মোট ১৩ জন বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন। আলোচিত নতুন দিকগুলি সংযোজন ও সংশোধন সহ প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়, আগামী কর্মসূচী গৃহীত হয়। লড়াই এগিয়ে নিয়ে যেতে "আদিবাসী সংগ্রামী মঞ্চ" নামে সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং ২১ জনকে নিয়ে কাউন্সিল গঠিত হয়। সংগঠনের কনভেনর নির্বাচিত হন সুধীর মুর্মু এবং তিনজন সম্পাদক পাগান মুর্মু, রামু সরেন ও সুনীল টুডু। আশু সাংগঠনিক কর্মসূচী হিসেবে দক্ষিণবঙ্গে ও উত্তরবঙ্গে একটি করে আঞ্চলিক স্তরের কনভেনশন এবং রাজ্যস্তরে আদিবাসী অধিকার প্রশ্নে একটি কর্মশালা সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শিক্ষার অধিকার ও ভাষা-সংস্কৃতির মর্যাদা, ধর্মাচরণের স্বাধীনতা ও সমস্ত সরকারী নথিতে নিজ ধর্ম উল্লেখের রাজনৈতিক অধিকার, স্বায়ত্ত্বশাসন সংক্রান্ত প্রশ্নে পঞ্চম তফসিলের প্রসঙ্গ, জমি সংক্রান্ত প্রশ্ন, আদিবাসীদের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি, গণতন্ত্রের প্রশ্ন তথা আদিবাসী জাগরণ ইত্যাদি বিষয় প্রতিবেদনে ছিল। প্রতিবেদনকে সমর্থন করে রামু সরেন বলেন, সরকার সাধারণ জমি ও জঙ্গলের জমির পাট্টা দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তা দিচ্ছেনা। অন্যদিকে শিক্ষা অর্জন করেও আদিবাসী ভাইবোনেরা বেকারই থেকে যাচ্ছে। বিদ্যুতের তারে প্লাস্টিক কোটিং লাগাচ্ছে হুকিং আটকাতে, আদিবাসীদের বাড়িতে এক'দুটি আলো জ্বালাতেও দেবে না সরকার, চাইছে আদিবাসী গ্রামগুলি অন্ধকারে থাকুক! প্রতিটি আদিবাসী গ্রামে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, সমস্ত আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সরকারী খরচে শিক্ষা, আদিবাসী বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের ৩০০০ টাকা মাসিক পেনশন ইত্যাদি দাবিগুলিকে যুক্ত করে দাবিপত্র তৈরী করে আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন রামু সরেন। উত্তর ২৪ পরগণার শিবদাসপুরে তাঁদের গ্রামে এক আদিবাসীর জমি রক্ষা করতে কীভাবে যুবকেরা জোট বেঁধে জবরদখলকারীদের তাড়িয়ে দিয়েছেন সেই লড়াইয়ের গল্প বলে জমির কাগজপত্র বিষয়ে আদিবাসীদের সতর্ক থাকার কথা শুনিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

আদিবাসী ভারত মহাসভার পক্ষ থেকে সুখচাঁদ সরেন মতাদর্শগত অভিমুখের ওপর জোর দিতে বলেন, আদিবাসীদের যেসব সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠেছে তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলতে হবে। জমির প্রশ্নে তিনি বলেন লীজ নেওয়া এখন আদিবাসীদের জমি হাতানোর কৌশল হয়ে উঠেছে। তিনি আদিবাসীদের সারি বা সারনা নিয়ে ধর্মের লড়াই কমিয়ে জমি ও অন্যান্য অধিকারের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেন, সেই সাথে জাহের গাঢ়কে 'থান' বানানো নিয়ে ক্ষোভকে সঠিক আন্দোলনের দিশায় চালনা করার কথাও বলেন। হুগলি জেলার বিশ্বনাথ সরেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, তারা আদিবাসীদের সব সুযোগ কেড়ে নিতে চাইছে - কোটা তুলে দিতে চাইছে, নির্যাতন বিরোধী আইন তুলে দিতে চাইছে—এবিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এরাজ্যে এস টি সার্টিফিকেট তুলতে ব্লক অফিসে রাত দুটো থেকে লাইন দিতে হচ্ছে। জমির প্রশ্নে তিনি তাঁদের এলাকার একটি ঘটনা বলেন যেখানে আদিবাসীদের কয়েকজন নিজেদের পাওয়া খাস জমি থেকে এলাকার স্কুলের মাঠের জন্য দু কাঠা করে জমি দান করার পরে তাঁদেরই অধিকারের বাকী দশ কাঠা খাস জমি ক্ষমতাসীন দলের কারসাজিতে স্কুল মাঠের বাহানায় কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, প্রতিবাদ করে মার খেয়েও শেষ পর্যন্ত আটকাতে পারেননি।

adivasi 2

 

ঝাড়গ্রামের বিনপুর থেকে আসা শ্যামল প্রতিহার আদিবাসীদের জন্য পশুপালন বা কৃষি সংক্রান্ত যেসমস্ত সরকারী সুযোগ সুবিধা আছে তা নেওয়ার নিয়মকানুন ও পদ্ধতি সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন, তিনি এই বিষয়েই কাজ করে থাকেন। অশোকনগরের যুবক গোবিন্দ টুডু বলেন, এসটি কোটা ও সার্টিফিকেট নিয়ে নেতাদের টাকা খাওয়া চলছে। ডিজিটাল রেশন কার্ড ও খাদ্য সুরক্ষার দুরবস্থার কথা, ১০০ দিনের কাজ করে টাকা না পাওয়ার কথা বলে তিনি আদিবাসীদের 'জুমিত' বা 'ঐক্য'-র ওপর বারবার জোর দেন। বাঁকুড়ার বনগোপালপুরের প্রবীন রাজনৈতিক কর্মী গোবিন্দ হেমব্রম কংগ্রেস আমলের আদিবাসী মহাসভার এক কনভেনশনে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে বলেন, আমাদের সাথে তাঁদের পার্থক্য হল ওরা ভাষণ অনেক দিলেও বাস্তব অধিকারগুলি এভাবে আলোচনা করে না। মমতার সরকার হুল বিদ্রোহের আসল কথা মানুষকে জানতে দিতে চায়না বলেই কেবল নাচগান দিয়ে আড়াল করে দিতে চায়, হুল যে লড়াই-বিপ্লব তা জানতে দেয়না। তিনি আদিবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন মতানৈক্যর কথা তুলে ধরেন। বিশেষত ধর্মের নামকরণ নিয়ে সারি ও সারনা বিভেদকে তিনি শাসকসৃষ্ট বিভেদ বলে অভিহিত করেন এবং সকলকে জানান যে সারি ও সারনা আসলে একই শব্দের দুই প্রকাশ—পুরুষেরা সারি বলে, মহিলারা সারনা। জাহের গাঢ়কে 'থান' বানানোর বিরুদ্ধেও তিনি বলেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্ত বিষয় সাঁওতালি ভাষায় পড়ান হবে নাকি শুধু সাঁওতালি বিষয় পড়ানো হবে তা নিয়ে আদিবাসীদের ঐকমত্য নাই বলেন তিনি। বীরভূমের সুনীল টুডু বোলপুরে রাস্তার ধারে দীর্ঘকাল দখলে থাকা খাস জমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদের ঘটনা বলেন, গ্রামীণ বড়লোকদের হাতে বেনামে অনেক খাস জমি আছে বলে অভিযোগ তোলেন। সারদা আমানত লুটের ফলেও কিছু আদিবাসীরা বিপদে পড়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

শ্রমজীবি পত্রিকার পক্ষ থেকে গোপিবল্লভপুরের শোভন পাল সত্তর দশকে তাঁর ক্লাস সেভেনের সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, যে সেখানকার সেই নকশালপন্থী আন্দোলনে আদিবাসী ও দলিতেরা নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছিল। সরকার তখন 'ঝাড়গ্রাম উন্নয়ন পর্ষদ' গঠন করেছিল। পরবর্তীতে 'পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ' হয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলা হয়েছে কিন্তু আদিবাসীরা অধিকার পাচ্ছে না। তিনি বলেন যে বনাধিকার আইনে প্রাপ্য পাট্টার আবেদন ৭৫% ক্ষেত্রে সরকার অগ্রাহ্য করেছে, বাতিল করেছে। তাঁদের ওখানে ৬,৬০০ জন আবেদনকারীর তথ্য তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করে তিনি বলেন যে যাদেরকে জমির পাট্টা দেওয়াও হয়েছে তাঁদেরও প্রাপ্য থেকে অনেক কম দেওয়া হয়েছে, একাধিক এলাকায় বিচ্ছিন্ন করে কয়েক ডেসিমেল করে জমির পাট্টা দিয়েছে সরকার, সেসবের ক্ষেত্রে এমনকি জমির চৌহদ্দির বা দাগ নম্বরের উল্লেখও নাই। তাছাড়া 'কমিউনিটি ফরেস্ট রাইট' বা সিএফআর তো কিছুই পায়নি। ঝাড়খন্ডে আছে কিন্তু এখানে পায়নি। জলাশয় বা অন্যান্য পরম্পরাগত সম্পদের ওপর যৌথ মালিকানার অধিকার পেতে গেলে নিজেদেরই গ্রাম ভিত্তিক জরিপ করে সেইসব ভূ-সম্পদ দাবি করতে হবে। সংরক্ষণ তথা চাকুরির ক্ষেত্রে তিনি বলেন, সরকারী চাকরির এ-গ্রেডে আদিবাসীর সংখ্যা শূন্য, বি-গ্রেডে নামমাত্র ০.০২% এবং সি ও ডি গ্রেডে যথাক্রমে ৩ শতাংশ ও ৩.৫ শতাংশ। প্রবঞ্চনার আরো দিকগুলি তুলে ধরেন তিনি। জটিল সাবজেক্টের ভেকেন্সিতে এস টি চেয়ে পরে 'যোগ্য ব্যক্তি পাওয়া গেল না' বলে তা জেনেরাল কোটায় ট্রান্সফার করার চক্র সরকারি মন্ত্রক ও স্কুলের যোগসাজসে চলে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বার্ধক্য ভাতার ক্ষেত্রে ৫৫ বছর বয়ঃসীমা ও আদিবাসীদের জন্য বিনামূল্যে সেচ-বিদ্যুৎ দেওয়ার দাবি যুক্ত করতে বলেন। জঙ্গলমহলের চাষাবাদে উন্নতি করতে বিভিন্ন দিক নিয়েও বলেন তিনি। বনগোপালপুরের বাবলু মান্ডি বলেন, আদিবাসীদের সিপিএমও ঠকিয়েছে, এখন টিএমসি-বিজেপিও তাঁদের ভুল দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 'বাঘ কান্ড'-কে তিনি আদিবাসীদের শিকার উৎসব বন্ধ করার চক্রান্ত বলে অভিযোগ করেন এবং আদিবাসী সমাজ নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন যে এই রাষ্ট্র তো হত্যা করে (যেমন ধনঞ্জয়ের ফাঁসি) কিন্তু আদিবাসীদের সমাজে মৃত্যুদন্ড নাই, অপরাধ যাই হোক না কেন হত্যা করা হয় না।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের সমীর ডাক্তার দীর্ঘদিন আদিবাসীদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজেকে 'হড়-দের মধ্যে পড়ি না' বলে উল্লেখ করে বলেন যে আসল প্রশ্নটা হল আদিবাসীদের মধ্য থেকে নেতৃত্বে উঠে আসা, বিশেষত এই সাম্প্রদায়িক আরএসএস-এর উত্থানের বিরুদ্ধে আদিবাসীরাই মূল শক্তি। তিনি ইসলামপুরের পরিস্থিতি টেনে বলেন যে সেখানে আদিবাসীরা কোনওকিছুতেই জড়িত নয় তবু তাঁদেরই পুলিশী হয়রানের মুখে ভয়ার্ত হয়ে থাকতে হচ্ছে। কয়েক দশকে বর্ধমানের কাঁকসা এলাকার জঙ্গল ও জমি থেকে আদিবাসীরা ধীরে ধীরে কোথায় উচ্ছেদ হয়ে গেল বলে বিষ্ময় প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আদিবাসী রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মীদের নিজেদের মধ্যে আরো গভীর যোগাযোগ স্থাপনের উপর জোর দেন। হুগলির নন্দলাল মাহেলি ধনেখালি ব্লকে এস টি সার্টিফিকেটের জন্য তাঁদের আন্দোলনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, কেন সপ্তাহে মাত্র একদিন আবেদনের জন্য ধার্য করে হেনস্থা করা হয়? ভোটার কার্ড বাড়ি বাড়ি গিয়ে করা হলে এসটি কার্ড কেন গ্রামে ক্যাম্প করে করবে না সরকার? তিনি বলেন যে তাঁদের গোটা একটা পাড়া সিপিএম জমানা থেকে বসবাস করে আসা জমিতে এখনও অনেকে আবেদনের পরেও পাট্টা পাননি। আর এখন তো সেই জমিও রাস্তার নামে নিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। নোটিশ ছাড়াই আমাদের জমিতে মাটি কাটতে শুরু করছে, বাধা দিয়েও আটকাতে পারা যাচ্ছেনা। রেশনের নামের তালিকায় কোন প্রকল্পে নাম থাকবে তা ইন্টারনেটের সরকারি সাইটে একরকম দেখাচ্ছে আর খাদ্য দপ্তরের অফিসার আরেকরকম কার্ড দিচ্ছে। প্রতিবাদ করলে বলছে যে যা পাচ্ছ তাতেই সন্তুষ্ট থাকো! এইসব নিয়ে আগামিতে আন্দোলনের পথ দেখানোর আবেদন করেন তিনি।

খেরওয়াল সোসাইটির পক্ষ থেকে গৌর চন্দ্র হেমব্রম তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত প্রসঙ্গ তোলেন। প্রথমেই সভাকক্ষে কতজন আদিবাসী মানুষ উপস্থিত আছে তা হাত তুলিয়ে জরিপ করে নিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু আশি শতাংশের ওপর আদিবাসী মানুষ এই সভাতে আছে তাই একে আদিবাসীদেরই কনভেনশন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যায়। কনভেনশনের শ্লোগানে 'হাসা' শব্দটি বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন যে 'হাসা' সংকীর্ণ অর্থে 'জমি' ও ব্যাপক অর্থে 'দেশ' বোঝায়। দেশ, রাষ্ট্র ও স্বায়ত্ত্বতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছত্তিশগড়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আদিবাসীদের আন্দোলন মাওবাদীরা "হাইজ্যাক" করছে বলেও অভিযোগ তোলেন। তিনি আদিবাসীর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে সংস্কৃতি বা লায়-লাকচারের কথা তোলেন। সংরক্ষণ বা কোটা প্রসঙ্গে বলেন যে এখন কুর্মি ও তেলি খাটোয়াল সহ অনেকে আদিবাসী-ভুক্তির দাবি তুলেছে এবং এমনিতেই বিভিন্ন কারণে সারা দেশে আদিবাসীদের শতকরা সংখ্যা অনেক বেড়েছে কিন্তু সংরক্ষণের শতকরা হার বাড়ায়নি সরকারগুলি। তিনি রাজ্য 'সরকারের সেকশনাল হলিডে' নীতির সমালোচনা করেন, ২টাকার চাল দিয়ে কিনে নেওয়ার মানসিকতাকে সমালোচনা করেন।

সিপিআই(এম এল)-এর রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ সকলকে নিয়ে সকলের কথা মাথায় রেখে আগামি আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ভাক‌রা-নাঙ্গাল প্রকল্পের অভিজ্ঞতা, মধ্য ভারত জুড়ে 'মৌ করিডর' তথা আদিবাসী প্রতিরোধের কথা, আদিবাসীদের সমর্থনে দাঁড়ালে আর্বান নকশাল নাম দিয়ে রাষ্ট্রের আক্রমণ নামিয়ে আনার কথা তুলে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলির স্বরূপ উন্মোচন করেন। হিন্দু রাষ্ট্রের প্রকল্পকে তিনি আদিবাসীদের স্বার্থের প্রত্যক্ষ পরিপন্থি হিসেবে তুলে ধরেন। সবশেষে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম এল) নেতা কনভেনশনের উদ্যোক্তাদের অন্যতম কার্তিক পাল। তিনি বলেন, দেশে আদিবাসীরাই সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত। তিনি একথা স্মরণ করিয়ে দেন যে সিধু, কানু, বিরসারা বারবার সামন্তবাদীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং স্বাধীনতার লড়াই লড়তে গিয়ে কখনই মাথা নত করেনি। রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন আদিবাসীদের মধ্যেও আমাদের পৌঁছাতে হবে। লড়াইটা সমগ্র সমাজটাকেই বদলানোর। ছত্রধর মাহাত কোনও ভুল কাজ করেননি, তবু তাঁকে জেল খাটতে হয়। অত্যাচারের বিরুদ্ধে যেখানেই লড়াই হবে তাকেই আমরা অভিনন্দন জানাব। সমগ্র আদিবাসী সমাজ ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। শাসকেরা নেতাদের কিনে নিতে চায়, কিনে নেয় অনেককে। ফলত সমাজে বিভ্রম তৈরী হয়। আমরা দৃঢ়ভাবে এগোব। সমগ্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা আমাদের দিশা থাকবে।

পরিচালক দলের পক্ষ থেকে সভা সঞ্চালনা করেন সুধীর মুর্মু। সাঁওতাল ভাষিরা মূলত নিজেদের ভাষাতেই বক্তব্য রাখেন, তার সারসংক্ষেপ বাংলাতে বলে দেন কেউ কেউ। প্রতিবেদন ছিল বাংলা ভাষায়। সভার কাজ মূলত দুটি ভাষাতেই চলে। নবগঠিত 'আদিবাসী সংগ্রামী মঞ্চ'-এর কাউন্সিল মেম্বাররা ও সমগ্র সভা কনভেনশনে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে কনভেনশন সমাপ্ত করে।

খণ্ড-25
সংখ্যা-31