২৭ সেপ্টেম্বর সিপিআই(এম এল) পাটনার গান্ধী ময়দানে বিশাল ও দারুণ সমাবেশ করে। এই বছরের পাঞ্জাবের মানসাতে পার্টির দশম কংগ্রেসে দেশজুড়ে বিজেপি ও সংঘ পরিবারের ফ্যাসিবাদী উত্থানকে চিহ্নিত করে সাম্প্রদায়িক কর্পোরেট ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করার জন্য মেহনতী মানুষের সমস্ত অংশকে এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে বিশেষ করে দলিত, মহিলা ও সংখ্যালঘুদের ও ছাত্র-যুবদের ব্যাপকভাবে সংগঠিত করার আহ্বান দিয়েছিল। এর সাথে বিজেপি এবং সংঘ বিরোধী শক্তিকে বিশেষ করে সমাজবাদী ধারার শক্তিকেও এই সংগ্রামে সামিল করার সংকল্প নিয়েছিল।
এরপর থেকে বিহারে বড় আকারের অভিযান ও আন্দোলন লাগাতারভাবে হয়ে চলেছে। প্রথমে রাজ্যজুড়ে 'জন অধিকার যাত্রা' সংগঠিত হয় এর সমাপ্তি কর্মসূচী হিসাবে মে দিবস উপলক্ষ্যে পাটনার গান্ধী ময়দানে 'জন অধিকার মহাসম্মেলন' আয়োজিত করা হয়। মজফ্ফরপুরে সেন্টার হোমে অল্প বয়সী মেয়েদের উপর বর্বর যৌন উৎপীড়নের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম এল)-এর মহিলা সংগঠন আইপোয়া অন্যান্য অনেক মহিলা সংগঠনের সাথে মিলে এই যৌন উৎপীড়নে সরকারি রক্ষণাবেক্ষণের মুখোশ খুলতে অনেক কার্যক্রম চালিয়ে শেষে বিহার বনধও করা হয়, যাতে পার্টি সরাসরি যুক্ত হয়ে উদ্যোগ নেয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্পোরেটমুখী নীতির কারণে পেট্রোল, ডিজেল, এলপিজি-র দাম লাগাতার বেড়ে চলেছে, তার সাথে ক্রমশ টাকার অবমূল্যায়ন হয়ে চলেছে, এসবের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ডাকা 'ভারত বনধে' সিপিআই(এম এল) বিহারের বুকে বড় ভূমিকা নিয়েছে।
ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অভিযানে সিপিআই(এম এল) বিজেপি হঠাও-গণতন্ত্র বাঁচাও বিশাল সমাবেশ সংগঠিত করে। এর প্রস্তুতিতে পার্টির হাজার হাজার কর্মীবাহিনী গত আড়াই মাস ধরে ঘরে ঘরে সম্পর্ক অভিযান চালায়, ব্যাপকভ প্রচার চালায়। যার দূর্দান্ত সফলতা এই সমাবেশে দেখা গেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই সমাবেশে অংশ নিতে দলে দলে মানুষ পাটনা পৌঁছাতে থাকে, আর দিন শেষ হতে হতে ময়দানে লাগানে সব প্যাণ্ডেল ভরে যায়, সারা রাত এবং ২৭ তারিখ সভা শুরু সময় পর্যন্ত জনগণের আসতে থাকে। গান্ধী ময়দানের বড় অংশই লাল ঝাণ্ডায় ভরে গিয়েছিল। সমাবেশে সিপিআই(এম) এবং সিপিআই সমেত অন্য বাম দল এবং আরজেডি, লোক জনশক্তি দলকেও আমন্ত্রিত করা হয়। দলিত আন্দোলনের অতি পরিচিত মুখ জিগ্নেশ মেভানী অন্য কার্যক্রম থাকাতে আসতে না পেরে ফোনে নিজের বার্তা পাঠান।
কড়া রৌদ্রের মধ্যে ঠিক বেলা ১১টার সময় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে প্রায় এক ঘন্টা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চলতে থাকে। পার্টির নেতা কে ডি যাদবের সভাপতিত্বে ও পলিটব্যুরো সদস্য ধীরেন্দ্র ঝা-র সঞ্চালনায় সভার কাজ শুরু হয়। সর্বপ্রথম পার্টির প্রয়াত নেতাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার জন্য পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এবং অন্যান্য বরিষ্ঠ নেতাদের মঞ্চে আমন্ত্রিত করা হয়, দিল্লী ও অন্য প্রতিবেশী রাজ্য থেকে আগত পার্টির নেতা, রাজ্য কমিটি সদস্য সমকালীন লোকযুদ্ধের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা, ইনসাফ মঞ্চের নেতগণ, ভ্রাতৃত্বমূলক বামপন্থী দলের নেতারা, রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও লোক জনশক্তি দলের নেতারা এবং অন্য বিশিষ্ট অতিথিরা মঞ্চে উপবিষ্ট হন।
পার্টির বিহার রাজ্য সম্পাদক কুণাল সমাবেশে আগত সকলকে স্বাগত জানিয়ে এই সমাবেশ আয়োজনের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, দেশে আজ ফ্যাসিবাদী হামলা তীব্র হয়েছে, ফলে দেশ অভূতপূর্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, ক্ষমতার মসনদে বড় বড় দুর্নীতি হয়ে চলেছে, আর সব সংকটের বোঝা জনতার ঘাড়ে চাপানোর জন্য মেহনতী মানুষের সবার উপর হামলা চালাচ্ছে, গণতন্ত্র ছিন্নভিন্ন হচ্ছে। এই জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এই হামলার মোকাবিলা করতে আমাদের বামপন্থী ঐক্যের ভিত্তিতে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্য গড়ে তুলে ব্যাপক সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। এই সমাবেশের মূল কথা এটাই।
প্রথম বক্তা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য যুব নেতা মনোজ মঞ্জিল বলেন, ন্যায়ের সাথে বিকাশ, ভূমিহীনদের জমি ও নতুন বিহারের শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসা নীতীশ সরকার ভূমি সংস্কারের রিপোর্ট ও সুপারিশগুলোকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। শরাববন্দী আইন লাগু করে শত শত গরিব মানুষকে জেলে পাঠিয়েছে। গরিবদের জমি থেকে উৎখাত করছে। রোজগার খতম হয়ে গেছে। যুবকরা কাজের জন্য হাহাকার করছে। এসবের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম এল) লড়াই চালাচ্ছে, বিজেপির গুণ্ডাদের যোগ্য প্রতিরোধ করছে। ভগৎ সিং-আম্বেদকরেরর স্বপ্নের ভারত নির্মাণের জন্য পার্টির যুব শক্তি আরো বেশী সংখ্যায় সংগঠিত হচ্ছে যা এই সমস্ত অশুভ শক্তিকে উচ্ছেদ করবে। সমাবেশের বিশেষ অতিথি জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি আইসা নেতা এন সাই বালাজী বিপ্লবী মেজাজে বলেন, জেএনইউ থেকে ছাত্ররা এবিভিপি এবং সংঘী শক্তিকে উচ্ছেদ করেছে। এখন আমাদের বিহার থেকে, পুরো দেশ থেকে বিজেপিকে উচ্ছেদ করতে হবে। সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির বিহার সম্পাদিকা শশী যাদব বলেন, সমতার সংরক্ষণে বালিকা সুধার গৃহে বালিকাদের যৌন উৎপীড়ন চলছে। প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশে কার্যরত লক্ষ লক্ষ মিড-ডে মিলের কর্মীদের জন্য কোন আর্থিক সঙ্গতির ঘোষণা করেন না। স্কীম ওয়ার্কারদের ন্যূনতম ১৮ হাজার টাকা মাসিক বেতন না দিলে কেন্দ্রের মোদী সকার ও বিহারের নীতীশ সরকারকে ক্ষমতা থেকে মানুষ উচ্ছেদ করবে। পার্টির যুব নেতা সেলিম বলেন, দেশ আজ একদিকে বিজেপি-আরএসএস দ্বারা সংবিধানকে শেষ করা, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা, সমস্ত অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েম করার রাস্তা দেখাচ্ছে, অন্যদিকে গণতন্ত্র, সংবিধান ও অধিকার রক্ষার প্রশ্নে রাস্তার লড়াই চলছে। দেশে আজ অঘোষিত জরুরী অবস্থা জারী হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে, ফেসবুকে কিছু লিখলে, যু্বকদের দেশ বিরোধী তকমা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদী সুরকে চুপ করাতে গৌরী লঙ্কেশের মতো বিশিষ্টজনদের হত্যা করা হচ্ছে। গো-রক্ষার নামে এখনও পর্যন্ত ৯০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পরিবর্তন ও অধিকারের জন্য লাল ঝাণ্ডার নেতৃত্বে বড় বড় লড়াই সংগঠিত করতে হবে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক অবধেশ কুমার এবং সিপিআই রাজ্য সম্পাদক সত্য নারায়ণ সিং সমাবেশকে অভিনন্দন জানিয়ে ধন্যবাদ দেন। তারা বলেন, মোদী লুট-মিথ্যার সরকার চালাচ্ছে এবং দেশের জনতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। কৃষি সংকটে আজ কৃষক আত্মহত্যা করছে। কৃষকদের লাভজনক নায্যমূল্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এই দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর মন্দসৌরে গুলি চালিয়ে ৬ জন কৃষককে হত্যা করে। কৃষি ঋণ মকুব হচ্ছে না, কিন্তু কর্পোরেটদের লক্ষ কোটি টাকা কর ছাড়া করে দেওয়া হবে। পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস সমেত সমস্ত জরুরী জিনিসের দাম ও পরিষেবার নামে লাগাতার বেড়ে চলেছ। গোটা দেশের কৃষক এর প্রতিবাদে রাস্তায় ও দিল্লীর রাজপথে মার্চ করছেন। ছাত্র-যুবকরা রোজগারের জন্য লড়াই করছেন। মহিলা, দলিত ও সংখ্যালঘুরা নিজেদের সুরক্ষা ও অধিকারের জন্য নতুন করে সংগঠিত হচ্ছেন। একদিকে আন্দোলনরত জনতার উপর হামলা তীব্র করছে মোদী সরকার, মতো বিরোধ ও বিরোধের আওয়াজের গলা টিপছে, অন্যদিকে দেশের ব্যাঙ্কের হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সুবিধা করে দিচ্ছে। এই জন্য নেপালের কমিউনিস্টদের থেকে শিক্ষা নিয়ে এখানেও আমাদের মজবুত বামপন্থী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং সমস্ত গণতান্ত্রিক বিরোধী পক্ষের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বড় বড় আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। বিহার থেকে জেডি(ইউ)-বিজেপি সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে হবে।
বিহার বিধানসভায় পার্টির বিধায়ক দলের নেতা মেহবুব আলম বলেন, বিজেপি ভয়মুক্ত ভারতের শ্লোগান দিয়েছিল, কিন্তু আজ মুসলিম ও দলিত জনতা ভয় আর আতঙ্কের পরিবেশে বাস করছে। 'বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও' শ্লোগান আজ তামাশায় পরিণত হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী মুজফ্ফরপুর শেল্টর হোমে যৌন উৎপীড়নে সরাসরি যুক্ত। রাস্তার আন্দোলন ও বিধানসভার ভেতর আওয়াজ ওঠাতে তবেই সরকারের ঘুম ভাঙ্গে। বিহার-আসাম-পশ্চিমবঙ্গ লম্বা সময় ধরে থাকা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশকারী বলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। আমরা সবাই মিলে বিজেপি মুক্ত বিহার ও ভারতবর্ষ নির্মাণ করব। পার্টির নেত্রী ও মহিলা সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদিকা কবিতা কৃষ্ণাণ বলেন, ভগৎ সিং-এর ১১১তম জন্মদিনের পূর্ব সন্ধ্যায় এই সমাবেশ নতুন আশা জাগাচ্ছে। আজ দিল্লী-পাটনার সরকারকে কোন প্রশ্ন করলে জবাব মিলবে 'শহুরে নকশাল' তকমা অথবা পাকিস্তানে চলে যাওয়ার হুমকি। আরএসএস এমন পরিবেশ তৈরী করেছে যেখানে মব লিঞ্চিং-এর ঘটনা ঘটছে আর জয়ন্ত সিনহার মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লিঞ্চিং করা দোষীদের মালা পরাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করা থেকে সব ধরনের আক্রমণ করছেন। এই পরিস্থিতিতে আমাদের ক্ষমতা-প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রশ্ন করতে হবে, জবাব চাইতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য, ভগৎ সিং-এর স্বপ্নের ভারত গড়ার জন্য। বিহারের প্রাক্তন বিধানসভা অধ্যক্ষ ও লোক জনশক্তি দলের নেতা উদয় নারায়ণ চৌধুরী বলেন, আম্বেদকরের বিচারকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য সিপিআই(এম এল)-কে ধন্যবাদ। আমাদের 'রাফেল চোর, গদ্দী ছোড়' শ্লোগান চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বিহারে মদ নিষিদ্ধ করার নাম করে হাজার হাজার গরিবকে জেলে পুরে রেখেছে, গরিবদের ৫০ হাজার টাকা নয়, জমি দিতে হবে। নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা শিবচন্দ্র রাম সমাবেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সিপিআই(এম এল) এই সমাবেশে আমাদের আমন্ত্রণ করে সামাজিক ন্যায়ের লড়াইএয় নতুন এক দিক জুড়েছে। বিহারে আজ রক্ষক ভক্ষক হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এসসি/এসটি আইন ও সংরক্ষণকে খতম করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন করে ও সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের হস্তক্ষেপে একে আটকানো গেছে। আমরা বেসরকারি ক্ষেত্রেও সংরক্ষণ চাই, গরিবরা রেশন পাচ্ছে না, জমি পাচ্ছে না, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি, মহিলা উৎপীড়ন বেড়েই চলেছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসবের বিরুদ্ধে লড়তে হবে ও এই শাসনকে উচ্ছেদ করতে হবে।
পার্টির প্রাক্তন সাংসদ ও সভাপতি রামেশ্বর প্রসাদ বলেন, বিহার কাঙাল হচ্ছে—গরিব বাচ্ছা ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে, মহিলা উৎপীড়ন চরমে, অপরাধীরা অবাধে বিচরণ করছে, আর রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তাদের অনুনয়-বিনয় করছেন। সংবিধান আজ বিপদে, বলা লেখার উপর তলোয়ার চলছে। তাই বামপন্থী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ থেকে লুটেরা বিজেপিকে তাড়াতে হবে।
পার্টির মহিলা সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদিকা মীনা তেওয়ারী বিহারে মহিলাদের লম্বা লড়াইয়ের উল্লেখ করে বলেন, অনেক মহিলা সংগঠন মিলে মুজফ্ফরপুরের ঘটনাকে সামনে এনেছে। তারপরেই সরকারের ঘুম ভেঙ্গেছে। মহিলারা এই লড়াইকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেত সংকল্পবদ্ধ। আসল অপরাধীদের সাজা দিতে হবেই। কর্পোরেটদের লক্ষ কোটি টাকা কর ছাড় না দিয়ে সেই টাকায় পঞ্চায়েতে হাসপাতাল খুলে ডাক্তার, নার্স, ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে। বিজেপির মত কালো শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিউগল বেজে গেছে এবং মহিলারাও নিজেদের সম্মান, সুরক্ষা ও অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিয়েছে।
সারা ভারত কৃষক মহাসভার জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাজারাম সিং বলেন, সুপ্রিম কোর্টের চার জর্জও বলেছেন, 'গণতন্ত্র আজ বিপদে', পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, সরকার মূক দর্শক। কৃষকদের লাভজনক মূল্য দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ সরকার লাগু করছে না। নোট বন্দীতে দেশের কালো টাকা সাদা হয়ে গেছে। ছোট ছোট উদ্যোগ ধ্বংস হয়েছে। চাষ আবাদ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব নিয়ে আজ বড় লড়াই লড়তে হবে।
সমাবেশের শেষ বক্তা পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে আমরা নরেন্দ্র মোদীর বিদায়ের বার্তা দিতে এসেছি। নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, পেট্রোল-ডিজেল সস্তা হবে। কিন্তু এর মূল্য আজ ৯০ টাকা ও ৮০ টাকা হয়ে গেছে। টাকা তো পাতালে যাচ্ছে। নতুন রাফেল চুক্তির মাধ্যমে বায়ুসেনাকে ও হ্যালকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আর এর মূল্যে ঋণে ডুবে থাকা অনিল আম্বানিকে ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকার ঠিকা পাইয়ে দেওয়া হল। ব্যাঙ্ক শেষ করে দেওয়া হল। প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা এনপিএ হয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে শেঠরা দেশ থেকে পালাচ্ছে। মন্দিরে, শেল্টার হোমে, হস্টেলে কন্যাদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। এইজন্য আজ যদি দেশকে বাঁচাতে হয় তবে মোদী সরকারকে শেষ করতে হবে। লিঞ্চিং এতো বেড়ে গেছে আজ সবাই এই শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছে। এমন কি অটলজীর শ্রদ্ধাঞ্জলি সভায় গিয়ে স্বামী অগ্নিবেশকে লিঞ্চিং-এর শিকার হতে হয়।
দীপঙ্কর বলেন, ২০১৪-তে মোদী ধোঁকা দিয়েছেন এবং বিহারে নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ২০১৫-তে বিজেপি বিরোধী জনাদেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। 'মহাগাটবন্ধন' ভেঙ্গে যায় কারণ এটা কোনো রাজনৈতিক-মতাদর্শ বুনিয়াদের উপর তৈরি হয়নি। ওটা একটা সুবিধাবাদী গাটবন্ধন ছিলো। বিজেপির বিরুদ্ধে আজও একটা গাটবন্ধন প্রয়োজন। এই জোট কেমন হবে তা এই সমাবেশের মধ্য থেকে খুঁজতে এসেছি। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি কমিউনিস্ট-সোশ্যালিস্টদের মধ্যে আছে। বিজেপির বিরুদ্ধে এই দুই ধারার ঐক্য হতে পারে? আমরা ভগৎ সিং-আম্বেদকরের রাস্তায় চলতে চাইছি। আম্বেদকর বলেছিলেন, সংরক্ষণ তো তাৎক্ষণিক একটা মলম, আসল ব্যাপার হল জাতির নির্মূলীকরণ। উনি বলেছিলেন, 'হিন্দু রাষ্ট্র' ভারতের জন্য সবথেকে বড় বিপর্যয়। আমরা কি এই বিপর্যয়কে রুখতে ভগৎ সিং ও আম্বেদকরের অনুগামীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কি লড়তে পারব? আমাদের এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। আমরা গাটবন্ধনের পক্ষে। কিন্তু গরিব মেহনতী মানুষের মান-সম্মান-স্বাভিমান বিসর্জন দেওয়ার বিনিময়ে নিশ্চয় নয়। রাম নরেশ রাম, চন্দু এবং মহেন্দ্র সিং-এর স্বপ্নকে আমরা এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না।
দীপঙ্কর আরও বলেন, কৃষক বিরোধী ভূমি অধিগ্রহণ (সংশোধন) অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে দেশের কৃষকরা লড়াই করে এই আইন তৈরি হওয়া আটকে দেয়, এরপর ঋণ মকুব এবং লাভজনক সহায়ক মূল্যের জন্য কৃষকরা সংযুক্ত মঞ্চের মাধ্যমে বড় লড়াই শুরু করে দিয়েছেন। ২৮-৩০ নভেম্বর কৃষকদের ঐতিহাসিক 'দিল্লী চলো'' অভিযান হবে। ট্রেড ইউনিয়নগুলো সর্বভারতীয় হরতালের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনও আমাদের কাছে একটা লড়াই। নির্বাচন নিয়ে আমরা বিরোধী সব দলের সঙ্গেই কথা বলব। কিন্তু গরিব-মেহনতি মানুষের অধিকার ও সম্মানের প্রশ্নে কারুর সাথেই সমঝেতা করব না। বিগত ছ-মাস ধরে আমরা বিরাট অভিযানের মধ্যে থেকেছি। আগামীতে আরো বড় দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সামনে আসতে হবে।
সবার শেষ সন্তোষ ঝা রাজনৈতিক প্রস্তাব পাঠ করেন যা জনতা করতালি দিয়ে সমর্থন জানায়।
(গৃহীত প্রস্তাব প্রকাশিত হবে পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যায়)