প্রকৃতির রুদ্ররোষে আবিশ্ব
in-the-light-of-nature

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ক্রমেই বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছচ্ছে। ৩ জুলাই ২০২৩ থেকে যে সপ্তাহটা শুরু হয়, সেই সপ্তাহে ভিন্ন ভিন্ন তিন দিনে বৈশ্বিক তাপমাত্রার দৈনিক গড় এতো বেশি ছিল, যে আজ পর্যন্ত তা বিশ্বে কখনও দেখা যায়নি। এই প্রথম, ৩ জুলাই ২০২৩, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি পার করল — যবে থেকে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরু হয়, তবে থেকে এই তাপমাত্রা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি! আরও চিন্তায় ফেলে ঠিক তার পরের দিন মঙ্গলবার, ৪ জুলাই’এ এই তাপমাত্রা আরও বাড়ল। আর ঠিক একদিন পর, বৃহষ্পতিবার, ৬ জুলাই বৈশ্বিক তাপমাত্রা ছুঁলো তার সর্বোচ্চ শিখরে। এক প্রবীন আবহাওয়া বিজ্ঞানী বলেছেন, “বিগত ১ লক্ষ বছরের মধ্যে এই তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ”।

অনেক বিজ্ঞানী বেশ কয়েক বছর যাবত লাগাতার বৈশ্বিক উষ্ণায়নের যে বিপদের সংকেত দিয়ে আসছিলেন, এবার তার সাক্ষাৎ প্রমাণ মিলল। এই বছরটি যে উষ্ণতম বছর হবে, তার পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল। কিন্তু গোটা বিশ্ব যে এত দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে তা আগে কল্পনাও করা যায়নি। এই উষ্ণায়নের হাত ধরে আবির্ভূত এল নিনো বর্তমান আবহাওয়া সংকটকে আরও গতি প্রদান করে আরও বেশি উষ্ণ করে তুলেছে। অতিবৃষ্টি, মাঝে মধ্যেই দু’কূল প্লাবী বন্যা ও তীব্র খরা, বিধ্বংসী অরণ্য ধ্বংসকারী দাবানল, বিশ্বের নানা প্রান্তে একই সময়ে ঘটে চলেছে। সাময়িক কিছু পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ঠ সরকারগুলো নিচ্ছে বটে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কোনো পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও দক্ষিণাঞ্চল এই জুন মাসে তীব্রতম তাপপ্রবাহ ও তার সাথে আদ্রতার কবলে পড়ে। ক্রমে বেড়ে চলা তাপমাত্রায় মেক্সিকোতে মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ১১২ জন মানুষের মৃত্যু হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবল বৃষ্টিতে বহু মানুষের মৃত্যু হল। চীনও তীব্রতম দাবদাহের শিকার হয়, সবচেয়ে বেশি দগ্ধ দিনের সম্মুখীন হল চীন, এ’বছরে। ১৮৮৪ থেকে যুক্তরাজ্য তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা শুরু করে। দেখা যাচ্ছে, আগেকার গড় তাপমাত্রা ০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে টপকে গিয়ে এই জুন মাসে তাপমাত্রার গড় হল ১৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে, রাজধানী দিল্লী বন্যার কবলে। ঘুমিয়ে থাকা যমুনা পঁয়তাল্লিশ বছরের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে বিপদসীমার তিন মিটার ওপর দিয়ে বইছে। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন, লালকেল্লা, সুপ্রিম কোর্ট জলমগ্ন। সমস্ত স্কুল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। বিভিন্ন অফিস বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে। হিমাচল ও উত্তরাখন্ডে বৃষ্টি জনিত বিপর্যয় যে মাত্রায় গেছে তা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। হিমাচলের বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের পেশ করা তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৭ থেকে ২০২২’র মধ্যে প্রায় দু’হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন শুধুমাত্র বৃষ্টি বিপর্যয়ের কারণে। আমরা ভুলে যাইনি, বেশ কয়েকমাসে তুমুল বৃষ্টিতে ভারতের সিলিকন ভ্যালি হিসাবে পরিচিত বেঙ্গালুরুর অশেষ দুর্ভোগের কথা। অতিবৃষ্টিতে জলমগ্ন শহরের উচ্চবিত্ত আবাসনগুলোর বাসিন্দাদের আশ্রয় নিতে হয়েছিল হোটেলে।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অতি মুনাফা লাভের আশায় উন্মত্তের মতো যত্রতত্র বহুতল নির্মাণ, নিকাশী ব্যবস্থার প্রতি বিন্দুমাত্র নজর না দেওয়া — আজ এনে দাঁড় করিয়েছে ধ্বংসের কিনারে।

খণ্ড-30
সংখ্যা-24