খবরা-খবর
ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া বাঁকুড়ায়
response-to-the-strike

১০ মার্চ বাঁকুড়া জেলা জুড়ে ধর্মঘটের প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। সবথেকে অবাক হতে হয় তৃণমূল কংগ্রেসের আধিপত্য থাকা ব্লকগুলিতে এবং খাতড়া মহকুমাতেও ধর্মঘটের প্রভাব দেখলে। বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও সরকারী দফতরগুলিতে এদিন কর্মীরা খুবই অল্প সংখ্যায় উপস্থিত হন।

বাঁকুড়া শহরে এআইসিসিটিইউ-র পক্ষ থেকে সিটু, কো-অর্ডিনেসন কমিটি, ১২ই জুলাই কমিটি ও অন্যান্য কয়েকটি বাম শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের সাথে একাত্ম হয়েই এই দিন সকাল থেকে মিছিল, পিকেটিং ও অবস্থানে সামিল হয়েছিলাম আমরা। এখানে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক দপ্তরগুলির চত্বরে ইতিপূর্বে আমরা হাতে লেখা পোষ্টারের মাধ্যমে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা মেটানোর দাবি তুলে ধরি এবং ধর্মঘটের দিন সকাল থেকেই অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণ ও সমস্ত শূন্যপদে স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ – এই দুটি দাবীতে অনর্গল স্লোগান দেওয়া হয়। ফলস্বরূপ শুধু ডিএ-র দাবিতে যে বনধ নয় তা মানুষকে কিছুটা হলেও বোঝানো গেছে। সর্বোপরি অন্যসব সংগঠনও আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত ঐ দুটি দাবিকে তুলে ধরে স্লোগান দিতে শুরু করে।

বিষ্ণুপুর মহকুমাতেও এইদিন ধর্মঘটের প্রভাব ভালো ছিল। পৌরসভাতে আমাদের নিজস্ব ইউনিয়নের বলে আমরা ধর্মঘট সফল করতে সক্ষম হই। সকাল থেকেই পৌরসভার গেটের সামনে এই দিন সাফাইকর্মীরা ঝুড়ি-কোদাল-ঝাঁটা রেখে শুরু করেন অবস্থান বিক্ষোভ। পিকেটিং চলে বেলা ১১ টা পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ৭-৮ টা ওয়ার্ডে জোর করে ভয় ও হুমকি দিয়ে কাজ চালু করার চেষ্টা করে তৃণমূলের চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলররা। তবু তাদের এই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে প্রায় দুই শতাধিক সাফাইকর্মী মিছিল করে সারা শহরজুড়ে। নিজ দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে সুসজ্জিত এই মিছিলে নেতৃত্ব প্রদান করেন প্রায় শ'খানেক মহিলা। প্রশ্ন করা হয় : মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত ৩৭৬ টাকা ন্যুনতম মজুরি চালু করতে চেয়ারম্যান সাহেব যদি ব্যর্থ হন তবে অবিলম্বে তাঁর শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জনগণ তথা আপামর বিষ্ণুপুরবাসীর কাছে এই ‘ভাঁড়ার ফাঁকা’ হওয়ার হিসাব তুলে ধরা উচিৎ, অন্যথা পদত্যাগ করা উচিৎ। বিষ্ণুপুর পৌরসভা সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সম্পাদক ও এআইসিসিটিইউ নেতা দিলবার খান বলেন, “আমাদের বেতন আর চেয়ারম্যানকে মেটাতে হবেক নাই, বরং বিষ্ণুপুরের পরিশ্রমী জনগণের ট্যাক্সের টাকার ফান্ড লুট হচ্ছে কি না তার হিসাব চাইছে বিষ্ণুপুরের মানুষ ও আমাদের সাফাইকর্মীরা”।

নিজেদের বলের জোরে পৌরসভাতে ধর্মঘটকে সফল করার ফলে এই দিন পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত একটি কর্মীসভা করতে বিষ্ণুপুরে সিপিএম-এর মহম্মদ সেলিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র এলে তাঁরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন এবং ধর্মঘটকে সফল করার জন্য সাফাইকর্মীদের দাবিকে সমর্থন করতে বাধ্য হন। বিষ্ণুপুরের সাফাইকর্মীদের এই সংগ্রাম মূলত মর্যাদা আদায়ের লড়াই। শুধু নিছক বেতনের দাবি নয়, সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার সাংবিধানিক অধিকারকে ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই। তায় ধর্মঘটের তেজ এতোটা চড়া ছিল যে মিছিল চলাকালীন আমরা বিষ্ণুপুর সাব-ডিভিশনাল কোর্টের কর্মচারীদের প্রশংসা পায় এবং তিনটি স্থানে ১৫ মিনিট করে অবরোধ করে বক্তব্য পেশ করা হয় ও রসিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে বাস থামিয়ে অবরোধও করা হয় বেলা ১২.৩০ টা নাগাদ।

সর্বশেষ এক মহিলা সাফাইকর্মীর বক্তব্য তুলে ধরতেই হয়, তিনি হলেন শিশু মাদ্রাজি। ইনি প্রায় ৪৫ বছরের কাছাকাছি কাজ করে হালে অবসর নিয়েছেন। দুই ছেলে সাফাই কাজ করতে করতে মারা গেছে, দুই বৌমা আছেন। তাঁদের একজন কাজ পেয়েছে মাত্র ৫-৬ হাজার টাকার। নাতনিদের টিউশনি খরচ ওঠাতে হিমশিম খাচ্ছে। উনি এখনো পেনশন পাচ্ছেন না, অথচ তিনি পার্মানেন্ট ছিলেন। তাঁর সোজা কথা, “জান আছে একটা, মরি একবার মরবো, তবু অধিকার দিবি নাই? কেনে দিবি নাই? অধিকার লিবো তবে মরবো। আন্দোলনে আছি আন্দোলনে থাকবো তবু অধিকার ছাড়বো নাই, তাতে মরতে হয় মরবো কোনো ভয় নাই।”

- ফারহান

খণ্ড-30
সংখ্যা-6