শিশু মৃত্যুর মিছিল দেউলিয়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দেখিয়ে দিল
exposed-the-bankrupt-health-system

একের পর এক এক শিশুমৃত্যুর সাক্ষী থাকল আমাদের রাজ্য। বেসরকারি সূত্রের খবর, গত ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে মৃত শিশুর সংখ্যা ১০৩, যাদের মধ্যে অনেকেই অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল। এদিকে, রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, এখন পর্যন্ত ১৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩ জনেরই নাকি কো-মর্বিডিটি ছিল! সেই কো-মর্বিডিটির শব্দবন্ধ – যা দিয়ে মৃত্যুর বাড়তে থাকা সংখ্যাকে অনায়াসেই ব্যাখ্যা করা যায় স্বাস্থ্য আমলাদের তরফ থেকে।

মর্মান্তিক এই শিশুমৃত্যুর অনন্ত মিছিল যখন রাজ্যবাসীকে ক্ষুব্ধ, যন্ত্রণাবিদ্ধ করে তুলছে, সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানালেন যে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই, পাঁচ হাজার শয্যা ও ছ’শো ডাক্তার নিয়ে রাজ্য সরকার এই বিপদ মোকাবিলায় নাকি প্রস্তুত! এদিকে, প্রতিদিন সংবাদে প্রকাশ, সঙ্কটাপন্ন, শ্বাসকষ্টে কাতর শিশুদের অভিভাবকেরা হন্যে হয়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন একের পর এক হাসপাতালে, জেলা হাসপাতালগুলোর পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ও স্পেশালিষ্ট ডাক্তার – স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় রেফার করে দেওয়া হচ্ছে কলকাতার বি সি রায় হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ফলে, যা হবার তাই হল – হাতে গোনা কয়েকটি বিশেষ শিশু হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়কে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজ্যের শিশু চিকিৎসা পরিকাঠামো। ব্লকে ব্লকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জেলা হাসপাতালগুলোকে সমস্ত দিক থেকে পরিপুষ্ট ও মজবুত করার পরিবর্তে কয়েকটি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের কুমির ছানা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতা নির্ভরতা থেকে আজও রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা মুক্ত হতে পারল না।

কোভিড অতিমারী চোখে আঙুল তুলে দেখিয়েছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম দেউলিয়েপনা। তারপরও বারে বারে মশা বাহিত রোগের দাপট রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার বিরাট বিরাট ফাঁক ফোকরগুলো নিয়মিত ব্যবধানে বেআব্রু করে দেয়। গত বছরই আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ডেঙ্গিতে কত মানুষের মৃত্যু। ক্ষমতার অলিন্দে যারা রয়েছেন, তারা কোনোদিনই দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিহিত সমস্যার পাকাপোক্ত সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিল না। তার বদলে নানা সময়ে পরিসংখ্যানের ধুম্রজালে আসল সমস্যাকেই ঠেলে দিয়েছে পেছনে। ফি-বছর কোনো না কোনো রোগের দাপটে নাজেহাল হতে দেখা যায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সমস্যা সমাধানের জন্য আস্থাবর্ধক কোনো পদক্ষেপ ও নীতি প্রণয়ন দেখা যাচ্ছে না। রাজ্য বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে সন্তোষজনক বিনিয়োগ নেই। রোগ প্রতিরোধ, গণ স্বাস্থ্য সচেতনতা, রাজ্য পুরসভা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা – উপর      থেকে নীচ পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে মজবুত করার কোনো নীতি আজ পর্যন্ত দেখা গেল না। বারবার দেখা যাচ্ছে, কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে প্রশাসনিক পদ্ধতিতে নিছক প্রয়োজনবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার তার মোকাবিলার চেষ্টা করছে, কিন্তু তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না। শিশুরা ভাইরাসের সংক্রমণে বারবার বিপন্নতার সম্মুখীন হবে, এই সতর্কবার্তা কোভিড অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দিয়ে আসছেন। সেই বিপদ দেরিতে এলেও যথাযথ আগাম ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে এতগুলো শিশু মৃত্যু রোধ করা গেল না।

রাজ্যের সমগ্র সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা এখন অস্তাচলের পথে। ভগ্নপ্রায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধুঁকছে। দেশের সর্বাপেক্ষা ঋণ গ্রস্থ রাজ্য আমাদের এই বাংলা কর্মহীনতা, বেকারত্বের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে মরছে। সামাজিক প্রকল্প খাতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে এই সরকার কেড়ে নিচ্ছে মানুষের একান্ত মজুরির অধিকার। সামাজিক সুরক্ষা খাতের অধিকার।

বিপন্ন এই বাংলায় বামপন্থীদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

খণ্ড-30
সংখ্যা-5