১৫ মার্চ ২০২৩, এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত ‘শিবদাসপুর ইটভাটা মজদুর ইউনিয়ন’ এবং ‘শিবদাসপুর ব্রীক ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’এর সাথে দ্বিপাক্ষিক মজুরি চুক্তি সম্পন্ন হল। মিছিল, মিটিং, ডেপুটেশন ও কয়েক দফা আলোচনার পর ৪ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়াও জ্বালানির জন্যে সপ্তাহে ১৫ টাকা বেড়েছে। এই মজুরি চুক্তির মেয়াদ এক বছর। বর্তমানে যে ৮টা ইটভাটা চালু আছে, সেই ভাটার সব শ্রমিকরাই এই চুক্তির আওতায় আসবেন। মজুরি নির্ধারণ করতে দ্বিপাক্ষিক মিটিং’এ উপস্থিত ছিলেন এআইসিসিটিইউ জেলা সম্পাদক নবেন্দু দাশগুপ্ত, মজদুর ইউনিয়ন সম্পাদক সেখ আব্দুল মোফেজ, সেখ সওকত আলি, নারায়ণ রায়, রামু সোরেন, স্নেহাশিস চক্রবর্তী প্রমুখ। ইউনিয়ন প্রতিনিধি এবং শিবদাসপুর ব্রীক ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নারায়ণ সিং ও অশোক সিং চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
নৈহাটি শিবদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে ১৬টা ইটভাটা ছিল, এখন ৮টা ইটভাটা চালু আছে। নোটবন্দী, জিএসটি এবং ন্যাশানাল গ্রীন ট্রাইব্যুনালের ভাটা সংক্রান্ত কয়েকটি নির্দেশিকা ইটভাটায় সঙ্কটকে গভীর করে তুলেছে। এছাড়াও আছে মাটির অভাব। ইটের উৎপাদন খরচ বহুগুণ বেড়েছে, জিএসটি বেড়ে ১২ শতাংশ হয়েছে। কয়লার দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই অনুযায়ী ইট বিক্রির বাজার নেই। সরকারি আবাসন প্রকল্পে জটিলতাও ইটের বাজারে সংকট তৈরি করেছে। বড় বড় আবাসন শিল্পে লাল ইট খুব কম ব্যবহার হচ্ছে। আর্থিকভাবে কঠিন এক পরিস্থিতিতে মজুরি বৃদ্ধির হার কত হতে হবে তা নিয়ে সংশয় ছিল। যাই হোক ভাটার সঙ্কট, সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন, সবকিছু মাথায় রেখে শ্রমিকদের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন সম্মানজনক মজুরি চুক্তি করতে পেরেছে।
ভাটায় দু’ধরনের শ্রমিক আছেন — স্থানীয় ও প্রবাসী। প্রবাসী শ্রমিকরা ঝাড়খণ্ড থেকে আসেন। এদেরকে ঠিকাদাররা চুক্তির ভিত্তিতে নিয়ে আসেন। এদের মধ্যে মহিলা ও পুরুষ সব ধরনের শ্রমিকই আছেন। স্থানীয় শ্রমিকরা মজুরি কেউ মাস হিসাবে পান, কেউবা ফুরনে পান। মাসে কেউ চারটে বা তিনটে ছুটি পায়। ইটভাটায় ৬ মাসের মরসুমি ব্যবসা চলে। তাই বছরের ছুটিও কম। শ্রমিকরা ছুটি পান — ১ জানুয়ারি, দোল/হোলি, মে দিবস, ঈদ এবং পৌষ সংক্রান্তিতে।
৪ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধিতে মজুরি বিন্যাস যে রকম হল — প্রতি মাসে বোঝাই মিস্ত্রি পাবেন জ্বালানি সহ মাসে ১৫,৮৬৪ টাকা। মাটি ফেলারা পাবেন প্রতি মাসে জ্বালানি সহ ১৪,৯৮২ টাকা। অন্যান্য বিভাগের শ্রমিকদেরও ৪ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধি হবে। যেমন — পাথেরা, টপ বাহক, মুখ কাটা, ফায়ারম্যান, কয়লাম্যান, রাবিশম্যান, রেজা, কাঁচা টিকিট, পাকা টিকিট, ড্রাইভার, মুন্সী, দারোয়ান, টিকিট কাটা এবং অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত ডেলি লেবার সবাই এই চুক্তির দ্বারা উপকৃত হবেন।
ইটভাটা শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। ইউনিয়নের দাবিসনদে ইএসআই, পিএফ ও পেনশনের কথার উল্লেখ আছে। তবে বড় ধরনের আন্দোলন ছাড়া তা কার্যকরী করা যাবে না। এরজন্য মালিক ও সরকার উভয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য প্রস্তুতি চলছে।