ভোট শেয়ার এবং আসন সংখ্যা কমে যাওয়া সত্ত্বেও বিজেপি ত্রিপুরায় ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। গুজরাট ও উত্তরাখণ্ডের মতো ত্রিপুরাতেও নির্বাচনের এক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তনের মাধ্যমে বিজেপি সরকার বিরোধী ক্ষোভের দিকটি অনেকাংশে হালকা করে দিতে সক্ষম হয়। ত্রিপুরার আদিবাসীদের মধ্যে ভালো মাত্রার জনসমর্থন ভোগ করা একটি আঞ্চলিক দল হিসেবে ‘তিপরা মোথা’-র ক্রমাগত উত্থান ত্রিপুরা নির্বাচনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। তিপরা মোথার উত্থান অবশ্য ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ত্রিমুখী করে দিয়ে বিজেপির কাছে সরকার বাঁচনোর সবচেয়ে বড় সহযোগিতা হিসেবে হাজির হয়। মোথার নিজের জয়ের সংখ্যা যদিও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, কিন্তু তা প্রাক-নির্বাচনী প্রত্যাশা এবং অনুমানের তুলনায় কম। তারপরও এক ডজনেরও বেশি অ-আদিবাসী আসনে সিপিআই(এম)-কংগ্রেস জোট এবং তিপরা মোথা এবং কিছুটা কম মাত্রায় হলেও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে অ-বিজেপি ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়া বিজেপির পক্ষে কাজ করে।
সিপিআই(এমএল) স্বতন্ত্রভাবে মাত্র একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবং বেশিরভাগ আসনে বাম-কংগ্রেস জোটকে এবং বাছাই করা কয়েকটি আদিবাসী আসনে মোথাকে সমর্থন দিয়েছিল। কমরেড পার্থ কর্মকার, সিপিআই(এমএল)-এর একমাত্র প্রার্থী, উদয়পুর জেলার রাধাকিশোরপুর আসনে ১,০০০-এর বেশি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
নাগাল্যান্ডে, বিজেপি এনডিপিপি-র নেতৃত্বাধীন শাসক জোটের ছোট শরিক হিসাবেই রয়ে গেছে। আর মেঘালয়ে মাত্র দুইজন বিধায়ক নিয়ে বিজেপি রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় পুনঃপ্রবেশ করতে এনপিপির সাথে তার জোট পুনঃনব করে নিয়েছে। বিজেপি এইভাবে ২০২৩ সালের প্রথম দফার বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্বের তিনটি রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হল।
ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ড নির্বাচনের ফলাফলে কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবনের লক্ষণ খুব সামন্যই নজরে এলেও, দলটি মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচনে সংশ্লিষ্ট শাসকদলগুলির দীর্ঘদিনের দখলে থাকা দুটো গুরুত্বপূর্ণ আসন ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। মহারাষ্ট্রে এনসিপি এবং উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ২৮ বছর ধরে বিজেপির দখলে থাকা কসবা পেঠ কেন্দ্রে জয়লাভ করে, যা শিন্দে-ফড়নবিস শাসনের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় ক্ষোভকেই দেখিয়ে দেয়। তামিলনাড়ুর ইরোড আসনটি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ধরে রাখতে সক্ষম হলেও কংগ্রেস ঝাড়খণ্ডের রামগড় উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি-মিত্র আজসু-র কাছে।
পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থেকে কংগ্রেস প্রার্থীর বিজয় বিজেপির ক্রমাগত পতনের একটি স্বস্তিকর দিকের প্রতিফলন এবং বিধানসভা অঙ্গনে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রধান বিরোধী হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে এসেছে। তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে এবং সাগরদিঘির এই জয় নিশ্চয়ই জনগণের চলমান জনপ্রিয় আন্দোলনগুলিকে উৎসাহিত করবে। একমাত্র অ-বিজেপি বিরোধী বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি, যিনি সম্প্রতি পুলিশের হাতে লাঞ্চিত ও গ্রেফতার হয়েছিলেন, গতকাল জামিন পেয়েছেন। এই তরুণ মুসলিম বিধায়কের সাথে পুলিশের অবমাননাকর আচরণের বিরুদ্ধে সাগরদিঘির নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিবাদস্বরূপ ক্ষমতাসীন তৃণমূলের পরাজয় ঘটানো এবং রাজ্য বিধানসভায় অ-বিজেপি বিরোধীর সংখ্যা বৃদ্ধি আশ্বস্ত করে।
বিধানসভা এবং উপ-নির্বাচনের ফলাফলগুলি আবারও আমাদের ২০২৪ সালের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে অ-বিজেপি বিরোধীদের এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাল – নির্বাচনে কার্যকরী বিরোধী ঐক্য, শক্তিশালী আন্দোলন এবং ভূমিস্তরে জনপ্রিয় আত্মঘোষণার মেলবন্ধন অবশ্যই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে পারে। পাটনায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাদশ পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে, সিপিআই(এমএল) এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তার সমস্ত শক্তি ও অক্লান্ত শ্রম নিয়োগ করবে।
কেন্দ্রীয় কমিটি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন