মেদিনীপুর পুরসভার ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধারাবাহিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ছোট বড় অনেক জয় অর্জন করেছে। বাঁকুড়া পুরসভার ইউনিয়নও পুরনো, নতুন করে সেখানে আন্দোলন দানা বাঁধছে। বিষ্ণুপুর পুরসভার সাফাই কর্মচারি ইউনিয়ন সেই তুলনায় অনেক নতুন। গত দুতিন বছরে জোরালো সংগ্রামী মেজাজের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ছোট ছোট জয় ও ধাপে ধাপে শক্তিশালী ঐক্য অর্জন করেছে। এই আন্দোলন অন্যান্যদের মধ্যেও নতুন উৎসাহ সঞ্চার করেছে। বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের তিনটি ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা গত ১৯ মার্চ বিষ্ণুপুরে ইউনিয়নের অফিসে একটি বৈঠকে মিলিত হয়ে এই পুরসভাগুলির শ্রমিকদের অবস্থা, আন্দোলন ও দাবি সম্পর্কে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও বিস্তারিত চর্চা করেন এবং গুরুত্বপূর্ণসিদ্ধান্ত গ্রহন করে। প্রথমত, পৌর জীবনের অপরিহার্য ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিষেবা দিয়েও সাফাইকর্মীরা চরম অন্যায়ের শিকার। সরকার ঘোষিত ন্যূনতম দৈনিক মজুরি কেউ পায় না, এবং বিভিন্ন পুরসভা বিভিন্ন কায়দায় শ্রমিকদের অধিকার হরণ করে চলেছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশিকায় পুরসভার সাফাইকর্মীদের অদক্ষ, আংশিক দক্ষ ও দক্ষ এই তিন ক্যাটেগরিতে চিহ্নিত করে তাদের জন্য যথাক্রমে ৩৭৬ টাকা, ৪১৪ টাকা ও ৪৫৫ টাকা দৈনিক মজুরি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পুরসভাগুলো নির্লজ্জভাবে শোষণ ও প্রবঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষ্ণুপুর পুরসভায় কর্মীরা সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি পান ২১০ টাকা। বাঁকুড়া ২৯০ টাকা ও মেদিনীপুর ৩০০ টাকা। দ্বিতীয়ত, কোথাও ইএসআই নেই। ইপিএফ কোথাও আছে কোথাও নেই, থাকলেও শ্রমিকেরা তার বেনিফিট পান না। তৃতীয়ত, শূন্যপদগুলি ফাঁকাই রেখে দেওয়া হয়, মৃত কর্মীর পরিবারের নিযুক্তিও হয় না। অস্থায়িরা বহু বছর কাজ করলেও তাদের স্থায়িকরণ বা নিয়মিতকরণ হয় না। এইসব আর্থিক প্রবঞ্চনা ও অধিকার হরণের মাধ্যমে সমাজে জাতগত অবজ্ঞা ও নিপীড়নের পরিস্থিতি চালিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে, সুডা (স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) এসডব্লিউএম (সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট)-এর নামে ধাপে ধাপে এই শ্রমিকদের পেশা থেকেই বহিস্কার করে দেওয়ার পথে রয়েছে।
বাঁকুড়ার ইউনিয়নের ভাস্কর সিংহ ও সর্বানী সিংহ, বিষ্ণুপুরের দিলবার খান ও ফারহান হোসেন খান, মেদিনীপুরের তপন মুখার্জী প্রমুখ নেতৃত্ব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সোনামুখী পুরসভার সাফাইকর্মীরা কাজ করেও তিন মাস বেতন পাননি। বর্তমানে তাঁরা প্রশাসনের চাপ উপেক্ষা করে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষ্ণুপুর বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন সোনামুখীতে এক প্রতিনিধিদল শ্রমিক বসতিতে মিটিং করে আসেন। এখানে জোরালো কোনও ইউনিয়ন নেই, দীর্ঘ প্রবঞ্চনায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দলিত শ্রমিকেরা স্বতস্ফুর্তভাবে লড়াই চালাচ্ছেন। বিষ্ণুপুর বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হয় আরও বিভিন্ন পুরসভার সাফাইকর্মীদের সাথে সংযোগ গড়ে তুলে জোটবদ্ধ হওয়ার এবং আগামিতে বৃহত্তর কেন্দ্রীয় কর্মসূচি গ্রহণের।