আবারও রাজধানীর রাজপথে কৃষকরা! ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে এই প্রথম রাজধানী দিল্লীর বুকে কৃষকদের সমাবেশিত হওয়ার অধিকার মেনে নিতে বাধ্য হল কেন্দ্রের মোদী সরকার। গত ২০ মার্চ ২০২৩ দিল্লীর রামলীলা ময়দানে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা (এসকেএম) এক বিশাল কিষাণ মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করে। এই সমাবেশ থেকে দেশের কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেটদের দখলদারীর বিরুদ্ধে ব্যাপকতর প্রতিবাদ গড়ে তুলতে সারা দেশ জুড়ে সম্মেলন, সেমিনার, মিছিল, সভা প্রভৃতি সংগঠিত করার আহ্বান জানানো হয়। এসকেএম কৃষকদের সমস্ত বকেয়া দাবিগুলি পূরণ করতে এবং অবিলম্বে এমএসপি গ্যারান্টি আইন কার্যকর করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করে।
মহাপঞ্চায়েতের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয় এসকেএম সারা দেশে বৃহৎ পরিসরে কর্পোরেট শোষণের বিরুদ্ধে কৃষকদের রাজ্য সম্মেলন আয়োজন করবে। সর্বভারতীয় কিষাণ সংগ্রাম যাত্রা শুরু করা হবে এবং কৃষকদের দাবিতে সাধারণ মানুষকেও ঐক্যবদ্ধ করা হবে। বিভিন্ন বক্তারা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে কৃষিক্ষেত্র, কৃষিজমি, বনভূমি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ কেড়ে নেওয়া এবং কর্পোরেট মুনাফাখোরদের কাছে বিক্রি করার জন্য ঋণগ্রস্ত মোদী সরকারের তীব্র বিরোধিতা করেন। কিষাণ মহাসভার সভাপতি রুলদু সিং মানসা, কিষাণ সভার বিজু কৃষ্ণন, বিকেইউ’এর রাকেশ টিকাইত, বিকেইউ (উগ্রাহার) যোগেন্দর উগ্রাহন, নর্মদা বাঁচাও’এর মেধা পাটকর, কিষাণ সংগ্রাম সমিতির ডাঃ সুনিলাম, কৃষক নেতা সত্যবান, সুরেশ কাউথ, সত্যশোধক সভাকক্ষের সভাপতি ড. মহাপঞ্চায়েতে, শ্রমিক কৃষক সংগঠনের কিশোর ধামালে, সুভাষ কাকুস্তে, তরাই কিষাণ সংগঠনের তেজেন্দর বির্ক, ভূমি বাঁচাও সমিতির তরাইয়ের নেতা বাজওয়া সহ ৫০ জনেরও বেশি বক্তা কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষক বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি বলা হয় এই প্রতিবাদের লক্ষবস্তু হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কিষাণ বিরোধী নীতি। মঞ্চ পরিচালনা করেন কিষাণ মহাসভার পুরুষোত্তম শর্মা, বিকেইউ ঢাকোন্ডার জগমোহন, কিষাণ খেত মজদুর সভার রবিন্দর পাতিয়ালা সহ ৯ সদস্যের কমিটি।
কিষান মহাপঞ্চায়েত চলা কালে এসকেএম’এর ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কৃষিভবনে গিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রীর সাথে দেখা করে এবং তাঁর কাছে দু’টি স্মারকলিপি জমা দেয়। এসকেএম এবং কৃষিমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়। কৃষকদের অমীমাংসিত ও জ্বলন্ত সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার এসকেএম-এর সাথে ধারাবাহিকভাবে আলোচনায় বসতে রাজি আছে বলে মন্ত্রী জানান। যদিও তিনি সুকৌশলে এমএসপি গ্যারান্টি আইনের প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যান। এসকেএম কৃষিমন্ত্রীকে জানান যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হয়, এসকেএম আরও দুর্বার বিক্ষোভ ও আন্দোলনের ঘোষণা করবে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন — ভেঙ্কাইয়া- অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভা, ডাঃ সুনিলাম- কিষাণ সংগ্রাম সমিতি, প্রেম সিং গেহলাওয়াত- সারা ভারত কিষাণ মহাসভা, মিঃ ভি ভেঙ্কটারামাইয়া- অল ইন্ডিয়া কিষাণ মজদুর সভা, সুরেশ কোথ- ভারতীয় কিষাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, যুধবীর সিং- ভারতীয় কৃষক ইউনিয়ন, হান্নান মোল্লা- অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভা, মিস্টার বুটা সিং বুর্জগিল- ভারতীয় কৃষক ইউনিয়ন (ডাকুন্ডা), জোগিন্দর সিং উগ্রাহান- ভারতীয় কৃষক ইউনিয়ন (উগ্রাহান), সত্যওয়ান- অল ইন্ডিয়া কৃষক ফার্মার্সলেবার অর্গানাইজেশন, অভীক সাহা- জয় কিষাণ আন্দোলন, দর্শন পাল- বিপ্লবী কৃষক ইউনিয়ন, মনজিৎ রায়- ভারতীয় কৃষক ইউনিয়ন (দোয়াবা), হরিন্দর লাখোয়াল- ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (লাখোয়াল), সাতনাম সিং বাহরু প্রমুখ।
এর আগে ১৯ মার্চ দিল্লীর প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন কৃষক নেতারা। এতে কিষাণ সভার হান্নান মোল্লা, কিষাণ মহাসভার রাজারাম সিং, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেত্রী মেধা পাটকর, জয় কিষাণ আন্দোলনের অভিক সাহা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এই কিষাণ মহাপঞ্চায়েতে সারা ভারত কিষাণ মহাসভার অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী। কিষাণ মহাসভার ব্যানারে হাজার হাজার কৃষক পতাকা, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে সুসজ্জিতভাবে অংশগ্রহণ করেন। পাঞ্জাব, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড থেকে কিষাণ মহাসভার বিশিষ্ট নেতাদের নেতৃত্বে ব্যাপক কৃষক অংশগ্রহণ করেন।