একাদশ পার্টি কংগ্রেসের আন্তর্জাতিক সংহতি অধিবেশন পর্বে উপস্থিত ছিলেন ভেলিজুয়েলা, নেপাল, ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিস্তিন, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশ থেকে আগত অতিথিগণ। বিভিন্ন ভগ্নিপ্রতিম সংগঠনগুলি ভারতে চলমান জনগণের সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। তাঁরা এক জনগণতান্ত্রিক ও বহুজাতিক বিশ্ব গড়ে তোলার কথা বলেন এবং সেই কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সংহতির কথা বলেন।
‘ইউক্রেনিয় আন্তর্জাতিক সংহতি’-র সদস্য সোটসিয়ালনি রুখ উল্লেখ করেন যে তাঁরা পুতিনের নেতৃত্বে চলা “বিরাট রুশ আধিপত্যবাদ”-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগঠিত করছেন কারণ তা ইউক্রেনে রুশ সার্বভৌমত্ব প্রসার প্রশ্নে লেনিনের গৃহীত অবস্থানের ঘোর বিরোধী। রুখ বলেন যে পুঁজিবাদ বিরোধী সংগ্রাম এক উন্নত ও শোষণমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলবে। তিনি ইউক্রেনের জণগনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সিপিআই(এম-এল)-কে ধন্যবাদ জানান।
নেপালের সিপিএন (ইউনিফায়েড সোশ্যালিস্ট) এর পক্ষ থেকে ঝালা নাথ খানাল উল্লেখ করেন, ১৯৭০ সাল থেকেই নেপালের কমিউনিস্ট দল এবং সিপিআই(এমএল)-এর মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্কের ইতিহাসের কথা। সেইসময়, কমরেড বিনোদ মিশ্র নেপালের সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কেবল তাই নয়, তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁদের ষষ্ঠ পার্টি কংগ্রেসেও। তিনি বলেন, বর্তমানে নেপাল বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যদিও সেখানে এখন কমিউনিস্ট দলগুলি একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং নির্বাচনে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছে, তবুও ডানপন্থী দলগুলি তাদের রাজনৈতিক উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে অনুপ্রবেশ করেই চলেছে। তারা রাজতন্ত্রের দিনগুলি ফিরিয়ে আনতে চায়। তিনি আরও বলেন, “আমরা নেপালে সংসদের ভিতরে এবং বাইরে দু’জায়গাতেই বহুমাত্রিক শ্রেণী সংগ্রাম শুরু করেছি। এইসময় আমাদের কাছে ডানপন্থী শক্তি ও তাদের প্রভাবিত সামাজিক উপাদানগুলির মোকাবিলা করতে বামপন্থি সরকার এবং বামপন্থি ঐক্য গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’
ভেনিজুয়েলার সংযুক্ত সমাজতান্ত্রিক পার্টির রামোন অগাস্টো সংহতি প্রকাশ করে বলেন, “জনগণের ঐক্যের প্রবর্তক কমান্ডার হুগো শ্যাভেজের দেশ থেকে তিনি এসেছেন। সামাজিক উন্নয়ন আনতে, চলমান যেকোনো ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করে সংহতি স্থাপন করতে হবে। সমাজে পরিপুরুক শক্তি তৈরি করতে হবে।” তিনি বিশ্বাস করেন, এইভাবেই আমরা একটি বহুমুখী বিশ্ব গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবো, যেখানে শান্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চয়তা পাবে।
এছাড়াও সংহতি বার্তা পাঠ করেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে সাইফুল হক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের পক্ষ থেকে বজলুর রসিদ, সোশ্যালিস্ট অ্যালায়েন্সের (অস্ট্রেলিয়া) পক্ষ থেকে স্যাম ওয়েনরাইট, সাউথ এশিয়া সলিডারিটির (যুক্তরাজ্য) পক্ষ থেকে সরবজিৎ জোহল। অপূর্বা গৌতম বক্তব্য রাখেন বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশনস মুভমেন্ট (বিডিএস) এর পক্ষ থেকে।
কিউবার রাষ্ট্রদুত আলেজান্দ্রো সিমানকাস মারিন, এমএলপিডি জার্মানি, কমিউনিস্ট পার্টি অফ সোয়াজিল্যান্ড, পারটিদো কমিউনিস্টা একুএটোরিআনো, পারটিদো মাংগাগাওয়া (লেবার পার্টি ফিলিপাইন্স), ইউনিয়ন অফ সাইপ্রাইটস (সাইপ্রাস), লাও পিপলস রেভলিউসানারি পার্টি (লাওস) – পার্টি কংগ্রেসে তাদের সংহতি বার্তা পাঠিয়েছিলেন এবং তা অধিবেশনে পাঠ করা হয়।
বহু সংগঠনই সিপিআই(এম-এল)-এর ১১তম পার্টি কংগ্রেসকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন – আফগানিস্তানের বামপন্থী পার্টি, ইরানের কমিউনিস্ট পার্টি, আর্জেন্টিনার কমিউনিস্ট পার্টি এবং ল্যান্ডলেস পিপলস মুভমেন্ট (নামিবিয়া)। এছাড়াও, বিডিএস আন্দোলনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা (ফিলিস্তিন) ওমর বারঘোতি, শ্রীলঙ্কার আইনজীবী ও রাজনৈতিক কর্মী স্বস্তিকা আরেলিঙ্গাম, মালয়েশিয়ার সোশ্যালিস্ট পার্টির মহাসচিব শিবরাজন অরুমুগান, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন সেক্রেটারি আরনাউ পিকিউ, কাটালোনিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি ও পাকিস্তানের আওয়ামী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আখতার হুসেইন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নিজেদের সংশ্লিষ্ট বক্তব্য ও সংহতি বার্তা পাঠিয়েছিলেন।