রাজ্যে ক্রমবর্ধমান কৃষি সংকটের তীব্রতা প্রকট ভাবে উঠে এসেছে আলু পিঁয়াজ প্রভৃতি অর্থকরী ফসলের চরম অভাবি বিক্রি, ঋণফাঁদে জর্জরিত চাষিদের আত্মহত্যা, আলুর সহায়ক মূল্য ঘোষণার নামে রাজ্য সরকারের প্রতারণা প্রভৃতি বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে। রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে বিশেষত আলু চাষের এলাকাগুলিতে কৃষকদের স্বতস্ফূর্ত বিক্ষোভ ফেটে পড়ছে। বহু জায়গায় চাষিরা রাস্তায় ফসল ফেলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। খরচের দেড়গুণ হিসাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণের স্বীকৃত পদ্ধতি গ্রহণ না করে কিলো প্রতি মাত্র ৬ টাকা ৫০ পয়সা সরকারি দর ঘোষণা চাষিদের আলুর বিক্রয়মূল্য আরও কমিয়ে দিয়েছে, যা হয়ে উঠেছে চাষির সর্বনাশ ও বড় ব্যবসায়ীদের পৌষমাস। সার-বীজ-কীটনাশকের বিপুল মূল্যবৃদ্ধি চাষের খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার প্রশাসনের চোখের সামনে চলছে এসবের কালোবাজারি, মজুতদারী। রাজ্যের নিজস্ব বীজ উৎপাদন খামারগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া, সমবায় সমিতিগুলিকে অকার্যকর করে সেগুলিকে ব্যবসায়ীদের অবৈধ কারবারে ব্যবহার করা – ইত্যাদির ফলে ছোট মাঝারি চাষি ও চুক্তি চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। মহাজনী ঋণের দায়ে বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় ৬ জন চাষির আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতিতে ৯ মার্চ এআইকেএম-এর পক্ষ থেকে কালনার বৈদ্যপুরে রাস্তায় ফসল ফেলে অবরোধ করা হয় যা ব্যপক জনসমর্থন পায়। দ্রুতই বর্ধমান ও হুগলি জেলার সংগঠন আরও কয়েকটি বিক্ষোভের পরিকল্পনা নেয়। রাজ্যে আলু চাষের অপর এলাকা বাঁকুড়া জেলাতেও একই ধরণের বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলার কারণে বড় ধরনের প্রচার কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আগামী ২০ মার্চ রাজ্য জুড়ে ব্লক কৃষি আধিকারিকের দপ্তরে বিক্ষোভ ডেপুটেশনের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে (পরীক্ষা শেষ হবে বেলা ১ টা ১৫ মিঃ তারপর কর্মসূচি নিতে হবে)। বিভিন্ন দাবি সম্বলিত পোস্টার ব্যানার প্ল্যকার্ড সহ সম্ভাব্য সমস্ত উপায়ে প্রচারের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি নিতে হবে। সমস্ত জেলায় একে সফল করে তোলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এতে রাজ্যের কৃষি বিপনন মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এক দাবিপত্র স্মারকলিপি দিতে হবে। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে এক খোলা চিঠি প্রকাশ করা হবে। ২০ মার্চ দিল্লীতে পার্লামেন্টের সামনে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার মহাপঞ্চায়েত সংগঠিত হবে। এই দিন তার সমর্থনেও প্রচার করতে হবে। আয়ারলা সহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলিকেও এই কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। গ্রামাঞ্চলে এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াইয়ে আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে নামতে হবে। বর্তমান সময়কালে জ্বলন্ত ও জীবন্ত হয়ে ওঠা কৃষি সংকট এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কৃষক-বিরোধী নীতি বা ভূমিকা নিয়ে এলাকা স্তরে তীব্র প্রচার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দ্রুতই রাজ্যের কৃষি বিপনন মন্ত্রীর কাছে এক প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করে স্মারকলিপি জমা দেবে।
দাবিসমূহ
১) উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দাম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করো। ১২০০ টাকা কুইঃ দরে সরকারকে আলু কিনতে হবে।
২) এই রাজ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য গ্যারান্টি আইন চালু করো।
৩) উৎপাদনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ আলু সরকারকে কিনতে হবে এবং হিমঘরে মজুত রাখতে হবে।
৪) ১৫০০ টাকা কুইঃ দরে পিঁয়াজ কিনতে হবে।
৫) সার বীজ কীটনাশক, বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে স্বল্প দামে সরবরাহ করতে হবে। এ নিয়ে কালোবাজারি মজুতদারি বন্ধ করতে হবে। রাজ্যে বীজ খামারগুলি চালু করতে হবে।
৬) সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র মাঝারি চাষিদের সার বীজ সহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। সমবায়গুলিতে গণতান্ত্রিক ও আইনি প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
৭) ঋণের দায়ে আত্মহত্যাকারী চাষিদের প্রতিটি পরিবারকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
৮) রাজ্য সরকারকে দায় নিয়ে ক্ষুদ্র মাঝারি ভাগচাষিদের সমবায় ঋণ মুকুব করতে হবে।
৯) অবিলম্বে ১০০ দিনের কাজ চালু করতে হবে, বকেয়া মজুরি দিতে হবে
১০) সন্ত্রাসমূক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে হবে।