২২ নভেম্বর ২০২২ খাবার পরিবহণ সংস্থা স্যুইগির ডেলিভারি বয়দের এক বড় জমায়েত হয় কলকাতায় স্যুইগির মূল অফিস সল্টলেক শৈল টাওয়ারের সামনে। এই জমায়েত থেকে স্যুইগি ডেলভারি বয়দের এক প্রতিনিধি দল স্যুইগি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেন ও তাদের দাবি দাওয়া পেশ করেন।
পুজোর আগে স্যুইগির বেশ কয়েকটি জোন নিজেদের দাবি নিয়ে স্ট্রাইক করেছিল। ডেলিভারি রাইডারদের প্রধান দাবি ছিল ৩৫ টাকা বেস পে আর কিলোমিটার পিছু ১০ টাকা দিতে হবে। পুজোর উৎসবের মুখে স্ট্রাইক তুলে নেওয়ার অনুরোধ করে কোম্পানি জানিয়েছিল ৩০ অক্টোবরের মধ্যে কিছু সুরাহার ব্যবস্থা তারা করবে। কিন্তু প্রতিশ্রুত সময় অতিক্রান্ত হবার পরও স্যুইগি কর্তৃপক্ষের তরফে এই দাবি নিয়ে কোনও সাড়াশব্দ করা হয়নি। কোম্পানির কাছে বারবার যোগাযোগ করা হলেও উত্তর পাননি স্যুইগি ডেলিভারি বয়দের সংগঠন। বাধ্য হয়ে ২২ নভেম্বর ২০২২ স্যুইগির ডেলিভারি শ্রমিকরা স্যুইগি অফিস (সল্টলেক শৈল টাওয়ার) অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন।
এই অভিযান বানচাল করার জন্য স্যুইগি কর্তৃপক্ষ সমস্ত চেষ্টাই করেছিল। থানায় থানায় স্যুইগি কর্তৃপক্ষের তরফে লোক পাঠানো, সংগঠকদের ভয় দেখানো — সবই চলেছে। সে সবে কাজ না হওয়ায় অভিযানের ঠিক আগে বেস পে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করে কোম্পানি। কিন্তু, বেস পে বাড়ালেও ওয়েটিং টাইম পে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে আসলে রাইডারদের রোজগার কমিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়।
এইসব টালবাহানাতে না ভুলে ২২ নভেম্বর ২০২২ উত্তর কলকাতা ও দক্ষিণ কলকাতা মিলিয়ে ১০টি জোনের প্রায় ৩০০ শ্রমিক জড়ো হয়েছিলেন সল্টলেকের স্যুইগি ভবনের সামনে। ডেলিভারি শ্রমিকদের নাছোড়বান্দা মনোভাবে কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট ১০ জনের প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করেন।
প্রাথমিকভাবে ওয়েটিং টাইম পে চালু করার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা করার কথা জানালেও, অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে কলকাতার স্যুইগি ম্যানেজমেন্ট বাস্তবত জানিয়ে দেন যে তাদের হাতে কিছু নেই। সব আছে ব্যাঙ্গালোরের স্যুইগির হেড অফিসের নিয়ন্ত্রণে। সল্টলেকের স্যুইগি ভবনের কর্তৃপক্ষ আলোচনার সময়ে প্রথমে ডেপুটেশনের কপি অব্দি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল। অবশেষে রাইডাররা বাধ্য করেন কোম্পানির আধিকারিকদের দিয়ে তাদের দাবিসনদ গ্রহণ করাতে।
স্যুইগি শ্রমিকরা জানিয়েছেন যে তাঁরা নিজেদের সংগঠন গড়ে তুলবেন। প্রতি জোনের নিজস্ব কমিটি তৈরি হবে এবং জোনগুলোর সমন্বয়ের ভিত্তিতেই ঠিক হবে আগামী কর্মসূচি।
তাঁরা সামাজিক মাধ্যমে পেশ করা এক বিবৃতিতে কয়েকটি দাবিও তুলে ধরেছেন। সেগুলি হল,
১) বেস পে ৩৫ টাকা ও কিমি প্রতি ১০ টাকা দিতে হবে।
২) সাইকেল আইডি’দের প্রতি বঞ্চনা করা, তাদের তিন কিলোমিটারের বেশি অর্ডার দেওয়া চলবে না।
৩) ইন্সটামার্ট আইডি’দের বেস পে ২০ টাকা করতে হবে।
৪) গিগস সিস্টেম বন্ধ করতে হবে।
৫) স্বাস্থ্য বীমা, দুর্ঘটনা বীমার পদ্ধতি সরল করতে হবে।
৬) থার্ড পার্টিকে দিয়ে কাজ করিয়ে স্যুইগি রাইডারদের অর্ডার কমিয়ে দেওয়া চলবে না।
৭) সমস্ত ডেলিভারি রাইডারকে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রাপ্য অধিকার দিতে হবে।
ডেলিভারি অ্যাপের ভার্চুয়াল দুনিয়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকা শ্রমিকদের শোষণ ও শোষকদের সামনে নিয়ে আসার লড়াইটা কলকাতার স্যুইগি শ্রমিকরা শুরু করেছেন। স্যুইগি শ্রমিকদের এই লড়াই গত কয়েক বছরে গড়ে ওঠা ও দ্রুত বিকাশমান মোবাইল অ্যাপ ভিত্তিক নানা ব্যবসা, যাকে গিগ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র বলে অভিহিত করা হয় — তার সমস্ত শ্রমিকদের নানা বঞ্চনার বিরুদ্ধে চলমান বৃহত্তর লড়াইয়েরই অংশ। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এবং শ্রমিক সংগঠন এআইসিসিটিইউ সর্বতোভাবে এই আন্দোলন লড়াইয়ের পাশে থাকবে।
- সৌভিক ঘোষাল