সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ‘‘রাজভবন চলো’’ কর্মসূচিতে গত ২৬ নভেম্বর দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্যের রাজধানীতে লক্ষ লক্ষ কৃষকের মিছিল ও সমাবেশ সংগঠিত হল। কলকাতার ধর্মতলায় অনুষ্ঠিত হল হাজার হাজার কৃষকের মিছিল ও সভা। এই দিন কৃষক বিরোধী বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকরা রাস্তায় নেমে আসেন। কেন্দ্রীয় শাসক দলের কৃষক বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রত্যেক রাজ্যের রাজ্যপালদের মাধ্যমে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয়। দিল্লীর ঐতিহাসিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নতুন পর্যায়ে সারা দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ কৃষক আন্দোলনে সামিল হলেন।
পশ্চিমবঙ্গে এদিন সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার নেতৃত্বে বেশ কয়েক হাজার কৃষক দুপুর ১টায় শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে মিছিল করে রানি রাসমণি রোডের দিকে রওনা দেন। দুপুর ২টো নাগাদ রানী রাসমণি রোডে শুরু হয় এসকেএম-এর জনসভা। সভা সঞ্চালনা করেন কার্তিক পাল। বক্তব্য রাখেন, অমল হালদার, সুভাষ নস্কর, অভীক সাহা, সমীর পূততুণ্ড, অনুরাধা দেব, অনুরাধা তলোয়ার, জয়তু দেশমুখ, গোপাল বিশ্বাস, ফরিদ মোল্লা, শৈলেন মিশ্র, নিরাপদ সরকার, রাম বচ্চন প্রমুখ। কৃষকদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করলে মোদি-শাহ সরকারকে চরম পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে এদিন মোর্চার তরফে প্রায় প্রত্যেক বক্তাই তাঁদের বক্তব্যের মধ্যে উল্লেখ করেন। একইভাবে রাজ্য সরকারের প্রতিও হুঁশিয়ারি দেন কৃষক নেতারা। তারা বলেন, “রাজ্যের কৃষকেরা, সাধারণ মানুষেরা শান্তিতে নেই অথচ নেতারা শান্তিকুঞ্জ আর শান্তিনিকেতন নামে তাদের বাসভবনে শান্তিসুখ পেতে চাইছেন। এমনটা চলবে না, সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করার আইন বা এমএসপি আইনের যে খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে, ঐ খসড়ার ভিত্তিতে অবিলম্বে আইন প্রণয়ন করতে হবে রাজ্য সরকারকে। এছাড়াও সারের কালোবাজারি বন্ধ করা সহ যে সমস্ত দাবিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো পূরণ করা না হলে কেন্দ্রের মতো রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকরা জোড়ালো আন্দোলনের পথে এগিয়ে যাবে। ১০০ দিনের কাজ ও বকেয়া পরিশোধের দাবী তুলে ধরে নেতৃবৃন্দ বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের কাজিয়ায় ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ গরিব মেহনতি মানুষ। তাই দুই সরকারের কাছেই আমাদের দাবি কাজ দাও মজুরি দাও। ফসলের সরকারি ক্রয় আর গণবন্টন বা খাদ্য সুরক্ষা এগুলি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। তাই সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সামিল হতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের মাধ্যমে এরাজ্যের সরকারের কাছে দাবি তোলা হয়:
প্রতিনিধি দলে ছিলেন সজল অধিকারী, ভক্তরাম পান, প্রবীর মিশ্র, সজল অধিকারী, বেছু দলুই, আব্দুর রউফ।
চণ্ডীগড়, লখনৌ, পাটনা, তিরুবনন্তপুরম, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, ভোপাল, জয়পুর এবং অন্যান্য রাজ্যের রাজধানীতে লক্ষাধিক লোকের বিশাল জমায়েত দেখা গেছে। সারা ভারত থেকে তথ্যের ছবি এবং ভিডিও যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, এসকেএম অনুমান করে যে ৫০ লক্ষের বেশি কৃষক আজ দেশের রাস্তায় নেমে এসেছেন। কৃষকদের সমস্ত দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই সম্মিলিত সংগ্রাম চলবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি তোলা হয় –
স্মরণ করা যেতে পারে যে ২৬ নভেম্বর তারিখটি ভারতে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এদিন আমাদের সংবিধান দিবস। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বরে এসকেএম ঐতিহাসিক ‘‘দিল্লি চলো’’ আন্দোলন শুরু করেছিল, যা বিশ্বের দীর্ঘতম এবং বৃহত্তম কৃষক আন্দোলনে পরিণত হয় এবং কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য কর্পোরেট-রাজনীতিক আঁতাতের বিরুদ্ধে কৃষকদের গৌরবময় বিজয়ের দিকে নিয়ে যায়। আজ দেশব্যাপী ‘‘রাজভবন চলো কর্মসূচি’’ কৃষক আন্দোলনের পরবর্তী পর্বের সূচনা করল৷
‘‘রাজভবন চলো’’ কর্মসূচির সাফল্যের জন্য সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তথা সারা দেশের সমস্ত কৃষক, ক্ষেতমজুর, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, মহিলা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের অভিনন্দন জানায় এবং দেশব্যাপী সবাইকে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামে যোগদান করতে আবেদন জানায়।