খবরা-খবর
আবাস দুর্নীতির বিরুদ্ধে, বঞ্চিত মানুষের বিক্ষোভ - নদীয়ায় ব্লক ডেপুটেশন
deprived people

নিয়োগ দুর্নীতি, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির পাশাপাশি আবাস দুর্নীতি! যা নিয়ে এখন গোটা গ্রামবাংলা উত্তাল। সম্প্রতি প্রকাশিত আবাস যোজনা তালিকায় দেখা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের নাম রয়েছে যাদের আছে পাকা বাড়ি, এমন কী তালিকায় একই বাড়ির একাধিক নাম রয়েছে। বিপরীতে এমন বহু সংখ্যক গরিব মানুষের নাম নেই যারা প্রকৃতই ঘর পাওয়ার যোগ্য। মাটির ঘর ভেঙ্গে পড়েছে এমন বহু মানুষ বঞ্চিত। কী করে এমন তালিকা তৈরি হল? ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শাসক তৃণমূলের তৈরি করা এই তালিকায় সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মালদা থেকে পুরুলিয়া মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত গণবিক্ষোভ ফেটে পড়ছে। যাদের নাম নেই তারা দলে দলে ব্লক অফিসে গিয়ে সরকারের দুয়ারে হাজির হচ্ছেন। কিন্তু তাদের জানানো হচ্ছে নতুন নাম যুক্ত করা যাবে না। তিন দফায় তদন্ত করা হবে, অযোগ্যদের নাম বাদ দেওয়া হবে। এই প্রথমবার বিনা পারিশ্রমিকে গ্রামীণ মহিলা প্রকল্পকর্মীদের আবাস তালিকার তদন্ত অনুসন্ধানের কাজে লাগানো হয়েছে। বলা হচ্ছে দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। কিন্তু সমীক্ষাকারী মহিলারা শাসকদলের চাপ হুমকী এমন কী শারীরিক নিগ্রহের সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকেই মাঝপথে সমীক্ষা ছেড়ে দিয়ে ব্লক দপ্তরে কাগজ জমা দিয়ে আসছেন। অর্থাৎ তৃণমূলের মাতব্বরি দলবাজি ঘুষের কারবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওদের কায়েমী স্বার্থান্বেষী নেতাদের বড়ো অবলম্বন হয়ে উঠেছে।

কিন্তু এই দুর্নীতির সমাধান কোথায়? যে যায় লঙ্কায় সেটাই কি আমাদের ভবিতব্য? দুর্নীতি প্রশমনে মোক্ষম দাওয়াই হলো গণতদারকী। মানুষের চোখের সামনে সমস্ত তথ্য খোলাখুলি রাখলে দুর্নীতি কিছুটা হলেও কমতে বাধ্য। এ কারণেই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে গ্রামসভার আয়োজন করা, মতামত গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক হয়েছিল৷ কিন্তু শাসক তৃণমূল একে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দলতন্ত্র কয়েম করেছে। আবাস প্লাস তালিকা প্রকাশের পর রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল যে তিন স্তরে তদন্তর পর বাছাই করা তালিকা গ্রামসভায় রেখে অনুমোদন নিতে হবে। আইনত গ্রামের ভোটার সংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ উপস্থিত হলেই চলবে। কিন্তু বেশ কয়েকটি জেলায় এ জাতীয় গ্রামসভায় তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। শেষে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়৷ তালিকায় থাকা নাম দেখে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাই তাড়াতাড়ি নতুন নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়, গ্রামসভা নয়, পুলিশই নাকি তদন্ত অনুসন্ধানের কাজ করে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেবে! বলা বাহুল্য এভাবে দলতন্ত্রর হাত ধরে আমলাতন্ত্রকে আরও শক্তপোক্ত করা হল। পুলিশী ব্যবস্থাই এখন তৃণমূলের গণতন্ত্র হয়ে উঠেছে। কথায় কথায় বিরোধীদের মিথ্যা মামলায় পুলিশী হয়রানি করা চলছে।

এই প্রেক্ষাপটে ১৯ ডিসেম্বর নদীয়া জেলার ধুবুলিয়ায় ব্লক দপ্তরে পার্টি ও গণসংগঠনের প্রতিনিধিরা ডেপুটেশন সংগঠিত করেন। পার্টির পক্ষ থেকে আবাসের সংশোধিত তালিকা সরবরাহের দাবি জানালে বিডিও সেটা দিতে অস্বীকার করলেন। অথচ তিনি জানালেন পঞ্চায়েত অফিসে নাকি সেই তালিকা টাঙ্গিয়ে দেওয়া হবে। তাহলে সেটি হাতে দিতে অসুবিধা কোথায়? প্রশাসন নিরুত্তর! নতুন করে তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানালে বলা হয় নতুন দরখাস্ত জমা দেওয়া যাবে, কিন্তু বাক্সে ফেলে দিতে হবে, কোনও প্রাপ্তি স্বীকার করা হবে না। অর্থাৎ পুরোটাই লোক দেখানো বিষয়। এই অবস্থায় আগামীতে আবাসের অধিকারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন পার্টির ধুবুলিয়া এরিয়া কমিটি সদস্য আনসারুল হক, অমিত মন্ডল, সাইদুল মোল্লা, আব্বাস সেখ প্রমূখ।

খণ্ড-29
সংখ্যা-49