আবেদন
সিপিআই(এমএল)-এর একাদশ পার্টি কংগ্ৰেসকে জনগণের উৎসবে পরিণত করুন
Party Congress a People's Festival

সিপিআই(এমএল)-এর একাদশ পার্টি কংগ্ৰেস অনুষ্ঠিত হবে পাটনায় এবং তার আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এক বিশাল জনসভা সংগঠিত হবে। এই কংগ্ৰেসের প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে গত ৪ ডিসেম্বর ২০২২ পাটনার ভারতীয় নৃত্যকলা মন্দিরে রাজ্যভিত্তিক এক ক্যাডার কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ কনভেনশনে মূল বক্তা ছিলেন সিপিআই(এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ এবং তাদের সাথে জেলা সম্পাদকরা এবং দলের কিছু সক্রিয় কর্মীও ঐ কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলন আট-দফা প্রস্তাব গ্ৰহণ করে। নীচে করমেড দীপঙ্করের বক্তব্যের মূল বিষয়গুলোকে রাখা হচ্ছে।

দীপঙ্কর তাঁর ভাষণে বলেন, মোদী জমানায় ‘দেশ’এর নামে গণতন্ত্রের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ নামানো হয়েছে, আর তার মধ্যে দিয়ে ‘এই দেশের জনগণকেই’ নিশানা বানানো হচ্ছে।

কর্পোরেট সংস্থাগুলো, বিশেষভাবে আদানি ও আম্বানি এই আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন — আরএসএস ও বিজেপির পিছনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে তারা শাসক দলের পক্ষে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে, আর তার বিনিময়ে সরকার দেশের নীতিমালাকে তাদের অনুকূলে চালিত করছে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া যায়। বাস্তবে বিজেপি কিন্তু দেশের কাছে এক বিপর্যয় হিসাবেই আবির্ভূত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংস থেকে শুরু হওয়া একের পর এক ঘটনা পরিণতি লাভ করল ২০০২ সালে কুখ্যাত গুজরাট গণহত্যার মধ্যে। সিপিআই(এমএল) হল সেই সংগঠনগুলোর অন্যতম যারা সর্বপ্রথম এই প্রবণতাকে ‘সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদ’ রূপে চিহ্নিত করে। তারপর থেকে আমরা এই শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি।

মোদী হিমাচল প্রদেশে তাঁর নিজের নামেই ভোট চাইছেন। গুজরাটে অমিত শাহ জনগণকে ২০০২’র কথা মনে পড়িয়ে দিয়ে সেখানে ‘স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছেন। পরেশ রাওয়াল বলছেন যে, গুজরাটের জনগণ মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারিকে সহ্য করবেন, কিন্তু মুসলিমদের তাদের প্রতিবেশী হিসাবে গ্ৰহণ করতে পারবেন না। তিনি ঘৃণা উস্কিয়ে তুলেই মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা করতে চাইছেন। আমাদের কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি এবং ঘৃণা উভয়ের বিরুদ্ধেই লড়াই চালাতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদ বিধ্বংসকে একটা অপরাধ বলে অভিহিত করেছে, কিন্তু এখন তা নিয়ে আর কোনও কথা হচ্ছে না। এর থেকে স্পর্ধিত হয়ে আরএসএস কাশী, মথুরা এবং দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যময় স্থাপত্যের ওপর দাবি জানাচ্ছে আর সুপ্রিম কোর্ট তাতে সহায়তা করছে।

নির্বাচন কমিশনে নিয়োগগুলো কিভাবে হবে তা এখন সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন। এরই মধ্যে সরকারি পদে আসীন এক আমলার কর্মজীবনে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সমাপ্তি ঘটিয়ে তাঁকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ করা হয়। বিচারবিভাগে কোনো সংরক্ষণ না থাকাটাও এক বড় প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। সরকার আর একটা বিষয়কেও নিজেদের দিকে ঝোঁকাতে চাইছে। কলেজিয়াম ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে বিচারপতিদের নিয়োগে তারা উদ্বিগ্ন বোধ করছে এবং ঐ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চাইছে যাতে বিচারবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হল এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা যা স্থায়ী বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জনগণ এই ইচ্ছা প্রকাশ করছেন যে, এই অবস্থা থেকে মুক্তির লক্ষ্যেই ২০২৪’র নির্বাচনে লড়াই করতে হবে।

কমরেড দীপঙ্কর আরও উল্লেখ করেন দেশের জনগণের সাগ্ৰহে বিহারকে পর্যবেক্ষণ করার কথা, আর তা করা হচ্ছে বিহার এক নতুন পথ দেখিয়েছে বলে। বিহারের এই মডেল নিয়ে রাজ্যে যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। সারা দেশের কাছে আমাদের এই সুস্পষ্ট বার্তা পৌঁছাতে হবে যে দেশে এখন ফ্যাসিস্ত শক্তিগুলোর আধিপত্য চলছে।

পার্টি কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কংগ্ৰেসের আগে সংগঠিত জনসভায় অংশগ্ৰহণের রেকর্ড সৃষ্টি করতে হবে, আর তারজন্য মূল্যস্ফীতি ও বেকারির মতো ইস্যুগুলোকে অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। মর্যাদাপূর্ণ কাজ, উৎপাদিত শষ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য এবং ভাগ চাষিদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

পার্টি কংগ্ৰেসের লক্ষ্য হিসাবে তিনি বলেন, পার্টি কংগ্ৰেসকে জনগণের উৎসবে পরিণত করতে হবে। আর যেহেতু উদ্দীপনা ছাড়া কোনো উৎসব হয় না, পার্টি কর্মীদেরও তাই উদ্দিপনায় প্রাণবন্ত হতে হবে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-48