১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় উল্লিখিত সংখ্যক বাড়ি তৈরির অনুমোদন এল অবশেষে। প্রায় আটমাস পরে এরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কেন্দ্রীয় বরাদ্দের জট কাটল। বারবার দুর্নীতির জালে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়া রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতে অত্যন্ত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিপুল সংখ্যক গৃহ নির্মানের কঠিন এক পরীক্ষায় রাজ্য সরকারকে ফেলে কেন্দ্র অনুমোদনের ছাড়পত্র দিল বেশ কিছু কন্টকিত শর্তের বিনিময়ে। অন্যতম প্রধান শর্ত হল, নিয়ম মেনে বাড়ির কাজ করতে হবে — না হলে ধার্য করা হবে জরিমানা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারলে বাড়ি পিছু করা হবে জরিমানা। আর, সেই জরিমানার টাকা কেটে নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের প্রশাসনিক তহবিল থেকে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়া এখন সময়ের অপেক্ষায়। আর, বলাই বাহুল্য, ২০২৪’র সাধারণ নির্বাচনের আগে সামনের বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচন বিশেষ রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করছে। গ্রামাঞ্চলে রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য তাই মোদী সরকার ঠিক এই সময়টাকেই বেছে নিল। ২৩ নভেম্বর পুরুলিয়ার লুধুড়কা গ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় এক জনসভায় মিঠুন চক্রবর্তী প্রতিশ্রুতি দেন যে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের বাড়ি তৈরির টাকা দেবে। ঠিক তার পরের দিনই রাজ্যের কোষাগারে ঢুকে পড়ে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্প অনুসারে, রাজ্য ও কেন্দ্র দেবে যথাক্রমে ৪০ ও ৬০ শতাংশ টাকা। সেই অনুসারে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার বাড়ি তৈরির জন্য রাজ্য সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বাবদ সেই টাকা পেয়েছে। তবে বাড়ির প্রাপকদের তালিকা ত্রুটি মুক্ত করতে রাজ্য সরকারই উপভোক্তা নির্বাচনে ১৫ দফা শর্ত আরোপ করেছে। বিভিন্ন সময়ে ওই শর্তগুলো মেনেই গরিব মানুষদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে আবাস প্লাস তথ্যভান্ডারে। প্রতিটি গ্রাম ধরে এই তথ্যভান্ডারে ৪৯ লাখ ২২ হাজার নাম নথিভুক্ত হয়েছে।
তৃণমূলের শাসনকালে রাজ্যবাসী প্রত্যক্ষ করেছে দুর্নীতিই এই সরকারের শাসনতন্ত্র হয়ে উঠেছে। নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির দগদগে ঘা নিয়ে গোটা শিক্ষা দপ্তরই জেলখানায় বন্দি, যা এই রাজ্যে বিরল। একশ দিনের কাজে পুকুর চুরি, গ্রামাঞ্চলে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া তৃণমূলের ক্ষমতাসীন হোমড়া-চোমড়াদের কায়েমি স্বার্থান্বেষীর দল ও নিজেদের নাম ঢুকিয়ে নিয়েছে এই আবাস প্রকল্পে। আর কে না জানে, কাটমানি ছাড়া একটা প্রকল্পেরও সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়না। সিএজি রিপোর্টও দেখাল, কেন্দ্রীয় সরকারের আবাস প্রকল্পকে ‘বাংলার বাড়ি’ নাম দিয়ে মমতা সরকার যে কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তাতেও শেষ রক্ষা হল না। তাই এবার উপভোক্তাদের উপযুক্ততা যাচাই করতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। আর এই কাজটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। ২৩টি জেলাকে দৈনিক ২২ হাজার উপভোক্তার উপযুক্ততা যাচাই করে অযোগ্যদের বাদ দিতে হবে। দিনরাত এক করে ২৪ ঘণ্টা কাজ করলেও দৈনিক ২২ হাজার উপভোক্তার দাবি যাচাই করা খুবই কঠিন। এবার এই কাজে পঞ্চায়েত কর্মী, আশা কর্মী, সরকারি আধিকারিকদের যুক্ত করা হয়েছে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা হেনস্থার শিকার হয়েছেন, একজন আশাকর্মী আত্মঘাতীও হয়েছেন। যে আশাকর্মীদের নেই সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি, যাঁদের নেই ন্যূনতম মজুরি ও কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা, তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হল অমানুষিক কাজের বোঝা পারিশ্রমিক ছাড়াই। পঞ্চায়েত সচিবকে মাথায় বসিয়ে গোটা কর্মকাণ্ডকে সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন ও পরিচালিত করতে তৈরি হয়েছে এক টাস্ক ফোর্স।
নির্বাচন বড় বালাই। আর তাই, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নিজ নিজ রাজনৈতিক স্বার্থে আবাস যোজনার প্রকল্পটি নামিয়ে আনল ভোট কুড়োনোর লক্ষ্যে। জনতার হিতৈষী সেজে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের নানা প্রান্তে হানাহানি, প্রাণনাশের উদ্বেগজনক খবরাখবর আসছে। এই প্রকল্পের প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক ময়দানে কিভাবে আছড়ে পরছে, তাই দেখার ভবিষ্যতে।