প্রতিবেদন
কাতার বিশ্বকাপে মহিলা রেফারি — লিঙ্গ সচেতনতায় ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
an important step forward in gender awareness

২ ডিসেম্বর ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে জার্মানি খেলতে নামল কোস্টারিকার বিরুদ্ধে। গ্রুপ লিগের ম্যাচ। মাঠে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক আর টিভির পর্দায় থাকা কোটি কোটি চোখ সেদিন এক নতুন অধ্যায়ের সুচনা হতে দেখলেন বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে। এই প্রথম বিশ্বকাপের মূল পর্বের আসরে পুরুষদের খেলা পরিচালনা করলেন এক মহিলা রেফারি। তাঁর নাম স্টিফানি ফ্রাপার্ট। ফ্রান্সের এই রেফারির সঙ্গী ছিলেন দুই লাইন্স পার্সন — ব্রাজিলের নিউজা ব্যাক আর মেক্সিকোর কারেন ডিয়াজ। রেফারির সাহায্যকারীদের লাইন্সম্যান বলে ডাকার রীতিটিকেই এইসূত্রে এবার তুলে দিয়ে নতুন শব্দবন্ধ নিয়ে আসার দরকার পড়ল। লাইন্স পার্সেন বা লাইন্স অফিসিয়াল জাতীয় শব্দ ব্যবহৃত হল দুনিয়া জুড়ে। নিঃসন্দেহে এটি খেলার দুনিয়ায় লিঙ্গসচেতনতা ও সাম্যের নিরিখে এক বিরাট মাইলস্টোন।

বিশ্বজুড়ে চলমান মহিলা আন্দোলন ও লিঙ্গ সচেতনতা বিষয়ক প্রচার সমাজ ও ব্যক্তিমনের অনেক পুরনো অভ্যাস ও ধ্যানধারণাকে নিয়মিত বদলে দিচ্ছে। এরই অঙ্গ হিসেবে পুরুষদের ফুটবল খেলায় মহিলা রেফারি ও লাইন্স পার্সনদের ব্যবহারের কথা ভেবেছে ফিফা। এরআগে ২০২০ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগের জুভেন্টাস ও ডায়নামো কিয়েভের এক গুরুত্বপূর্ণ খেলায় রেফারির দায়িত্ব পালন করেছিলেন ফ্রাপার্ট। তারও একবছর আগে ২০১৯-এ ইউএফা সুপার কাপে চেলসি বনাম লিভারপুলের খেলা পরিচালনার দায়িত্ব বর্তেছিল তার ওপর। এই বছরেই মহিলাদের বিশ্বকাপ ফাইনালের যে খেলা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর নেদারল্যান্ডের মধ্যে, তারও প্রধান রেফারি ছিলেন এই স্টিফানি ফ্রাপার্ট।

তবে এইসব খেলার চেয়েও বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে মহিলা রেফারি ও লাইন্স পার্সনদের পুরুষদের খেলা পরিচালনার অতিরিক্ত গুরুত্ব আছে। এর বিশ্বজোড়া প্রচার ও তার মধ্যে দিয়ে লিঙ্গ সচেতনার নতুন পাঠের বিস্তার নিঃসন্দেহে এক মাইল ফলক। কাতার বিশ্বকাপে এর আগে মহিলা আন্দোলন ও লিঙ্গ সচেতনতার প্রশ্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আমরা দেখেছিলাম। ইরানের ফুটবলাররা তাদের প্রথম খেলাতেই জাতীয় সঙ্গীতের সময় নীরব থেকে তাদের দেশে চলমান মহিলা আন্দোলনের ওপর তীব্র রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ করেছিলেন। কাতারে সমপ্রেমের অধিকারের ওপর দমনের প্রতিবাদ জানিয়ে অনেক সাংবাদিক ওয়ান লাভ আর্মব্যান্ড পরে মাঠে আসেন। অনেক দেশের ফুটবলাররা এই ব্যান্ড পরতে চাওয়ায় ফিফা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তার বিরুদ্ধে আবার পালটা প্রতিবাদ হয়। জার্মান ফুটবলাররা তাদের খেলার সময় জাতীয় সঙ্গীত চলাকালে মুখে হাত রেখে বোঝাতে চান যে তাদের জোর করে চুপ করিয়ে রাখা হচ্ছে।

বিশ্বকাপ ফুটবলের ওপর দুনিয়াজোড়া প্রচারের আলো থাকে। মহিলা আন্দোলন তথা লিঙ্গ সচেতনতার আন্দোলন এই মঞ্চকে ব্যবহার করে যেভাবে সাহসী বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।

- সৌভিক ঘোষাল

খণ্ড-29
সংখ্যা-49