১৫ ডিসেম্বর ২০২২ গ্রেট ব্রিটেনের নার্স আন্দোলন নতুন এক ইতিহাস গড়ল। লক্ষাধিক নার্স ওইদিন তাঁদের কাজ ছেড়ে ধর্মঘটে সক্রিয়ভাবে যোগ দিলেন, ১০৬ বছরের ইতিহাসে যা আগে কখনো ঘটেনি। নার্সদের দ্য রয়্যাল কলেজ অফ নার্সিং’এর নেতৃত্বে সংঘটিত হল অদ্যাবধি বৃহত্তম এই ধর্মঘট। ইংল্যান্ড, ওয়েলস্ ও নর্থান আয়ারল্যাণ্ডে নার্সরা এই ধর্মঘটে সামিল হন।
নার্সদের এই ধর্মঘটের সমর্থনে গাড়ির চালকেরা সংহতি জানান অভিনব পদ্ধতিতে। ইংল্যান্ড, ওয়েলস্ ও নর্থান আয়ারল্যান্ডে চালকেরা গাড়ির হর্ণ বাজিয়ে, জানালার কাঁচ নামিয়ে ধর্মঘটিদের অভিবাদন জানান। ওই সমস্ত স্থানে পথচারীরা তাঁদের চকোলেট বিতরণ করেন। দেখা গেল বিভিন্ন হাসপাতালের বাইরে নার্সরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এই স্লোগান নিয়ে, “কোভিডের সময়ে তোমরা আমাদের কাজের জন্য করতালি দিয়েছিলে। সময় এসেছে, এখন আমাদের জন্য মুখ খোলো”। অল্প সংখ্যক নার্সদের দিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে গিয়ে কাজের বিরাট বোঝায় তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। তার সাথে রয়েছে বিপুল মূল্যস্ফীতি, যা তাঁদের প্রকৃত মজুরির ক্ষয় ঘটাচ্ছে। হাতে গোনা নার্স দিয়ে কাজ চালানোর ফলে স্বাস্থ্যব্যবস্থাই বিপন্ন হয়ে পড়ছে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, এক একজন নার্সকে চার পাঁচজনের কাজ করতে হচ্ছে। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্য পরিষেবা।
ধর্মঘটিদের বক্তব্য, এই অপ্রিয় সিদ্ধান্ত তাঁরা একান্ত বাধ্য হয়েই নিয়েছেন। সরকার জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতির সাথে সাযুজ্য রেখে নার্সদের বেতন বৃদ্ধি সম্ভব নয়। এদিকে, কোভিডের নামে বিভিন্ন সংস্থা ধাপ্পাবাজি দিয়ে বেশ কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড ঋণ নিয়েছিল, তা মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি শোনা যাচ্ছে, সরকার প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল ব্যয় বৃদ্ধি করবে। জনমতের প্রবল চাপ এমনকি রক্ষণশীল পার্টির তরফ থেকেও সরকারের কাছে নার্সদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা বললেও সরকার অনড়। স্বাস্থ্যসচিব জানিয়েছেন, “প্রতি এক শতাংশ বেতন বৃদ্ধি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৭০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বাড়তি বোঝা বাড়াবে, যা মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলবে।”
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক বলেছেন, “এই ধর্মঘটকে কড়া হাতে মোকাবিলা করতে নতুন কিছু কঠোর আইন আনা হবে যা আগামীদিনে যারা যারা ধর্মঘট বা কর্মবিরতির হুমকি দিয়ে রেখেছে, তাদেরও সবক শেখানো যায়”। ধর্মঘট, কর্মবিরতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন, “ইউনিয়ন নেতারা যদি অবিবেচনাপ্রসূত ধর্মঘট বা কর্মবিরতির মতো পদক্ষেপ নেয়, তবে আমার দায়িত্ব রয়েছে ব্রিটিশ জনতার জীবন-জীবিকা বাঁচাতে কঠোর আইন প্রণয়ন করা। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার পর থেকেই আমি জনগণকে রক্ষা করতে কঠোর আইন প্রবর্তনের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিয়েছি।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই বিবৃতি এল ঠিক একদিন পর, যখন ইউনাইট ইউনিসন ও জিএমবি ইউনিয়ন — যারা সম্মিলিতভাবে অ্যাম্বুলেন্স চালক, প্যারামেডিক্স, ফোনে বিভিন্ন কল গ্রহণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন, জরুরি বিভাগের কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করেন, জানিয়েছেন ডিসেম্বর ২১ ও ২৮ একসাথে কর্মবিরতি পালন করবেন। এর সাথেই ডিসেম্বরের শেষে রেলকর্মী, ডাকবিভাগ, বাস, শিক্ষা কর্মীরাও গোটা ব্রিটেন জুড়েই সর্বাত্মক ধর্মঘটের আগাম বার্তা দিয়ে রেখেছেন।
ব্রিটিশের রাষ্ট্রায়ত্ত সেক্টরের শ্রমিকরা মূল্যস্ফীতির হারের উপরে তাঁদের বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে, যে মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যেই ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানি, পেট্রোপণ্য, গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে গতবছর থেকেই।
সরকারের সমস্ত হুমকিকে তোয়াক্কা না করেই ব্রিটেনের শ্রমিকশ্রেণি তৈরি হচ্ছেন বৃহত্তর লড়াইয়ের জন্য।