তামিলনাড়ুতে মুক্ত হলেন বাঁধা মজুররা
Bonded laborers are freed

তামিলনাড়ুর পশ্চিমের শিল্পোন্নত জেলাগুলোতে শোষণ যেমন পাশবিক রূপের, তেমনি তা চলে অবাধে ও ব্যাপক ধারায়। এখান প্রচুর সংখ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়োগ করা হয় এবং তাদের বাঁধা মজুর করে তোলা এবং জোরজবরদস্তি শ্রম আদায় করাটা একেবারেই নিয়ম হয়ে উঠেছে। এই পরিযায়ী শ্রমিকরা মূলত দলিত ও তফশিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের, এদের মধ্যে কমবয়সী ছেলে-মেয়েরাও থাকে। এই শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয় পোল্ট্রি ফার্মে এবং রঞ্জক দ্রব্য উৎপাদনের কারখানায়, সুতো তৈরির মিলে, বিদ্যুৎ চালিত তাঁতে, পোশাক তৈরির কারখানায়, যেগুলো হল এই জেলাগুলোর প্রধান শিল্প। এদের অজ্ঞতা এবং স্থানীয় ভাষা না জানাটা শোষণের সহায়ক হয়। ট্রেড ইউনিয়ন না থাকা এবং প্রশাসনের অসংবেদিতা এই নির্মম শোষণকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের বাঁধা মজুর করে তোলার পক্ষে পরিস্থিতিকে অনুকূল করে তোলে।

তামিলনাড়ুর নামাক্কাল জেলার কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্মে ছত্তিশগড়ের বস্তার, নারায়নপুর, মহাসামুন্দ জেলা এবং উড়িষ্যা থেকে ৩৭ জন তফশিলি জনজাতির পরিযায়ী শ্রমিক এনে নিয়োগ করা হয়। এই শ্রমিকদের নিয়ে আসে মহারাষ্ট্রের দুই এজেন্ট এবং তাদের তুলে দেওয়া হয় দুই ঠিকাদার প্রকাশ সাহু ও থাংগাভেল’এর হাতে। নামাক্কাল জেলার মোহানুর তালুকের আনিয়াপুরম গ্ৰামের এক পোল্ট্রি ফার্ম সংলগ্ন ভাঙাচোরা বাড়িতে তাদের থাকতে বাধ্য করা হয়, যে বাড়িতে বুনিয়াদি পরিষেবার কোনো বন্দোবস্ত ছিল না। প্রতিদিন বিকেল তিনটের সময় তাদের ভ্যানে তোলা হতো এবং ফেরানো হতো পরদিন রাত দশটায়, এবং গোটা সময়টা কাজ করতে হতো একাধিক পোল্ট্রি ফার্মে।

প্রতিদিন কোনো বিরাম ছাড়াই প্রায় ১৯ ঘণ্টা কাজ করতে হতো, কাজের এই ঘণ্টা বেড়ে কখনও কখনও ৪৮ ঘণ্টাও হয়ে যেত। তারা ৫ ঘণ্টার বিরামও পেত না। তাদের কোনো মজুরি দেওয়া হতো না, বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু খাবার দরকার সেটুকুই শুধু দেওয়া হত। ঘুমোনো এবং বিশ্রামের সময় চাইলে তাদের মারধোর করাও হত। কাজের নির্মম পরিবেশে তারা বাঁধা পড়েছিল, শ্রম আইনের কোনো সুবিধার অধিকারই তাদের ছিল না। তাদের মোবাইল ফোন ও আধার কার্ড ঠিকাদাররা কেড়ে নিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছিল, আত্মীয় এবং প্রিয়জনদের কারুর সঙ্গেই তারা যোগাযোগ করতে পারতো না।

এই পরিস্থিতিতে সাহসী কয়েকজন শ্রমিক সেখান থেকে কোনোক্রমে পালিয়ে নিজেদের গ্ৰামে ফিরে গিয়ে তফশিলি জনজাতি আন্দোলনের নেতাদের গোটা বিষয়টা জানান এবং সেই নেতারা আবার ছত্তিশগড়ের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে বিষয়টা অবহিত করে।

ছত্তিশগড়ের জনজাতি সংগঠন এবং ট্রেড ইউনিয়নের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে নামাক্কাল জেলার বাঁধা মজুরদের মুক্ত করতে এআইসিসিটিইউ এবং আরওয়াইএ’র স্থানীয় ইউনিট সক্রিয় হয়। এআইসিসিটিইউ’র কমরেড সুব্রমানি ও ভেঙ্কটেশ এবং আরওয়াইএ’র কমরেড কালিদাস জেলার কালেক্টরের সঙ্গে দেখা করে একটি অভিযোগ দায়ের করে ঐ মজুরদের মুক্তি এবং শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা-সহ মজুরি ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। জেলা প্রশাসন অভিযোগে গুরুত্ব দিয়ে সক্রিয় পদক্ষেপ করে। জেলা কালেক্টর, তহশিলদার, শ্রমিক ও শিশু শ্রমিক সুরক্ষার অফিসারকে নিয়ে একটা টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয় এবং তারা পরিস্থিতিতে সক্রিয় হস্তক্ষেপে সক্রিয় হয়। যারা ঐ পাশবিক পরিস্থিতিতে বাঁধা পড়েছিল, এবছরের ১৯ অক্টোবর সেই ৩৭ জন বাঁধা শ্রমিকের মুক্তি ঘটে। প্রশাসন শ্রমিকদের নিজ নিজ গ্ৰামে ফিরিয়ে দিতে পরিবহণের ব্যবস্থা করে। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরি ও ক্ষতিপূরণের টাকা জমা হয় এবং বাঁধা মজুর থেকে মুক্তির সার্টিফিকেটও তাদের দেওয়া হয়। যে ঠিকাদাররা গা ঢাকা দিয়েছিল পুলিশ তাদের গ্ৰেপ্তার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনে। শ্রমিকদের আরো চার মাসের মজুরি উদ্ধারের প্রচেষ্টা জারি আছে।

এআইসিসিটিইউ এবং আরওয়াইএ’র জেলা নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে গোটা উদ্যোগটায়, জেলা প্রশাসন এবং ছত্তিশগড়ের জনজাতি কল্যাণ কর্মীদের সাথে সমন্বয় সাধন করেন সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড চন্দ্রমোহন।

খণ্ড-29
সংখ্যা-48