খবরা-খবর
এআইসিসিটিইউ’র ৫ম হুগলি জেলা সম্মেলন

এআইসিসিটিইউ’র ৫ম হুগলি জেলা সম্মেলন গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ চুঁচুড়ার আখনবাজার চৌবে লজে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের প্রয়াত দুই বর্ষীয়ান সংগঠক জয়শ্রী টেক্সটাইলের কমরেড রামপিরীত সিং ও নির্মাণ শ্রমিক কমরেড সুসেন মিত্রের নামে যথাক্রমে সভাগৃহ ও মঞ্চ নামাঙ্কিত করা হয়। মিছিল সহযোগে প্রতিনিধিরা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু রক্তপতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান সাঙ্গ করে প্রতিনিধিরা সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করেন। উদ্বোধনী ভাষণে বাসুদেব বসু ও পরে রাজ্য সভাপতি অতনু চক্রবর্তী, বিসিএমএফ-এর রাজ্য সভাপতি নবেন্দু দাশগুপ্ত তাঁদের বক্তব্যে সাম্প্রতিককালে শ্রমিকদের ওপর সরকার ও মালিক শ্রেণীর বিভিন্ন হামলা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা জুট শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকারের সংগ্রাম, আগামী বছরে অনুষ্ঠিতব্য রাজ্য সম্মেলনের কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করেন। জেলার অন্যতম জুট শ্রমিক নেতা কমরেড সুদর্শন প্রসাদ সিং’য়ের সেরিব্রাল স্ট্রোকে কোমায় চলে যাওয়ার পর সুস্থতার পথে এই সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার ঘটনাকে অভিনন্দিত করে অতনু চক্রবর্তী বলেন, এই ঘটনা যেন সংগঠনের লড়াকু মানসিকতার আরেক ছবি, উপস্থিত প্রতিনিধিরা এই পর্বে হাততালি দিয়ে কমরেড সুদর্শন প্রসাদ সিং ও তাঁর প্রিয় সংগঠন এআইসিসিটিইউ’কে অভিনন্দন জানায়। নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে আরও বক্তব্য রাখেন আইসা’র রাজ্য সভাপতি নিলাশিস বসু, মহিলা নেত্রী ও প্রকল্প শ্রমিক সংগঠক চৈতালী সেন, হাওড়ার জেলা সভাপতি দেবাব্রত ভক্ত, আয়ারলা ও আইসা’র হুগলি জেলা সংগঠক শেখ আনারুল ও অনুপম রায়। নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি প্রতিনিধিরাও তাঁদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, সুখ দুঃখের দিনলিপির বাস্তব প্রতিবেদন তুলে ধরেন। সংগঠনের মূল ভিত্তি জুট, নির্মাণ, টেক্সটাইল, মিড-ডে-মিল, পরিবহন (বাস) শ্রমিক ছাড়াও অসংগঠিত শিল্পের বেশ কিছু শ্রমিক এবং বিদ্যুত ও রেল শিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন এমন কর্মচারীরাও হাজির হয়েছিলেন।

প্রায় ১৫০ জন প্রতিনধিদের মধ্যে মহিলাদের অংশগ্রহণও ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রতিনিধিসংখ্যা ও তারমধ্যে ২০ শতাংশ মহিলা উপস্থিতির দুই মাপকাঠিই অতিক্রম করতে সক্ষম হয় এই সফল সম্মেলন। জুট শিল্পের সমস্যার কথা যেমন পুরুষ শ্রমিকরা বলেছেন তেমনি বন্ধ জুট মিলের মহিলা শ্রমিক ও আত্মহত্যায় বাধ্য হওয়া শ্রমিকের মায়ের আর্তিশোনা গেছে। শোনা গেছে স্বল্প মজুরির মিড-ডে-মিল প্রকল্পের রন্ধনকর্মীর দুঃখের বারোমাস্যা, নির্মাণ শ্রমিক কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটের বাস শ্রমিকদের অসহায়তার কথা। সম্মেলন স্থির করে এই সমস্ত শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আগামী মার্চ মাসে এক দাবিসনদ প্রস্তুত করে এক শ্রমিক জমায়েতের মাধ্যমে তিরিশ হাজার সই সম্বলিত স্মারকলিপি জেলা শাসককে দেওয়া হবে। সম্মেলনে গণসঙ্গীত গেয়ে শোনান প্রশান্ত নাথ। শ্রমকোড বাতিল, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের একাদশ পার্টি সম্মেলনকে সফল করে তুলতে তার বার্তাকে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেবার মতো প্রস্তাবনা গৃহীত হয়। সম্মেলনে ১৫ জনের কার্যকরী কমিটি সহ ২৭ জনের কাউন্সিল গঠিত হয় যার সম্পাদক হিসেবে বটকৃষ্ণ দাস পুণরায় নির্বাচিত হন। সকলে মিলে আন্তর্জাতিক সঙ্গীত গেয়ে সম্মেলন শেষ হয়, সম্মেলন শেষে রাজ্য ও জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে লালঝান্ডার এক মিছিল শ্রমিকদের দাবিগুলোর পাশাপাশি নিয়োগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও সফল পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে স্লোগান তুলে সম্মেলন স্থল থেকে চুঁচুড়ার ঐতিহ্যশালী স্থান ঘড়ির মোড় পর্যন্ত পরিক্রমা করে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-50