“বেয়নেট হোক যত ধারালো, কাস্তেটা শান দিও বন্ধু” — সেই শানিত কাস্তের প্রতীক লাঞ্ছিত লাল নিশানের ঢেউয়ে প্লাবিত হল চন্দননগর, ১৪ নভেম্বর বেলা এগারোটা। চন্দননগর রেলস্টেশন থেকে হাজার হাজার কিষাণ-কিষাণীর হাতে আন্দোলিত রক্ত পতাকার লাল লাভাস্রোতে ভেসে বিশাল মিছিল এগিয়ে চলেছে রবীন্দ্রভবনের দিকে। পাঞ্জাব থেকে আসাম, ত্রিপুরা থেকে তামিলনাড়ু — গ্রামীণ ভারতের গোটা মানচিত্রটাই যেন উঠে এসেছে চন্দননগরের রাজপথে। উৎসুক চোখে দোকানপাট ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে শহরবাসী প্রত্যক্ষ করছেন এই লাল মিছিল। অনেকে এগিয়ে এসে ক্যামেরাবন্দী করছেন গ্রামীণ মেহনতীদের স্পর্ধিত অভিযানকে। অবশেষে মিছিল উপস্থিত হয় রবীন্দ্রভবন সম্মেলন স্থলে।
বেলা একটায় রক্তপতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা ঘটল আয়ারলা (সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি)-র ৭ম সর্বভারতীয় সম্মেলন। এরপর ‘কানাইলাল দত্ত, রাসবিহারী বসু, নজরুল ইসলাম মঞ্চে’ (রবীন্দ্রভবন) শুরু হয় সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পার্টির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পার্টির বর্ষীয়ান নেতা পলিটব্যুরো সদস্য স্বদেশ ভট্টাচার্য, কার্তিক পাল; আয়ারলার সর্বভারতীয় সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে রামেশ্বর প্রসাদ ও ধীরেন্দ্র ঝা, বিহার বিধানসভার সদস্য গোপাল রবিদাস, সত্যদেব রাম, বীরেন্দ্র গুপ্ত, মেহবুব আলম; সারা ভারত স্কিম ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেত্রী শশী যাদব, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, পার্থ ঘোষ, অরিন্দম সেন সহ পার্টির অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের নেতা অমিয় পাত্র, পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতির নেতা স্বপন গাঙ্গুলী এবং চন্দননগরের বিশিষ্ট নাগরিক, বন্ধ ও রুগ্ন শিল্পের শ্রমিকদের আইনি সহায়তার কাজে যুক্ত সমাজকর্মী তথা পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। এই অধিবেশনে পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের শিল্পীদল প্রথমে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। প্রকাশ্য অধিবেশনে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে স্বাগত ভাষণ দেন আয়ারলার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক সজল অধিকারী। এরপর বক্তব্য রাখেন অমিয় পাত্র। তিনি বিজেপি-আরএসএস-এর সর্বগ্রাসী হামলার বিরুদ্ধে কৃষি ও গ্রামীণ মজুরদের স্বার্থে সংগ্রামরত সমস্ত সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। স্বপন গাঙ্গুলী তাঁর বক্তব্যে “ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সঙ্গে শ্রেণীচেতনাকে যুক্ত করার” আহ্বান জানান। বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার মর্মস্পর্শী বিবরণ তুলে ধরেন এবং তাদের স্বার্থে লড়াইয়ে তিনি আয়ারলা সহ লড়াকু সংগঠনগুলির পাশে থাকার আশ্বাস দেন। শশী যাদব কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের হয়রানির ঘটনাবলি তুলে ধরার পাশাপাশি আশা, অঙ্গনওয়ারি ও মিড-ডে-মিল মহিলাদের জ্বলন্ত সমস্যা ও সেগুলির প্রতিকারের ইতিবৃত্ত মেলে ধরেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আইসার রাজ্য সম্পাদক নীলাশিস বসু এবং আরওয়াইএ নেতা নীরজ কুমার। সবশেষে অধিবেশনের প্রধান বক্তা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য আয়ারলার গঠন, তার এগিয়ে যাওয়া ও আন্দোলনের কাহিনী শোনানোর পাশাপাশি সমকালীন রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে মূল্যবান বিশ্লেষণগুলি তুলে ধরেন। দীপঙ্করের বক্তব্যের মধ্যদিয়ে প্রকাশ্য অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে।