ভারতের ২ কোটি মহিলা কর্মসংস্থান থেকে দূরে, ৫০ শতাংশের বেশি মহিলা চাকরি চাইছেন না, উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে। সিএমআইই (সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি) মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ৯০ কোটি মহিলাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মহিলা বলছেন, দেশে বৈধ চাকরি না থাকার দরুণ মহিলারা চাকরি চায় না, উপযুক্ত চাকরির অভাবে হতাশাও বেড়েছে।
২০১৭ থেকে ২০২২’র মধ্যে ২ কোটি মহিলা অদৃশ্য হয়ে গেলেন কাজ থেকে, ৯ শতাংশ কাজ ছেড়ে দিলেন উপযুক্ত কাজ বা পদমর্যাদা না পাওয়াতে। ঠিক এই সময় কর্মক্ষমতার হার নিচে নেমে যায় ৪৬ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে। কমবয়সীদের ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়া রীতিমতো দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে, বেকারত্ব ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে।
হরিয়ানাতে বেকারত্বের হার মার্চে ছিল ২৬.৭ শতাংশ, রাজস্থানে ও জম্মু-কাশ্মীরে ২৫ শতাংশ, বিহারে ১৪.৪ শতাংশ, ত্রিপুরাতে ১৪.১ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গে ৫.৬ শতাংশ। মহিলারা ব্যাপক মাত্রায় কাজহারা হয়েছেন। জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ মহিলারা অর্থনীতিতে মাত্র ১৮ শতাংশ অবদান রাখেন, যা বিশ্বের গড় থেকে অর্ধেকেরও কম।
সিএমআইই’র সাথে সেন্টার ফর ইকনমিক ডেটা অ্যান্ড অ্যানালিসিস’এর যৌথ রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় মহিলাদের কর্মসংস্থান ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। কোভিডের আগে ও পরে ভারতের জাতীয় গড় অনুযায়ী ২০২১ সালে নারীদের কর্মসংস্থান ছিল ২০১৯’র তুলনায় ৬.৪ শতাংশ কম। শহরাঞ্চলে মহিলাদের কর্মসংস্থান ২০১৯’র তুলনায় ২২.১ শতাংশ কমে যায়। ২০১৯-২০২০’র তুলনায় ২০২১ সালে মহিলাদের কাজ খোঁজার তাগিদ দারুণভাবে নিচের দিকে নেমে যায়।
পরিসংখ্যান বলে, তামিলনাডু, গোয়া, জম্মু-কাশ্মীর ও পঞ্জাব — এই চারটি রাজ্যে মহিলাদের মাসিক কর্মসংস্থানের হার ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে।
২০১৯ সালে প্রায় ৯৫ লক্ষ মহিলা প্রতি মাসে কাজের খোঁজ করলেও ২০২০ সালে তা নেমে দাঁড়ায় ৮৩ লক্ষে আর ২০২১এ আরও অনেকটা নেমে যায় ৬০ লক্ষ ৫২ হাজারে। গ্রাম ও শহরে একই ধারা লক্ষ্য করা যায়।
পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (২০১৭-১৮) যা ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হয়, তার থেকে জানা যাচ্ছে যে মহিলাদের কাজের বাজার থেকে উৎখাত হওয়াটা অকল্পনীয় হারে বেড়েছে। কর্মপ্রত্যাশীদের সংখ্যা নিরন্তর বেড়ে চললেও নরেন্দ্র মোদী সরকার তাদের চাকরি দিতে পারছে না। ২০২০ সালের ম্যাকিনসে গ্লোবাল ইন্সটিটিউটের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক জাতীয় আয়কে ৮-৮.৫ শতাংশ হারে বাড়াতে ভারতের অন্তত ৯ কোটি নন-ফার্ম কাজ দরকার।
সিএমআইই’র রিপোর্ট আরও দেখিয়েছে, বিগত তিন বছরে বেকারত্বের হারও ৮ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করলেও ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে প্রথম লকডাউনে তা একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। তারপর এই হার একটু কমলেও ২০২১ সালের মে মাসে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তা আবার বেড়ে ১৫ শতাংশে পৌঁছায়।
আর্থিক বৃদ্ধি ঘটাতে হলে মহিলাদের কর্মসংস্থানের হার অনেক বাড়াতে হবে, তারজন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে সেইমতো পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, যা নিদারুনভাবে অনুপস্থিত। মহিলাদের কর্মসংস্থানের বিশেষ দাবিকে সামনে রেখে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।
- স্বপ্না চক্রবর্তী