মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাসের প্রাক সভায় বলেছেন, সবাই সাবধান, দল এবং সরকারের মানসম্মান নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করবেন না, এবার থেকে সবার ওপর তাঁর নজরদারী থাকবে। এখন কথা হল, এ জাতীয় কথাবার্তা মানুষের কাছে বারবার অন্তঃসারশূন্য প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।
দুর্নীতির নষ্টামী তৃণমূল ক্ষমতায় আসার প্রায় পরপর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। সারদাকে বিজ্ঞাপিত করতে তৃণমূলের ডাকাবুকো নেতা থেকে শুরু করে দলঘনিষ্ট বুদ্ধিজীবী মায় মিডিয়ার তাঁবেদার লোকজন পর্যন্ত উঠেপড়ে লেগেছিল। সারদা থেকে নারদ কেলেঙ্কারীতে হাতে গোনা ক'জন নেতা-মন্ত্রী কেস খেয়েছেন, কেউ কেউ হাজতবাস করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তিতেও কালি লেগেছে, সারদার চিটফান্ডের টাকায় মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কিনতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে, নারদের টাকা খাওয়ার ভিডিও এখনও সত্য প্রমাণ না হলেও মিথ্যা প্রমাণ হয়ে যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী সারদার কেলেঙ্কারীর প্রকৃত সত্যানুসন্ধানের চ্যালেঞ্জ নিতে পারেননি, আশ্রয় নিয়েছিলেন ধূর্তামীর, সরকারের টাকায় চিটফান্ড ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করার পেছনে কোনো মমতার লেশমাত্র ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল ঐ কেলেঙ্কারির সাথে শাসকদলের কোনো সম্পর্ক না থাকার প্রসাধনী প্রলেপ দিতে। হ্যাঁ, তারপরেও মমতা সরকার ২০১৬-তে শাসন ক্ষমতায় ফিরেছিল। কিন্তু তার কিছু বিশেষ অনিবার্য পরিপ্রেক্ষিত ছিল, কয়েক দশকের বামফ্রন্টের পতন হয়েছে, তার পাঁচ বছরের ব্যবধানে তৃণমূলের সামনে অন্য কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না, থাকলে মুশকিল হোত, কিন্তু তার মানে এটা প্রমাণ হয়ে যায়নি যে তৃণমূল ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে গিয়েছিল। দুর্নীতির লাগাতার অভিযোগ হিসাবে “তোলাবাজি” ধিক্কার প্রথম থেকেই উঠে আসছে। তারপরে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে যে তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছে তার পেছনে এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল বাংলার বুকে ফ্যাসিবাদী বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার প্রবল রণধ্বনি।
আজকের উন্মোচিত শতকোটি টাকার পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি অল্পদিনে হয়নি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর গোপন মজুত থেকে এমনও বেনামী সম্পত্তির দলিল উদ্ধার হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে যার সময়টা ২০১২ সাল। অর্থাৎ ক্ষমতায় আসার পরপরই। এবং এই অপার দুর্নীতি নিছক ‘অপা’র সুপরিকল্পিত হতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে এর নেটওয়ার্ক বিশাল। নিচের তলায় তার কিছু কিছু আড়কাঠির তথ্যও সামনে আসছে। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীসভা, তৃণমূল দল, পুলিশ-প্রশাসন কর্তৃপক্ষ, কোনো পক্ষই এর দায় থেকে নিস্তার পেতে পারেন না। একটা সরকার ‘পরিবর্তন’ নিয়ে আাসার ভঙ্গীসর্বস্বতা দেখিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, আর আজ সেই সরকারের ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকার বেআইনি লুটের কারবার ধরা পড়ছে। এর জবাব দিতেই হবে।