খবরা-খবর
রন্ধনকর্মী আন্দোলন : চাই অধ্যবসায়, ব্যাপক সমাবেশ
Cooks Movement

হুগলির পোলবা-দাদপুর ব্লকের পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড-ডে-মিল) ইউনিয়নের সদস্যরা ২৮ জুলাই বিডিও-কে ডেপুটেশন দিলেন। স্কুলে সময়মতো রান্না করা, ছাত্রদের খাওয়ানো, বাসন মাজা, রান্না ঘর পরিষ্কার করা — সব কাজ সেরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাঁরা ঠিক বিকেল তিনটের মধ্যে পৌঁছে যান বিডিও অফিসে। মূল দাবি ছিল, শাসক দলের দাদাদের নানা অজুহাতে (রান্না খারাপ হচ্ছে, ষাট বছর হয়ে গেছে আর কাজ করতে পারছোনা ইত্যাদি) ছাঁটাই করার চক্রান্ত হুমকির অবসান এবং কর্মক্ষেত্রে অন্যান্য সমস্যার সমাধান।

পঞ্চায়েত নির্বাচন যত কাছে আসছে ভোটব্যাঙ্ক ভরাতে কর্মরত কর্মীদের হটিয়ে দলের লোক নিযুক্ত করার বদমাইশি বাড়ছে সর্বত্র। অথচ সরকারি সার্কুলার বলছে উপযুক্ত কারণ বা প্রমাণ ছাড়া কাউকে ছাঁটাই করা যাবেনা। স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের নোটিশ অনুযায়ী মিড-ডে-মিল প্রকল্পের যাবতীয় দেখভাল করবেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা টিচার ইনচার্জ। স্কুল কর্তৃপক্ষ কিন্তু কর্মীদের সম্পর্কে চট করে কোনো অভিযোগ আনেন না। বাইরে থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়, আর কর্মীরাও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

যৎসামান্য ভাতায় দুর্মূল্যের বাজারে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই তাঁরা দাবি তুলেছেন প্রত্যেক রন্ধনকর্মীকে একশো দিন কাজের জব কার্ড বিডিওকেই দিতে হবে কারণ এলাকার পঞ্চায়েতের বক্তব্য রন্ধনকর্মীরা নাকি সরকারি কর্মচারী (কী নির্লজ্জ রসিকতা — ১,৫০০ টাকায় এবং বিনা নিয়োগপত্রে সরকারি কর্মচারী!) তাই তাঁদের এই প্রকল্পে কাজ দেওয়া যাবে না। মিড-ডে-মিল আধিকারিক বলেন, এরকম কোনো বিধি-নিষেধ সরকারের নেই। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, রন্ধন কর্মীদের একশো দিন কাজের সাথে যুক্ত করা হবে যদিও এখনো তা ফাঁপা প্রতিশ্রুতি রয়ে গেছে।

লকডাউনের আগে ও পরে জেলা প্রশাসন থেকে এই ব্লকের রন্ধন কর্মীদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল বিডিও অফিসে (রান্না শেখানো, ছাত্রদের পরিচর্যা কিভাবে করা হবে, পরিছন্নতা ইত্যাদি)। সেইসঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছিল ট্রেনিং প্রাপ্তদের ৫০০ টাকা ও সার্টিফিকেট দেওয়া হবে কিন্তু এখনো তা দেওয়া হয়নি। দ্রুত সেগুলো মিটিয়ে দেওয়ার দাবি রাখা হয়। ভাতা বৃদ্ধি, দশ মাস নয় বারো মাসের ভাতা, সরকারি কর্মচারী স্বীকৃতি, উপযুক্ত কারণ ছাড়া ছাটাই বন্ধ করা, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ, ইএসআই ও‌ পেনশন ইত্যাদি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে — এই দাবিগুলোও তোলা হয়।

রন্ধনকর্মীদের সমস্ত দাবি এবং সমস্যাগুলো বিডিও ন্যায়সঙ্গত বলে মেনে নেন। প্রতিশ্রুতি দেন, ওনার পক্ষে যেসব দাবি পূরণ করা সম্ভব সে বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। উপস্থিত সমস্ত প্রতিনিধিদের সাথে দীর্ঘ সময় নিয়ে আন্তরিকতার সাথে আলোচনা করেন। আধিকারিকরাও তাঁদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিনিধিরা বলেন তিন মাস পর আমরা আবার আসবো। আধিকারিকরা বলেন অবশ্যই, এই ফলো-আপটা খুব জরুরি।

বিডিওতে ডেপুটেশন ও অফিসের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শনে‌‌র পর বিভিন্ন দাবিতে প্ল্যাকাড হাতে এলাকায় মিছিল করা হয়, মিছিল থেকে শ্লোগান ওঠে রান্নার গ্যাস সহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে,‌ দুর্নীতিগ্রস্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী‌ পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারি‌র বরখাস্ত ও এসএসসি এবং টেট প্রার্থীদের নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে। সমগ্র কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সবিতা পাখিরা, সন্ধ্যা দাস, পম্পা আদক ও জেলা সভানেত্রী চৈতালি সেন।

ডেপুটেশনে ভালো সাড়া পেয়ে এবং বাইরে বিক্ষোভ ও মিছিলে পথচলতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরে রন্ধনকর্মীরা যথেষ্ট উৎসাহিত হন। তাঁরা উপলব্ধি করেন, এআইসিসিটিইউ’র সংযুক্ত (অ্যাফিলিয়েটেড) ইউনিয়নের পতাকাতলে জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বেশি বেশি কর্মীকে সামিল করে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েই আমাদের ন্যায়সংগত দাবি আদায় করা সম্ভব।

খণ্ড-29
সংখ্যা-30