গত ১৬ মে দিল্লীতে ‘জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প’ বিষয়ক একটি সর্বভারতীয় কনভেনশনে সামিল হয়েছিল ভারতের কৃষিক্ষেত্রে মজুর ও অন্যান্য গ্রামীণ শ্রমিকদের ৫টি সর্বভারতীয় সংগঠন। নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির এই সময়পর্বে কর্মহীনতা ও মজুরি সংকোচনের আঘাত যখন মেহনতিদের উপর নেমে আসছে, ঠিক সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকার ও অধিকাংশ রাজ্য সরকার কর্মসংস্থানের সংকোচন করছে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতেও। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নীতিগত নয়া পরিবর্তন গ্রামীণ মেহনতিদের আরও বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ৫টি সংগঠন এআইএডব্লিউইউ, পিবিকেএমএস, আয়ারলা, এআইএসকেএস এবং বিকেএমইউ স্থির করে, ১ আগস্ট ‘জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প’ সংক্রান্ত অব্যবস্থা সহ কৃষিমজুরদের জীবন-জীবিকার সংকটকে সামনে তুলে ধরতে দেশজুড়ে মেহনতিদের বিক্ষোভ সংগঠিত হবে।
পরবর্তীতে ৮ জুলাই এই রাজ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য, ১ আগস্টের কর্মসূচি এবং পরবর্তীতে সংযুক্ত আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। রাজ্যের কর্মসূচিতে সামিল হয় আরও একটি সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি’। ১ আগস্ট রাজ্য জুড়ে হাজার হাজার গ্রামীণ খেটে খাওয়া মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথে নামেন। সর্বত্র শ্রমজীবি মহিলাদের অংশগ্রহণ ও অগ্রণী ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। গ্রামীণ শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার দিশায় এই কর্মসূচি ছিল এক জোরালো পদক্ষেপ।
পুরো রিপোর্ট
গত ১ আগস্ট এরাজ্যের হুগলি, নদীয়া, জলপাইগুড়ি, উত্তর ২৪ পরগণা, বাঁকুড়া জেলায় গ্রামীণ মেহনতিদের সংগঠনগুলির যৌথ আন্দোলন গড়ে ওঠে। এছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া এবং বর্ধমান জেলায় আয়ারলা স্বাধীন প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করে।
বাঁকুড়া জেলায় জেলাশাসকের কাছে প্রতিনিধি ডেপুটেশনে সামিল ছিল ৫টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা। আয়ারলার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন আয়ারলা জাতীয় কার্যকরী কমিটি সদস্য বাবলু ব্যানার্জী। পরে শহরের ভাদুল মোড়ে যৌথ পথসভা সংগঠিত হয়। আয়ারলার পক্ষে বক্তব্য রাখেন কমরেড বাবলু ব্যানার্জী। জলপাইগুড়ি শহরে সদর বিডিও দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় সংযুক্ত কিষান সভার ব্যানারে। এই উদ্যোগে এফবির সংগঠন ছাড়া অন্য সংগঠনগুলি সামিল হয়। এছাড়াও সামিল ছিলেন সিপিআই(এমএল) রেডস্টার সংগঠনের সাথীরা।
আয়ারলার পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন আয়ারলা জাতীয় কার্যকরী কমিটি সদস্য শ্যামল ভৌমিক ছাড়াও রাজ্য কমিটি সদস্য হিমাংশু মজুমদার, জেলানেতা প্রদীপ দেবগুপ্ত, প্রশান্ত ভৌমিক প্রমুখ। এখানে বকেয়া মজুরি প্রশ্নে বিডিওকে ঘেরাও করা হলে তিনি এই বকেয়া মজুরি প্রাপকদের চিহ্নিত করা ও পরবর্তী উদ্যোগে সহায়তার আশ্বাস দেন। জবকার্ড যাতে জবকার্ড হোল্ডারদের হাতেই থাকে, এজন্য সার্কুলার করার প্রতিশ্রুতি দেন। নদীয়া জেলায় কৃষ্ণনগর জেলাশাসক দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। সভায় আয়ারলার পক্ষে বক্তব্য রাখেন নদীয়া জেলা আয়ারলা নেতা কমরেড আনসারুল হক। এছাড়াও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটি সদস্য জীবন কবিরাজ বক্তব্য রাখেন। জেলাশাসকের কাছে ডেপুটেশনে অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন আয়ারলা জাতীয় কার্যকরী কমিটি সদস্য কমরেড প্রদীপ দত্তগুপ্ত। এখানে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সমর্থকদের বড় সংখ্যায় উপস্থিতি ছিল। উত্তর ২৪ পরগণার গাইঘাটা বাজারে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন এবং আয়ারলা সহ ৩টি মেহনতি সংগঠনের যৌথ মিছিল সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে গাইঘাটা থানার সামনে পথসভা সংগঠিত হয়। আয়ারলার পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন আয়ারলা জেলা সম্পাদক অজয় বসাক ছাড়াও আয়ারলা রাজ্য সংগঠক বাবুনি মজুমদার, এলাকার আয়ারলা সংগঠক কমরেড কমল কর্মকার, বাচ্চু বিশ্বাস প্রমুখ।
হুগলির ধনেখালি ও পোলবা দাদপুর ব্লকে যৌথ আন্দোলন সংগঠিত হয়। পোলবা দাদপুরের পুইনান বাজারে যৌথ মিছিলে সামিল হন আয়ারলা পোলবা দাদপুর ব্লক সম্পাদক গোপাল রায়, গোস্বামী মালিপাড়া পঞ্চায়েত সম্পাদক সাধন মাল। পথসভায় বক্তব্য রাখেন জেলার কৃষক নেতা তপন বটব্যাল।
ধনেখালি বাজারে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন এবং আয়ারলা যৌথভাবে এক উদ্দীপনাময় মিছিল সংগঠিত করে। মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন খেতমজুর ইউনিয়নের জেলা নেত্রী কমরেড বন্যা টুডু এবং আয়ারলা নেত্রী কমরেড শ্রাবণী মালিক। মিছিলের বিশেষ আকর্ষণ ছিল অসংখ্য হাতে তুলে ধরা দাবি সম্বলিত হোর্ডিং।
মিছিলের আগে আয়ারলা স্বাধীন উদ্যোগে ধনেখালি বিডিও দপ্তরের সামনে মনরেগা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারও পূর্বে আদিবাসী বর্গাদারদের অধিকার রক্ষার দাবিতে ভূমি দপ্তরের সামনে জঙ্গি মেজাজে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আয়ারলা সদস্যরা। নেতৃত্ব দেন আয়ারলা রাজ্য কমিটি সদস্য শৈলেন মাজি, ব্লক নেতা অমিয় দাস, জয়দেব বাগ, আর ওয়াই এ রাজ্য নেতা সজল দে এবং আয়ারলা রাজ্য সম্পাদক সজল অধিকারী প্রমুখ।
আয়ারলা স্বাধীন উদ্যোগে মিছিল সংগঠিত করে পূর্ব বর্ধমানের ইসলামপুর বাজারে। মিছিল শেষে ইসলামপুর চৌমাথায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা পোড়ান সংগঠনের সদস্যরা। নেতৃত্বে ছিলেন আয়ারলা রাজ্য সভাপতি সজল পাল ছাড়াও আয়ারলা পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক আনসারুল আমান মণ্ডল।
হাওড়া জেলার বাগনান ব্লকের বাঙালপুর হাটুড়িয়া স্নানের ঘাট এলাকায় আয়ারলা স্বাধীন উদ্যোগে পথসভা সংগঠিত করে। এই সভায় বক্তব্য রাখেন রাজ্য আয়ারলা নেতা নবীন সামন্ত, দিলিপ দে সহ অন্যরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বজবজ এলাকায় তিনটি পঞ্চায়েতের সামনে ১০০ দিনের কাজ, বাস্তু পাট্টা, আবাস যোজনায় ঘর, মেহনতিদের বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। পঞ্চায়েতগুলি ছিল দূর্গাপুর, মায়াপুর ও নিশ্চিন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। নেতৃত্বে ছিলেন আয়ারলা রাজ্য কমিটি সদস্য ইন্দ্রজিৎ দত্ত, আয়ারলা জাতীয় কার্যকরী কমিটি সদস্য দেবযানী গোস্বামী এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটি সদস্যা কাজল দত্ত। এছাড়াও ছিলেন ব্লক আয়ারলা নেত্রী কমরেড মমতাজ এবং কমরেড শ্যামসুন্দর গোস্বামী, আশুতোষ মালিক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।