খবরা-খবর
আলো আর অন্ধকারে জেগে থাকে স্থির দুটি চোখ পথের লড়াই বলে বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!
Anniversary of Charu Mazumder

এবারের ২৮ জুলাই কমরেড চারু মজুমদারের আত্মবলিদানের অর্ধশতক পূর্তিবার্ষিকী। ৫০ বছর আগে ভারতীয় রাষ্ট্র লালবাজার লকআপে বিপ্লবী নেতাকে হত্যা করে ভেবেছিল চারু মজুমদারের মৃত‍্যুর সাথে সাথে শেষ হয়ে গেল নকশালবাড়ি থেকে গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়া বিপ্লবী উত্থানের ঢেউ। কিন্তু পাঁচ দশক পর আজ যখন মোদী সরকার সবরকম প্রতিবাদ দমন করতে চায় তখনও তাঁকে প্রতিবাদীদের ওপর নিপীড়ন নামাতে আমদানি করতে হয় ‘আর্বান নকশাল’ শব্দবন্ধ। স্পষ্টতই, মৃত‍্যুর ৫০ বছর পরেও, নকশালবাড়ি ও চারু মজুমদার আতঙ্ক এখনও ভারতের শাসকদের তাড়া করে ফেরে। আজও ভারতবর্ষের শ্রমিক-কৃষক-ক্ষেতমজুর-ছাত্র-যুব-মহিলা-আদিবাসী-সংখ্যালঘু-জাতিসত্তা আন্দোলন তথা রাজনৈতিক বন্দীমুক্তির লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা কমরেড চারু মজুমদার।

50th Martyrdom Anniversary of CM

পুরো খবর

২৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সিপিআই(এমএল) গঠনের প্রথম সাধারণ সম্পাদক কমরেড চারু মজুমদারের ৫০তম শহীদ বার্ষিকী বিভিন্ন রূপে পালন করা হয়। পার্টির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সংস্থা ‘লিবারেশন’ একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে ‘তেভাগা-নকশালবাড়ি-চারু মজুমদার’। দিল্লীতে পার্টির কেন্দ্রীয় অফিসে কমরেড চারু মজুমদারের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য নেতা-নেত্রী-কর্মবৃন্দ।

পশ্চিমবঙ্গে কলকাতায় পার্টির রাজ্য অফিসে কমরেড চারু মজুমদারের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান সহ শহীদ বেদী প্রাঙ্গনে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া কলকাতা ও জেলায় জেলায় পার্টি অফিসে ও অন্যত্র স্মরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়।

এদিন রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে দুটি বড় কর্মসূচি সংগঠিত হয়। একটি শিলিগুড়িতে, অন্যটি কলকাতায়।

50th Martyrdom of Comrade Charu Mazumder

শিলিগুড়িতে এয়ার ভিউ মোড় থেকে এক সুসজ্জিত মিছিল হিলকার্ট রোড হয়ে বাঘাযতীন পার্ক হয়ে সুভাষপল্লী মোড়ে চারু মজুমদারের মূর্তির পাদদেশে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, রাজ্য কমিটি সদস্য বাসুদেব বসু, দার্জিলিং জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ, জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক ভাস্কর দত্ত, আলিপুর জেলা সম্পাদক চঞ্চল দাস, কুচবিহার জেলা সম্পাদক মুকুল বর্মন সহ বিভিন্ন জেলা নেতৃবৃন্দ। মিছিল থেকে আওয়াজ ওঠে চারু মজুমদারের রাষ্ট্রীয় হেফাজতে হত্যার ৫০ বছর হল। আজও হত্যার বিচার হল না কেন? মিছিলে ফ্যাসিস্ট বিজেপির বুলডোজার রাজনীতি ও দেশজুড়ে এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ চলছে চলবে আওয়াজ ওঠে। দাবি ওঠে রাজ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি ও পরেশ অধিকারীকে বরখাস্ত করতে হবে। সুভাষপল্লীতে চারু মজুমদারের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করে নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পরে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম হলে এক কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মীসভায় মঞ্চে উপবিষ্ট নেতৃবৃন্দ ‘তেভাগা-নকশালবাড়ী-চারু মজুমদার’ নামে পুস্তিকাটি প্রদর্শিত হয়। কর্মীসভায় মোদী রাজের ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’এর বিপরীতে দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার আহ্বান জানানো হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন কার্তিক পাল, অভিজিৎ মজুমদার, পবিত্র সিংহ। সমগ্র কর্মসূচি পরিচালনা করেন বাসুদেব বসু।

50th Martyrdom Anniversary Celebration aisa

২৮ জুলাই কলকাতা আবার প্রত্যক্ষ করল লালঝান্ডার এক দৃপ্ত মিছিল, যে-মিছিল শিয়ালদহ রেল স্টেশনের সামনে থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ধর্মতলায়। এইদিন সকালে দলীয় কার্যালয় এবং বিভিন্ন মহল্লায় পতাকা উত্তোলন ও শহীদ বেদীতে মাল্যদান কর্মসূচি পালন করে কলকাতার মিছিলে যোগ দেন হাওড়া, হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং কলকাতার সাথীরা। নেতৃত্ব দেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য পার্থ ঘোষ, হাওড়া জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্ত, হুগলি জেলা সম্পাদক প্রবীর হালদার, উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা জেলা সম্পাদক অতনু চক্রবর্তী, ছিলেন রাজ্য কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। মিছিলের সামনে ছিল চারু মজুমদারের ছবি এবং লুঠ-সন্ত্রাস-বিদ্বেষ-দমনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শ্লোগান সমন্বিত ব্যানার, অন্ধকারে জেগে থাকা চোখের মানুষটির ছবি আর লালঝান্ডা নিয়ে মহিলারা, তার পিছনে লালে-লাল পতাকা হাতে বাকি পদাতিকেরা। সাংস্কৃতিক কর্মীদের বিপ্লবী গান, ছাত্রছাত্রীদের ছন্দবদ্ধ শ্লোগানে মুখরিত এই মিছিল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এগিয়েছে। রাস্তার দু’পাশের মানুষেরা দেখছেন ও শুনছেন মিছিল থেকে উঠে আসা তেভাগা নকশালবাড়ির বিপ্লবী কৃষক আন্দোলনের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার শপথ, ফ্যাসিবাদকে রোখার আহ্বান, শুনলেন সম্প্রতি পশ্চিমবাংলায় সামনে আসা দুর্নীতি দায়ে জড়িত মন্ত্রীদের বরখাস্তের দাবি। যাঁরা নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছেন তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে মিছিল থেকে ঐক্যের শ্লোগান ওঠে। ইতিমধ্যেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে বিধায়ক কেনাবেচা, কর্পোরেটদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার মতো দুর্নীতির কর্মকান্ডের পান্ডা বিজেপি! পোষ্য মিডিয়া আর পেটোয়া প্রশাসনের বদান্যতা উপভোগ করে বিজেপি। একইসময়ে বিজেপির কর্মসূচি থাকায় পথের যানজটের ফেরে আমাদের পার্টির মিছিলের নির্দ্ধারিত পথ কিছুটা ঘুরপথে পরিবর্তিত হয় — মিছিলে অংশগ্রহণকারী মজা করে বললেও বিপ্লবের পথ তো সত্যিই আঁকা বাঁকা!

দু’ঘন্টার মতো পথ হেঁটে ধর্মতলায় মিছিল পৌঁছানোর পর এক সংক্ষিপ্ত সভা করা হয়। গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের সাথীরা। বক্তব্য রাখেন পার্থ ঘোষ। মিছিল চলাকালীন জানা যায় তৃণমূল মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জিকে মন্ত্রীসভা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পার্থ ঘোষ বলেন, এই বরখাস্ত মমতা ব্যানার্জির কোনো সততার পরিচয় নয়, দীর্ঘদিন ধরে ঘটে চলা এই দুর্নীতির দায়ভার মমতা ব্যানার্জিকে নিতে হবে। পার্থ ঘোষ আরও বলেন ৫০ বছর আগে চারু মজুমদারের হত্যার আজও বিচার হয়নি। চারু মজুমদার জনগণের ক্ষমতায় আস্থা রাখতেন। দেশজুড়ে ফ্যাসিষ্ট শক্তির মোকাবিলায় এবং এরাজ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত শক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার অদম্য চেষ্টার জানান দিয়ে গেলো এবারের ২৮ জুলাই !

খণ্ড-29
সংখ্যা-30