খবরা-খবর
গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ অভিযান এগিয়ে নিয়ে চলুন
from village to village

নদীয়ার রিপোর্ট

গণ সংযোগ অভিযানে গ্রামের বহুসংখ্যক মানুষই আন্তরিকভাবে জানালেন, এই এলাকায় বিকল্প আর কেউ নেই। তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও। সামনে থেকে প্রতিবাদ কর। আমরা তোমাদের পাশে আছি। সংখ্যালঘু প্রধান এই এলাকা পার্টির দীর্ঘদিনের কাজের অঞ্চল। ধুবুলিয়া ব্লকের সোনাতলা পাত্রদহ গ্রামে গণসংযোগে এভাবেই শোনা গেল মানুষের আশা প্রত্যাশার কথা। নতুন করে এ সত্যটাও উঠে এল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে অগ্রণী শক্তির ভূমিকা সর্বদাই নির্ধারক। ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের সুখ দুঃখের কথা জানা বোঝা, কমরেড চারু মজুমদার যাকে বলতেন “একাত্ম হওয়া” – কাজের এই ধারা মানুষের মধ্যে আমাদের সংগঠনের প্রতি ভরসা যোগায়। খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়া গণসংযোগ নতুন করে গড়ে তোলার মাধ্যমে স্থানীয় কর্মীরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। প্রায় ১০/ ১২ দিন ধরে এই এলাকার ৬ টি গ্রামসংসদে গণসংযোগ অভিযানে প্রায় ৫ হাজার সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী আরও দুটি গ্রামে হয়েছে ১ হাজার সদস্য। মোট ৪টি টিম এই কাজে অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি কিছু আন্দোলনমুখী উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কাজ করে টাকা পায়নি এমন মানুষের নামের তালিকা তৈরি করা, আবাস যোজনার দুর্নীতি অনিয়মের নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা, এলাকার রাস্তা ড্রেন প্রভৃতি নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হয়েছে – সে সব কিছুর তথ্য প্রমান সংগ্রহ করা। এ সমস্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে শাসকের মুখোমুখি দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গৃহীত হয়েছে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ ডেপুটেশনের পরিকল্পনা। তৃণমূলের রাজত্বে পঞ্চায়েতগুলিকে প্রায় অচল করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় শাসকদলের মাতব্বরদের বাড়িগুলিই এখন পঞ্চায়েত হয়ে উঠেছে। এই চুড়ান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সমাবেশিত করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়ে, নিয়ম বিধি পাল্টে দিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একে তুলে দিতে চাইছে। কাজের সীমিত অধিকারটুকুও কেড়ে নিতে চাইছে। কৃষিকে তুলে দিচ্ছে কর্পোরেটদের হাতে। এসবের বিরুদ্ধেও প্রচার করা চলছে।

গণসংযোগ অভিযানে ব্যাপক মানুষ প্রধানত শাসক তৃণমূলের দুর্নীতি, দলবাজি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর সীমাহীন বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ বিক্ষোভের কথা জানালেন। সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় উঠে এলো কৃষক ও গ্রামীণ গরিব জনগণের তীব্র সংকটের বাস্তব চিত্র। অথচ এ কথা বহুল প্রচারিত যে এই রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের নানাবিধ সংস্কার ও সন্ত্রাসের কারনে বর্তমানে বিরোধী শক্তির নাকি কোন জায়গা নেই! ব্যাপক জনগণ তৃণমূল আর বিজেপির দ্বারা দ্বিমেরুকৃত হয়ে পড়ছে, অনেকেই সরকারি সুযোগ সুবিধা হারানোর আশংকায় প্রকাশ্যে বিরোধীপক্ষের সাথে থাকতে চাইছেন না। এভাবে শাসকের সপক্ষে সরকারি মিথ্যাচার প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে বারংবার নানাবিধ কায়দায় চটকদারী প্রচার, কিছুটা আবেগ, অনুভূতি, ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রভৃতিকে আশ্রয় করে একটা জনমত তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু গণসংযোগ অভিযানে গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে সম্পূর্ণভিন্ন অভিজ্ঞতা পাওয়া গেল। দেখা গেল “তথ্য থেকে সত্য” অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শাসকের সেই মিথ্যাচারকে উন্মোচিত করে দিতে সক্ষম। লক্ষীর ভান্ডার, কৃষক বন্ধু, স্বাস্থ্যসাথী ইত্যাদি সীমিত কয়েকটি প্রকল্পের যৎসামান্য সহায়তা কৃষকের বঞ্চনা অপ্রাপ্তিকে আর চাপা দিয়ে রাখতে পারছে না।

নাকাশীপাড়া ও চাপড়া ব্লকের তিনটি গ্রামে ৪দিন ধরে সদস্য সংগ্রহ অভিযান সংগঠিত হয়েছে৷ সেখানে উঠে এসেছে কৃষকের জীবন্ত সমস্যাগুলি। এই সময়কালে আকাশে বৃষ্টি নেই, জলের অভাবে যখন পাট ভেজানোর সমস্যায় কৃষকরা হাহাকার করছে, তখন একটি গ্রামে ৫/৬ বিঘা জুড়ে একটা সরকারি খাসের জলা জায়গায় সরকারি রিভার পাম্পের জল দিয়ে পাট ভেজানোর জন্য তৃণমূলের কয়েকজন মাতব্বর পঞ্চায়েতের অনুমোদন সাপেক্ষে বিঘা প্রতি ৪০০/৫০০ টাকা করে নিচ্ছে। এমনিতেই চাষের খরচ বেড়ে গেছে, গতবার এই সময় ১০:২৬ সারের দাম ছিল ২৭ টাকা কেজি, এবার বেড়ে হয়েছে ৪২ টাকা কেজি, ইউরিয়া সাত টাকা কেজি, এবার দশ টাকা কেজি। আগে ৫০ কেজির বস্তা ছিল এখন সেটা ৪৫ কেজির বস্তা হয়ে গেছে, অর্থাৎ ঘুরপথে দাম বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ফসলের ন্যায্য দাম থেকে চাষিরা চরম বঞ্চিত৷ ধানের সরকারি দর থেকে প্রতি কুইন্টালে চাষিদের লোকসান গড়ে ৮০০ টাকা। পাটের সরকারি সংগ্রহ লাটে তুলে দেওয়া হয়েছে। মোদী সরকার সঠিকভাবে এমএসপি নির্ধারণ করছে না। সব্জিচাষেও চাষিরা লাভ পায় না। প্রচন্ড মাত্রায় পারিবারিক শ্রম দিয়ে কোনোক্রমে তাঁদের চাষের খরচা তুলতে হয়। শ্রমের ন্যায্য দামটুকুও ওঠে না। অথচ চাষির আয় দ্বিগুণ বা তিনগুণ বৃদ্ধির কল্পকথা তথা সরকারি প্রচারের ঢাক পেটানো চলছে।

নাকাশীপাড়ার দোগাছি অঞ্চলে দেখা গেল কৃষকের মনে জমে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। এক সময় সিপিআই(এমএল) দলের পক্ষ থেকে এই জলা জায়গায় দখল করে বিনা পয়সায় কৃষকের পাট ভেজানোর ব্যবস্থা করেছিল, সকলের অধিকার ছিল। কৃষকরা বলছে আপনারা মুখ খুলুন, আপনাদের নেতৃত্বে আমরা পঞ্চায়েত, বিডিও দপ্তরে যেতে প্রস্তুত। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আপনাদের দাবি নিয়ে ব্লক দপ্তরে যাওয়া হবে। এছাড়াও উঠে এলো, আবাস যোজনায় আগাম টাকা নিয়েও ঘর না পাওয়ার কথা, ১০০ দিনের কাজে পুকুর সংস্কার না করে ফলক লাগিয়ে টাকা তছরুপের ঘটনা। সেচের জন্য জলঙ্গী নদীর রিভার পাম্পের সেচের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা।

- জয়তু দেশমুখ

খণ্ড-29
সংখ্যা-28