রাজ্যে স্কুল শিক্ষাক্ষেত্রে উন্মোচিত হল নিয়োগ দুর্নীতিতে কামিয়ে নেওয়া গোপনে দেরাজবন্দী করে রাখা কোটি কোটি টাকা। এ নিয়ে রাজ্য রাজনীতি এখন গরম। একদিকে পাঁচশো দিন পেরোনো অবস্থানরত হাজার হাজার শিক্ষা- কর্মপ্রার্থীদের প্রাণান্তকর অবস্থা। শেষ নেই তাদের বঞ্চনা-লাঞ্ছনা-দুঃখ-যন্ত্রণার। ধর্ণা-অবস্থানে মাঝেমধ্যেই নেমে আসে পুলিশী রক্তচক্ষু ও বলপ্রয়োগ, আবার কখনো দেখা দিয়ে প্রবোধ দেন ‘মাননীয়া’। অন্যদিকে যখন সন্দেহাতীত হওয়া যাচ্ছে – বিক্রি হয়েছে চাকরি, আর অভিযোগের কাঠগড়ায় খোদ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী অধুনা শিল্পমন্ত্রী, তখন কর্মপ্রার্থীরা আশা প্রকাশ করছেন দোষীরা শাস্তি পাক, একইসাথে আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার নামে নিয়োগ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে না তো? তাই আরও জোরালোভাবে দাবি তুলতে হবে – কর্মপ্রার্থীদের আর রাস্তায় বসিয়ে রাখা চলতে পারে না। অবিলম্বে যথাযোগ্যতার ক্রমানুসারে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এটা দেখতে হবে রাজ্য সরকারকে ও আদালতকে। এই দাবি কেন্দ্রে রেখে আসা যাক রাজ্য পরিস্থিতির কাটাছেঁড়ায়।
এই দুর্নীতির ঘটনা তৃণমূল সরকারের মুখে চূণকালি লেপে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুললেন অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হওয়ার ক’দিন পরে। তৃণমূলের দু’নম্বর নেতা এবিষয়ে এখনও অন্তরালে। তৃণমূল বস্তুত খোলা রাখছে দু’দিকের দরজা। সম্ভব হলে অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীকে ‘ভুল করার শিকার’, ‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের শিকার’ ইত্যাদি বলে দলে রেখে দিতে পারে, এরকম যে এর আগে কখনও করেনি তা নয়, করেছে, ফের করতে পারে। তা সম্ভব না হলে তখন বরখাস্ত করে দিতে পারে। যে কারণে দলনেত্রী ও তাঁর পারিষদবর্গ বলেই রেখেছেন যদি কিছু ঘটে থাকে তার সাথে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই, দায় নেই, আর অভিযোগ প্রমাণ করতে তদন্ত ও বিচার হোক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, যদি অভিযোগ সত্য প্রমাণ হয় তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হোক, দল দেখতে যাবে না। এসব বলার পেছনে একটাই লক্ষ্য – যে কোনো মূল্যে দলের ভাবমূর্তিকে দুর্নীতির কলঙ্কস্পর্শ থেকে বাঁচানো। তবে এবার সেটা খুব কঠিন। কারণ সে ব্যাপারে নিঃসংশয় হতে হলে দলের ভেতর থেকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ যাওয়ার তথ্য ফাঁস হওয়া ঠেকাতে হবে। এ থেকে নিস্কৃতি অতো সহজে পাওয়ার নয়। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে কিছুই না জানার কথা বলছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্যতা পেতে পারে না। দলের শৃংখলা রক্ষা কমিটির শীর্ষাসনে থাকা নেতামশাই অভিযুক্ত দুর্নীতিতে, সামাল দেওয়া খুব মুশকিল, তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ট বলয়ে থাকা অন্যতম মুখ। আজ বোঝা যাচ্ছে তাঁকে শিক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরানো হয়েছিল দুর্নীতির কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে। বারবার অভিযোগের আঙ্গুল উঠলেও কোন আমল দেওয়া হয়নি। এই দুর্নীতি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই সংঘটিত অপরাধ সংগঠিত হয়েছে ‘সারদা’-’নারদ’ কেলেঙ্কারি, একশ দিনের কাজের মজুরির পুকুরচুরি, গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়া ঘর তৈরির বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ করার ধারায়। সুতরাং কোনো হম্বিতম্বি বা কোনো অজুহাত দেখিয়ে তৃণমূল এই সমস্ত দুর্নীতি থেকে নিজেকে দায়মুক্ত দাবি করতে পারে না।
তৃণমূল আমলে এইসব দুর্নীতির ঘটনায় বিজেপি আবার খুব লাফাতে শুরু করেছে। কিন্তু হিন্দুত্বের বিদ্বেষ-বিভাজন ঘৃণার রাজনীতির কারবারি দল বিজেপি দুর্নীতিতে ভারত সেরা চূড়ামণি। বিজেপি শাসিত কর্ণাটকে রেড্ডী ভাইদের কয়লা খনি বণ্টন কেলেঙ্কারি বা মধ্যপ্রদেশে মেডিক্যাল ছাত্রভর্তি সংক্রান্ত ‘ভ্যাপম কেলেঙ্কারী’র কুকীর্তি হল দৃশ্যমান শিলাখণ্ড মাত্র। কেলেঙ্কারি রয়েছে আরও – বিজেপি হল ‘পি এম কেয়ার্স’ আর ‘ইলেক্টোরাল বন্ড’ ভাঙিয়ে অন্যদলের ‘ঘোড়া’ কিনে চলা কেলেঙ্কারীর মূর্তিমান প্রতীক। অতএব বিজেপিকে এতটুকু ফাঁকা জমি দেওয়া চলবে না।