মোদী এক নতুন চমক দিলেন গত ১০ জুলাই। গুজরাটের সুরাটে প্রাকৃতিক উপায়ে চাষের উপযোগিতা নিয়ে সওয়াল করলেন। বললেন, প্রতিটি পঞ্চায়েত পিছু পঁচাত্তর জন চাষিকে সমবেত করে এই প্রক্রিয়া শুরু হোক। মোদীর বক্তব্য শোনানোর মাধ্যম ছিল ভিডিও কনফারেন্স। তার কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে সেখবর অবশ্য সংবাদ জগতে মেলেনি। মোদীজী মোদ্দা বলেন, ‘মাতৃভূমি’র সেবায় প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদ ফিরিয়ে আনলে আখেরে মাটির উর্বরা রক্ষা ও খরচে সাশ্রয় হওয়ার লাভ আছে। কর্পোরেটের ‘পোস্টার বয়’-বুড়োর মুখে একী মন্ত্রণার কথা! কিন্তু ভারতীয় কৃষিকে তো প্রাক-মোদী জমানার দীর্ঘ পর্ব পর্যন্ত জমিদারী পথে পুঁজিবাদী বিকাশের প্রক্রিয়ায়, তারপর মোদী জমানায় সরাসরি কর্পোরেট হানায় সর্বনাশা সংকটগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় কৃষকের লাগাতার সংগ্রাম, আত্মহত্যা, গণপ্রতিরোধ সবই ঘটে আসছে। এই সেদিন পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে বছরব্যাপী কৃষক আন্দোলন। কৃষকদের দাবি পূরণের কথা দিয়েও কথা রাখেনি মোদী সরকার। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপিকে উতরোতে ‘প্রতিশ্রুতি’র ছলনা করেছিল। তারপরেই ওদের স্বরূপ আবার যে কে সেই। কৃষিতে, জল-জমি- জঙ্গলে অবাধ কর্পোরেট হানাকে মদত যোগানোর নীতি যেমন ছিল তেমনই চলছে। তবু প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদে উপকারিতার গল্প শোনাতে হচ্ছে কেন? যে উপায়ের কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে ‘গোমাতা’কে কেন? কেন বলতে হচ্ছে ‘গোরু’র হাল দেওয়া থেকে শুরু করে মল-মূত্র সহযোগে জৈবসারে চাষ করলে মাটি ও চাষি-মানুষের সুরক্ষা হয়! এভাবে চাষ যে গরিব ও প্রান্তিক চাষিরা একেবারেই করেন না তা নয়। কিন্তু কর্পোরেট পুঁজি নিয়ন্ত্রিত কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহারে পাঁচ দশকের ওপর বাধ্য করার পরম্পরায় প্রাকৃতিক উপায়ে চাষবাসকে রীতিমত প্রান্তিক করে দেওয়া হয়েছে। এখন আবার মোদীর মুখে ওল্টানো গল্প কেন! কারণ, সামনে রয়েছে গুজরাট নির্বাচন। হিন্দুত্বের মেরুকরণের পুনরুত্থানের নতুন চাবিকাঠি চাই। গুজরাট গণহত্যার দায় থেকে আদালতের শংসাপত্র মিলেছে। কিন্তু সেটা যথেষ্ট মনে করা যাচ্ছে না। তাই নতুন তাস খেলতে চাইছেন মোদী, বিজেপির মহামহিম। সেই তাস ভাবা হচ্ছে গোরুকে, যা চেলে ‘আশায় মরে চাষা’র ‘সমব্যাথী’ও সাজা যাবে, হিন্দুত্বের মেরুকরণের ভোটেরও জিগির তোলা সম্ভব।