চলে গেলেন দরদী জননেতা কমরেড মোজাম্মেল হক
Comrade Mozammel Haque passed away

সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের শিলিগুড়ি লোকাল কমিটির সম্পাদক ও এআইসিসিটিইউ-র দার্জিলিং জেলা সম্পাদক কমরেড মোজাম্মেল হক ২৪ জুলাই পেড়িয়ে ২৫ জুলাই রাত ১টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক ভাবে প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন তাঁর স্ত্রী, কন্যা, তিন পুত্র, নাতি-নাতনি, সেইসঙ্গে শিলিগুড়ি সহ সমগ্র গ্রাম-শহরের অসংখ্য গুনমুগ্ধ সমাজকর্মীদের। এই অপ্রত্যাশিত আঘাতে সারা শহর ও জেলার গ্রামগুলিতে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। পার্টির দার্জিলিং জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহর নেতৃত্বে সকালের মধ্যেই পার্টির জেলা নেতৃত্ব সহ সর্বস্তরের কর্মীদের বড় অংশ প্রয়াত কমরেডের ৬নং ওয়ার্ডস্থিত বাসভবনে একত্রিত হন শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। দিল্লী থেকে ফোনে গভীর শোক ব্যক্ত করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। দুঃসংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর জননেতার প্রতি শেষ সম্মান জানাতে একে একে উপস্থিত হন সিপিআই(এম) রাজ্য সদস্য অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকার, সিটুর জেলা সম্পাদক বিমল পাল, পিসিসি সিপিআই (এম এল)-এর অমূল্য দাস, সিপিআই(এমএল) এন ডি-র পলান, এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দল পরিচালিত ট্রেড ইউনিয়ন নেতা জয় লোধ, এপিডিআর সংগঠক অভিরঞ্জন ভাদুড়ী, বিবেক সরকার। শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি রূপক দে সরকার, দীপঙ্কর চক্রবর্তী প্রমুখ। ফ্যাসিবাদ বিরোধী নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক অজিত রায়, শঙ্কর দাস প্রমুখ আন্তরিক তাগিদ নিয়ে ছুটে আসেন। এছাড়াও বিভিন্ন ছোট ব্যবসায়ী থেকে টোটো চালক সকলেই এসেছিলেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।

প্রয়াত কমরেড মোজাম্মেল হক প্রথম জীবনে ছোট ব্যবসায়ী ছিলেন। ১৯৯৮ সালে শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৬নং ওয়ার্ডে পুর নির্বাচনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন মনোনীত প্রার্থী ছিলেন অভিজিৎ মজুমদার। নির্বাচনী প্রচারের সূত্রে কমরেড মোজাম্মেল পার্টির প্রতি আকৃষ্ট হন এবং অনতিবিলম্বে পার্টি সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল অবধি চাঁদমণি চা বাগান উচ্ছেদ বিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চের অন্যতম কার্যনির্বাহী হয়ে লাগাতার উদ্যোগ চালিয়ে জননেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। এবং এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি সুবক্তা ও তুখোর সংগঠক হয়ে ওঠেন। এরপরে রেল কর্তৃপক্ষ রেল লাইন সংলগ্ন হতদরিদ্র সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের উচ্ছেদের নোটিশ দিলে কমরেড মোজাম্মেলের নেতৃত্বে দীর্ঘ প্রতিরোধ আন্দোলন পরিচালিত হয়।

অচিরেই তিনি জেলা নেতৃত্বে উত্তীর্ণ হন। দৈনন্দিন পার্টি কাজকে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সম্পাদন করতে তিনি সদা আগ্রহী ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি সাধারণ মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে পার্টির মুখপত্র “আজকের দেশব্রতী” পৌঁছে দিতে নিবিড়ভাবে সক্রিয় ছিলেন। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাধ্যমে সমগ্র বামপন্থী শিবিরের নজর কেড়ে তিনি শ্রমজীবি মানুষের প্রিয়জন হয়ে ওঠেন। এরপরে শিলিগুড়ি লোকাল কমিটির সম্পাদক হিসাবে কার্যভার নেওয়ার সাথে সাথে তিনি শ্রমিক সংগঠনের জেলা সম্পাদক হিসাবে চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে চলমান আন্দোলনের শরিকদের মধ্যে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

স্বকীয় উদ্যোগ, কঠিন পরিশ্রম,নতুন কিছু পরিঘটনার বাস্তব বিশ্লেষন, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সর্বোপরি গরিব শ্রমজীবী জনতার সঙ্গে আন্তরিক ব্যাবহারের সুবাদে কমরেড মোজাম্মেল হক এক বিস্তীর্ণ রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রে অপরিহার্য সেনাপতি হয়ে উঠেছিলেন।

তাঁর এই অপ্রত্যাশিত প্রয়াণে পার্টির দার্জিলিং জেলা কমিটি ও এই সঙ্কটকালে সামগ্রিক বাম আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি হল।

অনন্য জননেতা কমরেড মোজাম্মেল হক লাল সেলাম।

খণ্ড-29
সংখ্যা-29