কমরেড লেবাচাঁদ টুডু এক সাঁওতাল দরিদ্র ও শোষিত কৃষক পরিবারের সন্তান। জন্মেছিলেন ঝাড়গ্রামে গোপীবল্লভপুরের সারিয়া অঞ্চলের ভালুকখুলিয়া নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে, ১৯৪৭ সালে। সামন্ত ও মহাজনী শোষন, অত্যাচার, অনাহার-অর্ধাহারের জীবন থেকে মুক্তির বার্তা তাঁর কাছে পৌঁছে যায় একদা নয়াবসান হাইস্কুলের তাঁর মাষ্টারমশাই নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম নেতা কমরেড সন্তোষ রাণার মাধ্যমে। সন্তোষদা এই প্রায় ছ’ফুট উচ্চতার স্বাস্থ্যবান আদিবাসী যুবককে নকশালবাড়ির কৃষক অভ্যুত্থান, চিন বিপ্লবের ইতিহাস ও ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের কথা জানান খুবই সহজ ভাবে। সেটা ১৯৬৯ সাল। নবগঠিত বিপ্লবী পার্টি সিপিআই(এমএল) এর কর্মসূচি জেনে নিয়ে দুরন্ত যুবকটি নিজস্ব অভিজ্ঞতায় ধনী লোকেদের মজুরি শোষন, বহিরাগত ব্যবসায়ীদের প্রতারণার সঙ্গে পার্টি কর্মসূচিকে মিলিয়ে দেখে বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিতে রাজি হয়ে যায়।
লেবাচাঁদ ছিলেন খেলাধুলায় চৌখস এক যুবক। হাইজাম্প, লংজাম্প ইত্যাদিতে জঙ্গলমহলে তাঁর সমকক্ষ খুব কম ছিল। সে সময় যারা কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কনস্টেবলের চাকরীতে ঢুকতে চাইতো, তাদের হয়ে তিনি বেনামে স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতেন এবং এই চাকরীপ্রার্থীরা চাকরিতে ঢুকতে পেরেছিল লেবাদার বদান্যতায়। তিনি কিন্তু নিজে কখনও পুলিশের চাকরীর জন্য আবেদন করেননি। স্কুল ছুট হওয়ার পর বড়ো পরিবারের দায় কাঁধে নিয়ে লেবাচাঁদ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে শুয়োরের চুল সংগ্রহ করে খড়গপুরে মহাজনের কাছে বেশি পয়সায় বিক্রি করার ব্যবসায় নেমে পড়েন। এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা থাকার দরুণ তাকে সঙ্গে নিয়ে বিপ্লবী রাজনীতির প্রচার ও প্রসারে ব্যাপকতা অর্জন করেছিলেন সন্তোষদা ও তাঁর সহযোদ্ধারা।
সমাজ বদলের রাজনীতি ও বিপ্লবী নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ প্রেরণায় লেবাচাঁদ টুডুর জীবন দর্শনে আমূল পরিবর্তন ঘটে এবং তিনি পার্টির সর্বসময়ের কর্মীর ভূমিকায় সংগ্রামের ময়দানে অবতীর্ণ হন। অচিরেই স্বভাবজ ক্ষিপ্রতা, অসীম সাহস ও বুদ্ধিদীপ্ত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে শ্রেণী শোষনের বিরুদ্ধে লড়াইকে ব্যাপক গ্রামীণ ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে লেবাদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস ও নিপীড়িত জনগনকে ভালোবাসার অদম্য অনুভূতিকে আঁকড়ে ধরে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পার্টির অপরিহার্য নেতা হয়ে ওঠেন এবং গোপীবল্লভপুর-১ নং ব্লকের পার্টি সম্পাদক হন।
১৯৬৯ সালের নভেম্বর মাসে গোপীবল্লভপুরের বেতকলা, শ্যামসুন্দরপুর, আশুই, বর্গীডাঙ্গা ইত্যাদি মৌজায় ভূমিহীন ও ভাগচাষীদের সংগঠিত করে জোতদার-জমিদার-মহাজনদের জমির ধান কেটে সবার মধ্যে গণবন্টনের লড়াই ক্রমশঃ জঙ্গলমহলে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছয় এবং এই লড়াই শুরু হওয়ার তিন-চার দিনের মধ্যে হাজার হাজার গ্রামীন শোষিত জনতার যোগদানে তা অভ্যূত্থানের রূপ নেয়। এই আন্দোলনে সামনের সারিতে সন্তোষদার সঙ্গে সক্রিয়তায় থাকেন লেবাচাঁদ টুডু। এরপরে অত্যাচারী মহাজনদের গরীব কৃষকদের কাছ থেকে বলপ্রয়োগ করে ঋণের সুদ আদায়ের বিরুদ্ধে গ্রামীণ মহিলাদের নেতৃত্বে পরিচালিত বন্ধকী জমি ও অন্যান্য জিনিস উদ্ধার করার আন্দোলনকে রাজনৈতিক দিশায় পরিচালনায় কার্যকরী ভূমিকা নেন তিনি।
পরবর্তীতে পার্টির গোপন অবস্থায় সশস্ত্র গেরিলা স্কোয়াডের কমান্ডার হিসাবে রাষ্ট্রশক্তির মোকাবিলার মধ্য দিয়ে তিনি জনতার চোখে অতিকথার নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। বিপ্লবীদের গণআন্দোলন ও সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের সম্মিলিত আঘাতে ভয় পেয়ে অনেক জোতদার, জমিদারেরা তাদের বন্দুক বিপ্লবী নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছিল। আবার আক্রমণাত্মক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে জমিদার, জোতদারদের বন্দুক লুঠ করে নিয়েছিল বিপ্লব শানিত কৃষক বাহিনী। একই সময়ে সংগ্রামী আদিবাসী নেত্রী কুনি টুডু আদিবাসী মহিলাদের নিয়ে সশস্ত্র স্কোয়াড গড়ে তুলেছিলেন। পরবর্তীতে লেবাচাঁদ টুডুর জীবনসঙ্গিনী কুনি টুডু সমমর্যাদায় সিনা টান রেখে বিপ্লবী নেত্রীর ভূমিকায় অটল থেকেছেন। লেবাদার জীবনজোড়া সংগ্রামী জীবনের পাঠে তাঁর সহযোদ্ধা কুনি টুডুর অসামান্য ভূমিকাকে উল্লেখ না করলে সেই উত্তাল সময়ের সামাজিক অভিঘাত পরিমাপ করা যাবে না। ১৯৭০ সালে একদিন খড়গপুরে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন লেবাচাঁদ টুডু ও কুনি টুডু। ১৯৭৭ সালে রাজনৈতিক বন্দীমুক্তি আন্দোলনের সুবাদে তাঁরা জেল থেকে মুক্ত হন। সদ্য জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে নদীর চরের জমি দখল করা নিয়ে গরীব কৃষকদের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করে দু’পক্ষের গ্রহনযোগ্য জমি বন্টনের সুষ্ঠু সমাধান করতে সফল হয়েছিলেন লেবাচাঁদ। ১৯৭৮ সালে গোপীবল্লভপুরে খাস জমি ও বর্গা জমি থেকে গরিব কৃষক ও প্রকৃত বর্গাদারদের উচ্ছেদ করতে উদ্যত হয় স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। এর বিরুদ্ধে তুখোর তীরন্দাজ লেবাচাঁদ বর্গাদারদের পাট্টা দেওয়ার দাবির আন্দোলনকে সফল করতে তীরধনুক হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে জেল থেকে লেবাদা নয়াগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ৮০০০ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে থাকেন। এরপরে ১৯৮০ সালে ঝাড়গ্রাম এবং ১৯৮২ সালে ময়ুরভঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে সিপিআই(এমএল) দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৯৬ সালে ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক নাগরিক মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে নকশালপন্থী সংগঠনগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চলে। লেবাচাঁদ ছিলেন এই মঞ্চের সহ সভাপতি। তাঁর হাত ধরে ১৯৭৯ সালে আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র ‘সারনা রিক্রিয়েশন ক্লাব’ গড়ে ওঠে। এই সময়ে কৃষকের জমিতে সেচের দাবিতে বম্বে রোড অবরোধ ও লাগাতার অনশন ধর্মঘটের সফল আন্দোলনে সন্তোষদার সঙ্গে থেকে নেতৃত্ব দেন লেবাচাঁদ টুডু। এবাদে সাঁওতালি ভাষার প্রচার ও প্রসারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। সুবর্ণরেখা কলেজে ‘ছাত্র ঐক্য’ নামে সংগঠন গড়ে তোলা ও এসএফআই, পুলিশের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠিত করে পরবর্তীতে ৫ বছর ওই কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করে নেওয়ার পেছনেও মূল প্রণোদনা ছিল লেবাদার। ঝাড়খন্ডে আলাদা রাজ্যের দাবিতে মুখর আন্দোলনেও লেবাদা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।
রাজনৈতিক বন্দীদের মাসিক ভাতা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন জোরের সাথে। লেবাচাঁদ ও কুনি টুডু শেষ জীবনে আদিবাসী ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখার স্বার্থেনিজেদের শেষ সম্বল এক বিঘা জমি ‘কস্তুরীবাঈ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে স্কুল তৈরির জন্য দান করেছেন। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর কুনি টুডু জরায়ুর ক্যান্সারে ভুগে প্রয়াত হন। মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে পুঁজি ও সরকার বিরোধী গণআন্দোলনকে প্রসারিত করার অদম্য উৎসাহে কম. সোমনাথ চ্যাটার্জী পরিচালিত ‘এসওসি সিপিআইএমএল’ দলকে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন দলের সঙ্গে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর সংযুক্তিকরণ ঘটিয়ে লেবাদা তাঁর দীর্ঘসময়ের সহযোদ্ধাদের নিয়ে আবার লড়াই-আন্দোলনের রণাঙ্গনে ফিরে আসেন। পার্টির অন্যতম রাজ্য নেতা হিসাবে তিনি সক্রিয় থাকেন। ২০২২ সালে মে মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত লিবারেশনের ১২তম রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে তাঁর উদাত্ত আহ্বান সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের বহুদিন স্মরণে থাকবে। তিনি তাঁর শেষদিন পর্যন্ত সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য, এবং রাজ্য স্তরে ‘আদিবাসী বিকাশ ও অধিকার মঞ্চে’র সভাপতি ও সর্বভারতীয় সংগঠন ‘আদিবাসী সংঘর্ষ মোর্চা’র সহ সভাপতির পদে ছিলেন।
রাজ্য সম্মেলন শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরে লেবাচাঁদ টুডু গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল, পরে মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল এবং সবশেষে কলকাতার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা হওয়ার সময় তাঁর যকৃতে ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা নিদান দেন। আদি ও অকৃত্রিম সহযোদ্ধা কমরেড পিন্টু দের তত্ত্বাবধানে লেবাদাকে তাঁর নিজের গ্রামে ফিরিয়ে আনা হয়। আদিবাসী সমাজে কিংবদন্তী বিপ্লবী নেতা লেবাচাঁদ টুডু ২ জুলাই পাটবাধা গ্রামে তাঁর একচিলতে বসতবাড়িতে প্রয়াত হন।
কেন্দ্রে আসীন ফ্যাসিবাদি মোদী সরকার কর্পোরেট লুটকে মান্যতা দিয়ে ২০০৬ সালের বনাধিকার আইনকে অকেজো করতে চলেছে। বনবস্তী নিবাসী আদিবাসী সমাজের জমি ও জীবিকা কেড়ে নিতে তারা চরম আক্রমণ ও উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকারও বীরভূমের দেওচা-পাচামীতে আদিবাসী- মূলবাসীদের বসত উচ্ছেদ করে আদানীর মতো কুখ্যাত কর্পোরেটের হাতে কয়লা উত্তোলনের জন্য সঁপে দিতে উদ্যত - সেই সময়ে বিরল রাজনৈতিক ধীশক্তির অধিকারী কমরেড লেবাচাঁদ টুডুর অতীব প্রয়োজনীয় পরামর্শগুলি থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। জঙ্গল মহলকে নতুন উদ্যমে বামপন্থী গণআন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে আবারও গড়ে তোলার মূল কান্ডারী হয়ে উঠতে পারতেন কমরেড লেবাদা। তাঁর মৃত্যু সমগ্র বিপ্লবী বামপন্থী শিবিরে বিষন্নতা ছড়িয়েছে, তৈরি করেছে এক গভীর শূন্যতার বোধ। লেবাদার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের শেষদিন অবধি সমাজ বদলের স্বপ্নকে লালন করা ও জনগনকে সংগঠিত করতে লেগে থাকার চমৎকার অভিজ্ঞতা প্রজন্মের পর প্রজন্মে বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাবে।
পরিচিতি সত্তার পক্ষের স্বতঃস্ফুর্ত আবেগকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণি পার করতে চায় বিজেপি-আরএসএস শিবির। আদিবাসী মহিলা নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদে জিতিয়ে নিয়ে বশংবদ রাষ্ট্রপতিকে সামনে রেখে কর্পোরেটদের স্বার্থে বুট, বুলেট, বুলডোজার রাজ চালিয়ে চলবে মোদী সরকার। এই বিভীষিকার রাজত্বের বিপরীতে জনগণের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও শোষনমুক্তির নায়ক লেবাচাঁদ টুডুর জীবনাদর্শ ও সংগ্রামের মূল্যবান ইতিহাসকে আমাদের ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। সেটাই হবে প্রয়াত প্রিয় কমরেডের প্রতি সত্যিকারের সম্মান প্রদর্শন।
আমরা সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি রাজ্য সদস্য কমরেড লেবাচাঁদ টুডুর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকগ্রস্ত। লেবাদার বিস্তৃত পরিবার-পরিজন এবং তাঁর দীর্ঘ সময়ের সহযোদ্ধাদের আমরা আন্তরিক সমবেদনা জানাই। সমাজ বদলের লক্ষ্যে লেবাদার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন ও বিপ্লবী চেতনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আসুন আমরা তাঁর অসমাপ্ত কাজকে সম্পূর্ণ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হই।
কমরেড লেবাচাঁদ টুডু লাল সেলাম।
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষে রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার,
২৫ জুলাই ২০২২
২৫ জুলাই ২০২২ মৌলালি যুবকেন্দ্রে স্মরণসভায় কমরেড লেবাচাঁদ টুডুর গ্রাম থেকে বহু মানুষ এসেছিলেন তাঁদের প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে। ছিলেন তাঁর লড়াইয়ের দীর্ঘদিনের সাথি পিন্টু দে, দাদা ধরমা টুডু, ভাইপো সালকু টুডু এবং জগদীশ প্রামাণিক, অশ্বিনী সেনাপতি, পরেশ সিং সহ আরও অনেকে। এসেছিলেন ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলার গ্রামগঞ্জ থেকে অনেক মানুষ। সংগ্রামী নেতার ছবিতে মালা ও ফুল দিয়ে সভা শুরু হয়। সভার প্রথমেই শ্রদ্ধাঞ্জলী পাঠ করেন রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার। সিপিআই(এমএল) রেড স্টারের পক্ষ থেকে প্রদীপ সিং ঠাকুর, সিপিআই(এমএল) নিউ ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে সুশান্ত ঝা, এপিডিআরএর পক্ষ থেকে তাপস চক্রবর্তী, লেবাচাঁদ টুডুর সংগ্রামী জীবনকে কাছে থেকে দেখা সাংস্কৃতিক কর্মী মেঘনাদ দাসগুপ্ত, বন্দী মুক্তি কমিটির পক্ষ থেকে ছোটন দাস তাঁদের বক্তব্যর মাধ্যমে লেবাচাঁদ টুডুকে স্মরণ করেন। পার্টির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল। সকলের বক্তব্যেই কমরেড লেবাচাঁদের ঐতিহাসিক ভূমিকা, এবং গণআন্দোলন ও ঐক্যবদ্ধ পার্টি গড়ে তোলার নিরলস প্রচেষ্টার কথা উঠে আসে। কুনি টুডু ও লেবাচাঁদ টুডুর একজনকে আরেকজন থেকে আলাদা ভাবে দেখা যায় না বলে জানান এই বিপ্লবী জুটির ঘনিষ্ঠ সাথিরা। মেঘনাদ দাশগুপ্ত বিশেষভাবে তুলে ধরেন মহিলাদের অগ্রণী ভূমিকা তথা বিপ্লবী সংগ্রামের নেতৃত্বে মহিলাদের প্রতিষ্ঠিত করার বিশেষ প্রয়োজনীয়তার কথা। একইসাথে আদিবাসী জনগোষ্ঠির অপরিহার্য ভূমিকার দিককে তুলে ধরেন তিনি। লেবাচাঁদ টুডুর লেখা এবং লেবা ও কুনির কাছ থেকে শেখা সান্তাড়ি ভাষায় লড়াইয়ের গান গেয়ে শোনান কুনি-লেবার লড়াইয়ের সাথি তিয়াসা দাসগুপ্ত। এছাড়াও মেঘনাথ দাসগুপ্ত, বাবুনি মজুমদার লেবাদা’র স্মরণে গান শোনান। পার্টির পক্ষ থেকে “জননেতা লেবাচাঁদ টুডু স্মরণিকা” প্রকাশ ও বিতরণ করা হয়। এই পুস্তিকায় পিন্টু দে, কুমার রানা, তপন মুখার্জি, প্রদীপ সিং ঠাকুর, লক্ষণ টুডু সহ বিভিন্ন সাথিবন্ধুরা তাঁদের লেখায় স্মৃতিচারণ করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল সংগীতের মাধ্যমে কমরেড লেবাচাঁদ টুডু’কে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ সভা শেষ হয়।