লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়ে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা ছাত্রসমাজের কাছে পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই এক বড়ো প্রশ্ন চিহ্ন আকারে সামনে এসেছে। একাদশ শ্রেণীতে নতুন করে ভর্তি হতে গিয়ে খরচ করতে হতো কোথাও ১,৫০০ টাকা তো কোথাও ২,০০০ টাকা। ‘যেমন বিষয় পড়তে চাও তেমন অর্থ ঢালো’ মডেল। বিজ্ঞান অথবা কলা বিভাগের ল্যাবরেটরি নির্ভর বিষয়গুলি নিতে গেলে গুণতে হবে আরো বেশি টাকা। বিষ্ণুপুরের স্কুলগুলিতে একেক বিষয়ে যা প্রায় ১৫০ টাকা। তাই মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ী এবং গরিব মানুষের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ-এর কথা ভেবে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি করতে হবে বিনা পয়সায় – এমন দাবি তোলে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের বিষ্ণুপুর ইউনিট বিগত ৩০ জুলাই থেকে পোস্টার অভিযান চালানোর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যাপক জনমত গঠন করতে থাকে। কয়েকটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা/শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক মহাশয়কে ফোন করেও অনুরোধ করা হয় সংগঠনের তরফ থেকে। ৩ আগস্ট বিষ্ণুপুর পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত ৫টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলেই ডেপুটেশন জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। ইতিমধ্যে ১ আগষ্টের আগেই বিষ্ণুপুর হাইস্কুল ও তারপর কুসুমবনি যমুনাদাস উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ভর্তি-ফি মুকুব করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ফলত কৃত্তিবাস মুখার্জী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুল ও পরীমল দেবী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি স্কুলই জানিয়েছে তারা একাদশ শ্রেণীর ভর্তি ফি নেবে না। এবং কোনো ছাত্রছাত্রী যদি কোথাও ভর্তি না হয়ে থাকে কোনো বিশেষ কারণের জন্য তবে তারা সেই ছাত্র/ছাত্রীটিকে আগামিতেও ভর্তি নেবেন।
ব্যতিক্রম কেবল শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলে, সেখানে ল্যাব সাবজেক্ট পিছু ১৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তাদের চাপ দেওয়া হলে তাঁরা আশ্বাস দেন যে যেসকল ছাত্রী টাকা ফেরত দেওয়ার লিখিত আবেদন করবে তাদের প্রত্যেকের এই ভর্তির সাথেই যুক্ত ল্যাব ফি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য অভিভাবকদের সাথে কথা বলে তাদের লিখিত আবেদন জমা দেওয়ার কথা জানানো হয় সংগঠনের তরফে।
সার্বিকভাবে সমস্ত স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের এই নতুন শ্রেণীতে ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যটি নিয়ে একটি ভালো পদক্ষেপ নেওয়ায় আইসা-র পক্ষ থেকে তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সংগ্রামী অভিনন্দন জানান হয়েছে এবং স্কুলগুলির পরিকাঠামো ও শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সহায়তার জন্য বিষ্ণুপুর মহকুমার স্কুল ইন্সপেক্টরের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
-- ফারহান হোসেইন খান