পুর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ঋণ মুক্তির আন্দোলনে প্রতিনিয়তই যোগদান করে চলেছেন। গত ৩১ জুলাই আটপাড়া গ্রামে ঐ এলাকার আটটি গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ জমায়েত হন। বৈঠকের আগে গ্রামে মিছিল সংগঠিত হয়। গ্রামের মানুষই মিছিলের নেতৃত্ব দেন ঋণ মুক্তি কমিটির ব্যানারে। বৈঠকে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা সম্পাদক সলিল দত্ত জেলা কমিটির সদস্য কুনাল বক্সী ও সমীর বসাক উপস্থিত ছিলেন। মহাজনী সংস্থা বন্ধনের ঋণে বিপর্যস্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি ছিল। অন্যান্য মহাজনী সংস্থার ঋণগ্রস্তরাও ছিলেন। ছিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। একই লোক বিভিন্ন সংস্থা থেকেই ঋণ নিয়েছিলেন এমন মানুষেরাও ছিলেন। বেশিরভাগই গরিব মেহনতিদের পরিবারের মহিলা। আবার কিছু মাঝারি স্তরের মানুষেরও উপস্থিতি ছিল। বিভিন্ন মানুষের বক্তব্য থেকে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ঋণ ফাঁসে আবদ্ধ হয়ে দম বন্ধ অবস্থার মধ্যে আছেন। তার উপর লকডাউন ও করোনা আতঙ্ক ছড়ানোর ফলে উপার্জনহীন হয়ে আছেন। পরিবার প্রতিপালন কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তারপর ঋণভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই জামালপুর ব্লকেই করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে চলেছে। তার মধ্যেই মানুষ করোনার ভয়কে উপেক্ষা করেই জমায়েত হচ্ছেন। তাতেই বোঝা যায় গ্রামাঞ্চলে ঋণমুক্তির দাবি কতখানি জোরদার হয়ে উঠছে। আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয় আগামী ৭ আগস্ট ব্লক অফিসে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত করা হবে। এবং ১৩ আগস্ট দেশজুড়ে ঋণ মুক্তি দিবস পালন করার কর্মসূচি এখানেও সংগঠিত করার প্রস্তুতি নিতে হবে। ইতিমধ্যেই কিছুদিন আগে একজন রাজ্য মন্ত্রীসভার সদস্য বলেছেন রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি নাকি কোনো উৎপাদনমুখী উদ্যোগ নিচ্ছেন না, এমনকি সরকারের বিভিন্ন ধরনের মেলা ও প্রদর্শনীতে সরবরাহের ক্ষেত্রে যেসব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নামে চালানো হয় তাও নাকি বাজার থেকে ক্রয় করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নামে সরবরাহ করা হয়। কার্যত তিনি স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর স্বনির্ভর উদ্যোগের মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি করতে না পারার জন্য ও ঋণগ্রস্ত হওয়ার জন্য গ্রামীণ গরিব মেহনতিদের পরিবারের গোষ্ঠী সদস্য মহিলাদেরই দায়ী করেছেন।
গ্রামাঞ্চলে একচ্ছত্র ক্ষমতা দখলকারী পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, এমনকি গ্রামের সমবায়, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার কমিটির ক্ষমতা সবই তাঁদের দখলে তবুও কেন গোষ্ঠীগুলোর উন্নয়ন হচ্ছে না বা হাজারে হাজারে ঋণ ডিফল্টার হচ্ছে বা গোষ্ঠী বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার জবাব তো শাসক দল তৃণমূলের নেতা কর্মীদেরই দিতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর ভর্তুকির জন্য নির্দিষ্ট কোটি কোটি টাকা কোথায় গেল? কেন গোষ্ঠীগুলোর উন্নয়নের ব্যবস্থা হল না? সরকারী মেলা ও প্রদর্শনীগুলোর গোষ্ঠীর নামের ভর্তুকির টাকা কাদের পকেটে গিয়েছিল, তার জবাব দিতে হবে। গোষ্ঠীর মাধ্যমে গ্রামের গরিব মেহনতিদের স্বনির্ভর করার ও কর্মসংস্থানের প্রচার কোথায় গেল! তাই প্রশ্ন হচ্ছে ঋণ মুক্তির, শুধুমাত্র ঋণ মকুবের নয়। অতীতের ডিআরডি ঋণ বা বিভিন্ন ধরনের ছাগল-গরু-হাঁস-মুরগী লোন অনাদায়ী হয়ে অনিবার্যভাবেই মকুব বা তামাদি হয়ে গিয়েছিল। সেই ধরনের কেবলমাত্র অনিবার্য ঋণ-মকুবে আটকে থাকলে কিন্তু গরিবদের দুরবস্থা বাড়বে। স্বনির্ভরগুলি গোষ্ঠিগুলি বন্ধ হয়ে যাবে। আজকের ঋণমুক্তির দাবির লড়াই নতুন ভাবেই ভাবতে হবে।
১ আগস্ট বৈঠক হয় জারো গ্রামে ৫০ জনের মতো মহিলাদের, ২ আগস্ট মসাগ্রামে, ৩ আগস্ট সুরে কালনা গ্রামে, ৪ আগস্ট মসাগ্রামের বেরলী উত্তর পাড়া ও রেল গেটের পাশের জগন্নাথ পাড়ায়। এই সমস্ত বৈঠক পরিচালনা করেন লোকাল দায়িত্বশীলরা। এই দায়িত্বশীলদের মধ্যে আছেন নিতাই ক্ষেত্রপাল, রীতা পন্ডিত, রহিমা সেখ, অর্চনা মাল, দীপালী সহ অনেকে। এই সমস্ত মানুষের নেতৃত্বে তৈরি হবে আগামী দিনের ব্লক কমিটি।
-- সজল পাল