গত ১১ মে, ইজরায়েলি দখলদার বাহিনী বিশিষ্ট প্রবীণ প্যালেস্তিনীয় সাংবাদিক শিরীন আবু আকলে’কে সুপরিকল্পিত ভাবে নিশানা করে খুন করে। ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংস হত্যার ঘটনাটি ঘটানো হয় অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক’এর জেনিন উদ্বাস্তু শিবিরে। শিরীন জেনিনে গিয়েছিলেন আল জাজিরা অ্যারাবিক’এর একজন সাংবাদিক হিসেবে ইজরায়েলি দখলদার বাহিনীর হামলার খবর করতে।
সংবাদমাধ্যমের সদস্য হিসাবে নিজেদের স্পষ্ট পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও শিরীন ও আরেক সাংবাদিক আলি আল-সামৌদিকে গুলি করা হয়। তারা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ছিলেন, মাথায় ছিল ‘প্রেস’ লেখা হেলমেট। আলি কোনক্রমে প্রাণে বেঁচে যান, কিন্তু শিরীনকে কানের কাছে দেহের অরক্ষিত অংশে গুলি করা হয়।
শিরীন ইজরায়েলি অপরাধের দুঃসাহসিক কভারেজ করে প্যালেস্টাইনে অত্যন্ত জনপ্রিয় এক বিশিষ্ট নাম হয়ে উঠেছিলেন। জেনিন হয়ে উঠেছিল তাঁর প্রিয় শহর, তাঁর সাংবাদিক জীবনের সঙ্গেও অনেকটা জড়িয়ে গিয়েছিল জনপদটি। ২০০২-এ এখানে ইজরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে তিনি বিস্তারিত ভাবে কভার করেছিলেন, যা নিয়ে তিনি পরে লিখেছিলেন “জেনিন আমার সাংবাদিক জীবনে, এমনকি আমার ব্যক্তিগত জীবনেও কোন এক ক্ষণস্থায়ী ‘স্টোরি’ নয়। এই সেই শহর যা আমার সাহস, আত্মবিশ্বাস, মনোবল বাড়িয়ে দেয়। আমাকে উড়ানে এগিয়ে দেয়! এখানে প্যালেস্টাইনের শৌর্য মূর্ত হয়ে আছে যা কখনও কেঁপে ওঠে, নিম্নমুখী হয়, কিন্তু আবার সমস্ত প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে তার স্বপ্নকে ছুঁতে দুঃসাহসের ডানা মেলে অক্লান্ত উড়ানে এগিয়ে চলে।”
শিরীনের হত্যা, প্রতিদিন ইজরায়েলি দখলদার বাহিনী প্যালেস্তিনীয়দের বিরুদ্ধে কীভাবে যুদ্ধাপরাধ করে চলেছে তারই এক রূঢ় বাস্তবতাকে সামনে এনেছে। দি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে) এবং প্যালেস্টিনিয়ান জার্নালিস্টস সিন্ডিকেট (পিজেএস)-এর মত আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলি প্যালেস্তিনীয় সাংবাদিকদের ধারাবাহিক ভাবে নিশানা করার জন্য ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করার ঠিক পরেই তাঁকে খুন করা হল। এরআগে ২০১৮ সালে, ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় সাংবাদিকের স্পষ্ট পরিচিতি সত্ত্বেও আহমেদ আবু হুসেইন এবং ইয়াসের মোর্তাজা নামে দুই সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সিপিআই (এম-এল) ইজরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সাংবাদিক শিরীন আবু আকলে’র এই জঘন্য নৃশংস হত্যাকে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে। একই সাথে প্যালেস্টাইনের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি পুনর্বার তার দৃঢ় সংহতি জানিয়েছে।
- (লিবারেশন, মে ২০২২ থেকে)